জগন্নাথপুরে আমন ধান কাটার ধুম, কৃষকের মুখে আনন্দের হাসি

47

জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা :
জগন্নাথপুরে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জমিতে সোনালি ফসল দেখে কৃষক-কৃষাণীর মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে। এতে কিছুটা হলেও গত বছরের বোরো ফসল হানির ক্ষতি পূরণ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
জানা গেছে, গত বছর জগন্নাথপুরে হাওর ডুবির ঘটনায় বোরো ফসল হানির ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নগদ টাকা ও চাল দিয়ে সহায়তা করে সরকার। এছাড়া আরো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা করে। এতে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়।
এদিকে-বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর কর্ম-তৎপরতার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন কৃষকরা। যে কারণে বোরা ফসল হারানো কৃষকরা আমন চাষে এবার আরো বেশি উদ্যোগী হয়ে উঠেন। জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আমন ধান চাষে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উৎসাহী করেন। কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানামুখি প্রচেষ্টা ও পরামর্শে এবার উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন হয়। জমি চাষের উপযোগী কোন জায়গা বাদ পড়েনি। অবশেষে কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কৃষকরা সফল হয়েছেন। অন্য বছরের তুলনায় এবার জগন্নাথপুরে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার প্রতিটি ছোট-ছোট হাওরের জমিতে পাকা ও আধা পাকা সোনালী ধান বাতাসের তালেতালে দুলছে। ধানের মৌ-মৌ গন্ধ চারেিদক ছড়িয়ে পড়েছে। জমিতে উৎপাদিত ধানের বাম্পার ফলন দেখে আনন্দ ও তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে কৃষক-কৃষাণীর মুখে। শুধু তাই নয়, এবার আমনের বাম্পার ফলন দেখে স্থানীয় সর্বস্তরের জনতার মধ্যে আলাদা আনন্দ বিরাজ করছে।
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জগন্নাথপুরের প্রতিটি হাওরে আমন ধান কাটার ধুম পড়েছে। মনের আনন্দে সোনালী ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। কিছু জমির মালিক অন্য শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটালেও অনেক জমির মালিক নিজেই তাঁর পরিবারের লোকদের নিয়ে ধান কাটছেন।
বুধবার সরজমিনে জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের খাশিলা গ্রামের হাওরে গিয়ে দেখা যায়, জমির মালিক আংগুর মিয়া শ্রমিকদের নিয়ে নিজে মনের আনন্দে ধান কাটছেন। এ সময় তারা বলেন, এবার জমিতে ভাল ধান হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার জগন্নাথপুর পৌরসভা, উপজেলার কলকলিয়া, পাটলি, মিরপুর, রাণীগঞ্জ, চিলাউড়া-হলদিপুর, আশারকান্দি, সৈয়দপুর-শাহারপাড়া, পাইলগাঁও সহ প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের পাশে থাকা ৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে উপসী জাতের উন্নত জাতের ধান আবাদ করায় অন্য বছর থেকে ভাল ফলন হয়েছে।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, এবার বোরা ফসল হানির পর আমরা আমন আবাদে কৃষকদের উৎসাহী করি। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আমাদের পরামর্শ নিয়ে উপসী জাতের উন্নত প্রযুক্তির ধান জমিতে আবাদ করে ভাল ফলন পেয়েছেন। এবার লক্ষ্যমাত্রার অধিক আমন হয়েছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে এবার কৃষকরা তাদের গোলায় বাম্পার আমন ধান তুলতে পারবেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, এবার জগন্নাথপুরে আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় কৃষকদের সাহস যুগিয়েছে। এতে বোরো ফসল হানির ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে।