তাহিরপুরের ফসল হারা কৃষকরা বোরো রোপণে সরকারি প্রণোদনা প্রাপ্তির দুশ্চিন্তায়

167

বাবরুল হাসান বাবলু, তাহিরপুর থেকে :
“গিরস্থি করমু কিতা খাইয়াই বাঁচতাছিনা তার উপরে বীজ ধানের যে দাম, দেখি আল্লায় কি করে”। শনি হাওরপারের উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী (৫০), তিনি আক্ষেপ করে এ কথা গুলো বললেন। ৫ সদসস্যের পরিবার, দু’ছেলে ও এক মেয়েকে তিনি লেখাপড়া করাচ্ছেন অতি কষ্টে। তার একমাত্র আয়ের উৎস্য বোর ধান। গেল বছর ফসল হারিয়ে তিনি এখন সর্বশান্ত। বোরো ফসল ডুবার পর থেকে সরকারী কিছু জরুরী সহায়তা পান আর দৈনন্দিন কিছু রোজগার করে কোন রকম অতি কষ্টে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। বোরো রোপণ মৌসুম সামনে এবার বোরো ধান চাষাবাদ করতে পারেবন কি-না তা নিয়ে এখনো সন্দেহ কাটেনি ইয়াকুব আলীর। শুধু ইয়াকুব আলী নন মাটিয়ান হাওরপার বড়দল গ্রামের কৃষক জুয়েল মিয়া (৪৫), কামাড়কান্দি গ্রামের আলী আকবর (৬০) উমেদপুর গ্রামের আকবর মিয়া (৫৩) সহ অনেক কৃষকের একই রকম চিন্তা। চলতি মৌসুমে বোরো ফসল করবেন কিনা, সরকারী কোন সায় সাহায্য পাওয়া যাবে কিনা।
গত বছর হাওরে ঠিকাদার ও পাউবো কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে অসময়ে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যায় উপজেলার শনি, মাটিয়ান, আঙ্গারউলি, ফানা, কেচুরিয়া সহ ছোট বড় ২৩ টি হাওরের বোর ফসল। সে সময় থেকেই কৃষক পরিবারের ঘরে ঘরে দেখা দেয় চরম খাদ্যাভাব। সরকারী বেসরকারী কিছু সাহায্য আসে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব সামান্য। কিছু দিন পর শুরু হবে আবার বোরো ধান রোপণের মৌসুম। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে কৃষকরাও পড়ছেন তথই দুশ্চিন্তায়। ঘরে খাবার নেই আবার এত উচ্চ মূল্যে বীজ ধান কোথা থেকে কিনবেন। সেই সাথে জমি রোপণ শ্রমিক, কীটনাশক, সেচ ও সার কিভাবে দেবেন। এই প্রশ্নই এখন কৃষকদের মনে বার-বার ঘুরপাক খাচ্ছে হাওর পারে প্রতিটি কৃষক পরিবারে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ১৮ হাজার হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। এর বিপরীতে বীজ ধানের চাহিদা রয়েছে ৬’শ মেট্রিক টন। চলতি বছর সরকারী ভাবে কৃষকদের প্রণোদনা বাবদ দেয়া হবে ১’শ ৫০ মেট্রিক টন বীজ ধান। অবশিষ্ট ৪’শ ৫০ মেট্রিক টন বীজ ধান বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হবে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করতে হলে।
বিএডিসি বীজ ডিলাদের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর মন্ত্রণালয় প্রতি ১০ কেজি ব্রি আর-২৮ ও ব্রিআর-২৯ ধানের বাজার দর নির্ধারণ করেছে ৫শ টাকা। যা বিগত বছরের তুলনায় ১৫০ টাকা বেশী। বিগত বছর প্রতি ১০ কেজি বীজ ধান বিক্রি হত ৩৫০ টাকা। ডিলারদের অভিমত খোলা বাজারে সাধারণ ধানের দাম ১৩’শ থেকে ১৪’শ টাকা থাকায় বীজ ধানের দাম প্রতি মণ ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়।
বাজারে বর্তমানে ধানের দর থেকে শুরু করে কৃষি সংশ্লিষ্ট সকল পণ্যের মাত্রাতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষক একটু দিশেহারই হয়ে পড়ছে। একে তো ঘরে খাবার নেই, সেই নতুন করে বোরো ধান রোপণ এ দু’নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে কৃষক।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুছ ছালাম বলেন, সরকার কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে জন প্রতি ৫ কেজি বীজ ধান, ৩০ কেজি সার ও নগদ ১ হাজার টাকা প্রণোদনা দিচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, বিগত বছর ফসল হারিয়ে কৃষক এখন দিশেহারা, সরকারী সাহায্য যা আসছে তা চাহিদার তোলনায় অপ্রতুল। কৃষকদের হাতে কোন নগদ টাক পয়সা নেই এবার সকল কৃষক বোরো জমিতে ফসল রোপন করতে পারবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে।