অব্যাহত বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ॥ সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় আবারও বন্যা, অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

57

স্টাফ রিপোর্টার :
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে সিলেটের ৪ উপজেলার কয়েকটি FFFFFFইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে, সুরমা-কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা কবলিত ৪ উপজেলা হচ্ছে- কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট। বন্যার কারণে দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারী ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে বন্ধ রয়েছে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন এর সাথে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গতকাল শনিবার বিকেল ৩ টায় কানাইঘাটে সুরমা নদী বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার, সিলেটে সুরমা নদী বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার এবং শেওলায় কুশিয়ারা নদী বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্ত মো: মোফজেলুর রহমান মজুমদার।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানান, গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সিলেটে ১১৭ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : কয়েকদিন ধরে অভিরাম টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কানাইঘাট উপজেলার নি¤œাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। সুরমা-লোভা সহ অন্যান্য নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার হাওর ও নি¤œাঞ্চল তলিয়ে গেছে। নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েকশ হেক্টর আমন ধান একেবারে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কানাইঘাট সুরমা নদীর পানি গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার রিপোর্ট অনুযায়ী বিপদ সীমার ১১৬ সে. মি. এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর ডালাইচর, গৌরিপুর, বায়মপুর, লক্ষ্মীপুর সহ উপজেলার সুরমার তীরবর্তী বিভিন্ন ডাইক ভেঙ্গে যে কোন সময় তলিয়ে যেতে পারে উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর তীরবর্তী এলাকার লোকজন তাদের বাড়ী ঘরে আতংকের মধ্যে রয়েছেন। নি¤œাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। ৫নং বড়চতুল ইউপি চেয়ারম্যান মাও. আবুল হোসেন সহ বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান জানিয়েছেন তাদের ইউপির অনেক বসত বাড়ীতে পানি ডুকে পড়েছে, সুরমা ডাইকে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমন ধানের হাওর ও অনেক ক্ষেতের মাঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে উপজেলার হাওর অঞ্চল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে বন্যার মতো পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যা দেখা দিলে দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : গোায়াইনঘাটে বৃহস্পতিবার থেকে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় উপজেলার নি¤œাঞ্চল এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠার কারণে এই উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। উপজেলা বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি উঠায় উপজেলা সদরের সাথে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে স্থানীয় মানুষের।
এদিকে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিছনাকান্দি ও জাফলং এ দু’টি পাথর কোয়ারির সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এই দুটি পাথর কোয়ারির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পরেছে। অনেকের বসত ঘরে পানি উঠায় গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার ভিবিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ডুকে পরায় উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়’র পরীক্ষা স্থগিত করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।
গতকাল শনিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও খোঁজ নিয়ে জানাযায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উপজেলার নিম্নাঞ্চল গুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার প্রায় ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়ি ঘর পানিতে প্লাবিত হয়। এতে করে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট গুলো তলিয়ে গেছে। যার ফলে উপজেলা সদরের সাথে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যাবস্থা এক রকম বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অপরদিকে পাহাড়ী ঢলের তোড়ে উপজেলার নদীর তীরবর্তী বসত বাড়ি ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। পাশাপাশি এই এলাকার নদীর তীর সংরক্ষণ ও ফসলী জমি রক্ষায় বেড়িবাঁধ গুলোও রয়েছে হুমকির মূখে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বোনা আমন ও বীজতলা ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়।
গোয়াইনঘাটের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. রেজাউল ইসলাম বলেন উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ডুকে পরা ও বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রবিবারের সকল পরিক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরীক্ষার পরবর্তী তারিখ ও সময় সকল প্রধান শিক্ষকগণকে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ^জিত কুমার পাল জানান, উপজেলার ভিবিন্ন এলাকায় পানি বৃদ্ধির খবর পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিক ভাবে মোকাবেলা করে ত্রাণ সহ প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহায়তা প্রধানের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী বলেন গোয়াইনঘাটের বন্যা পরিস্থিতি অবনতির খবর পাওয়ার সাথে সাথে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও সাধারণ মানুষের খোজ খবর নিয়েছি। এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ত্রাণসহ প্রয়জনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
গোলাপগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন : গোলাপগঞ্জে আবারও বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এ আশংকা দেখা দিয়েছে। শনিবার ভোর থেকে অবিরাম বৃষ্টির কারণে উপজেলার অনেক স্কুল ও বাসা-বাড়ীতে ঢুকে পড়েছে পানি। বর্তমানে পানিবন্দি হয়ে রয়েছে দাড়িপাতন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। তা ছাড়া নি¤œাঞ্চল হিসেবে পরিচিত শরীফগঞ্জ, বুধবারীবাজার, বাদেপাশা ভাদেশ্বর ও আমুড়ার একাংশে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে। পানিতে ভরে গেছে খাল, বিল এবং হাওরগুলো। অব্যাহত পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হাওরাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে বিরাজ করছে পানিবন্দি হয়ে পড়ার আতংক। টানা দু’বার বন্যার ধকল এখনো কেটে ওফতে পারছেন না লোকজন। বন্যায় তাদের বিধ্বস্ত হয় সাজানো সংসার। রাস্তা-ঘাট, স্কুল-মাদ্রাসা, বাড়ী-ঘর ও মাছের ঘের হয় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। পথে বসেন উপজেলার শত শত অসহায় লোকজন। এ ক্ষতি পুষিয়ে কাঠিয়ে ওঠতে না ওঠতে আবারও শুরু হয় অবিরাম বৃষ্টি। গত কয়েক দিন থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে পানি বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীতে।