সংবাদ সম্মেলনে শানু ॥ কামাল হত্যার জন্য সোহানের খুনীরাই দায়ী

49

press con pic (2) 31.12.14স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে ছাত্রদল ‘সন্ত্রাসী’ কামাল হত্যাকান্ডের জন্য কলেজছাত্র সোহানের খুনীরাই দায়ী। সোহান হত্যা মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেতে খুনী গুলজার রবাহিনী কামালকে খুন করে এর দায় চাপিয়ে দিয়েছে সোহান পরিবারের উপর। এমন অভিযোগ সোহানের মা সাবেক কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু’র। গতকাল বুধবার সিলেটে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের  সংরক্ষিত ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু জানান, তার পুত্র সোহান ইসলাম সিলেট মদনমোহন কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। আর কামাল ছিল একই এলাকার ত্রাস। ফেরীওয়ালাসহ গরীব-দুঃখী মানুষের মালপত্র ও টাকা-পয়সা প্রায়ই কেড়ে নিত কামাল।  ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্রতিবেশী হিসেবে তার কাছে বিচার দিত নিপীড়িত মানুষজন। তিনি প্রায়ই কামালের বিচার করে মানুষের টাকা কড়ি আদায় করিয়ে দিতেন। এ নিয়ে কামাল ও তার স্বজনরা শত্র“ ও প্রতিপক্ষ হয়ে শানু ও সোহন পরিবারের। শানু পরিবারের ক্ষতি সাধনের চেষ্টায় লিপ্ত হয় সন্ত্রাসী কামাল। এরই অংশ হিসেবে কামাল ২০১৩সালের ২৪জানুয়ারী তার ছেলে কলেজছাত্র সোহানকে মারপিট করে খুন করবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়। পরে একই বছরের ২৬ জানুয়ারী কামাল স্থানীয় সন্ত্রাসী গুলজার বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে তার পুত্র সোহানকে খুন করায়। কামালের প্ররোচণায় তার পক্ষ হয়ে নগরীর খুলিাটুলার সন্ত্রাসী গুলজার, পিচ্চি শাকিল, সন্ত্রাসী টিপু, টাইগার জামাল, আমির, রিপন, গুলজারের পুত্র সাকিব, জামাল উদ্দিন, রিয়াজ, কামরুল, তোফায়েল, টিটু ওরফে ইবনে হামিদ সহ সন্ত্রাসীরা তার ছেলে সোহানকে কুপিয়ে খুন করে। এ ঘটনায় শাহানা বেগম শানু বাদী হয়ে কামালসহ কথিত গুলজার বাহিনীর উপরোল্লেখিত সদস্যদের আসামী করে সিলেট কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা [নং-৩১(১)১৪] করেন। মামলায় পুলিশ গুলজারের কয়েক সহযোগীকে গ্রেফতার করে ও অন্যরা পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। কামালের কথায় ও ইন্ধনে সোহানকে খুন করে গুলজার ও তার সহযোগীরা এবং তাদেরকে খুনের দায় থেকে রেহাই দেয়ার দায়িত্বও নিয়েছিল কামাল। কিন্তু কামাল গুলজারদেরকে ছাড়িয়ে আনতে ও মামলার দায় থেকে রেহাই দিতে পারেনি। তাই মামলা পরিচালনা নিয়ে রিবোধ বাঁধে কামাল ও গুলজারদের মধ্যে।
এক পর্যায়ে গুলজার ও তার সহযোগীরা মিলিত হয়ে ‘একঢিলে দুই শিকার’ করার হীন মানসে ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে সোহান খুনের নেপথ্যের নায়ক কামালকে খুন করে। পরে কামালের পরিবারকে চাপে ফেলে ও কামালের স্ত্রী হ্যাপি বেগমকে প্রলুব্ধ করে  সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সোহানের পরিবারকে কামাল হত্যা মামলার আসামী করায়। মামলায় সোহান পরিবারের সকল সদস্য এমনকি কাজের মেয়েকেও অহেতুক আসামী করা হয়। সোহান পরিবারকে ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলায় পলাতক করে গুলজার ও তার বাহিনীর ৮সদস্য সোহান হত্যা মামলা থেকে নির্বিঘেœ অব্যাহতি লাভ করে। পুলিশ মূল খুনী গুলজার ও তার পুত্র সাকিব এবং জামাল আহমদ, টিপু, রিয়াজ, কামররুলসহ এজাহার নামীয় ও এজাহার বহির্ভূত ৮ খুনীকে বাদ দিয়ে সোহান হত্যামামলায় নামেমাত্র ও খন্ডিত একটি চার্জশিট দেয়। শানু জানান, কামাল হত্যার দিন ও সময়ে তার স্বামী শেখ মো. তাজুল ইসলাম ঘটনাস্থলের অনেক দূরে নগরীর শাহী ঈদগাহে অবস্থান করছিলেন। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক এর জ্বলন্ত সাক্ষী। এছাড়া কামাল খুনের আধঘন্টার ব্যবধানে গুরজার বাহিনী শানুর বাসায় হানা দিয়ে নগদ ১ রাক টাকাসহ মালামাল লুটে নেয়। এ ঘটনায় শানু সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যজিষ্ট্রেট ১ম আদালতে একটি দরখাস্ত মামলা [নং-১৩৯১/১৪] করেছেন  এবং কোতয়ালী পুলিশ মামলার তদন্ত করছে বলে জানান। শাহানা বেগম শানু জানান, গুলজার বাহিনীর হাতে নিহত হওয়া কামাল ছিল সিলেটে পুলিশের তালিকাভুক্ত ৭৭জন মোস্ট ওয়ান্টেড এর অন্যতম  এবং পেশাদার খুনী। সে ছিল ছাত্রলীগ কর্মী ঝুটন হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ও সিলেটের জাফলংয়ে স্কুলছাত্র লিটন হত্যামামলার এজাহারভুক্ত আসামী। খুন রাহাজানি ছিনতাই চাঁদাবাজিই ছিল তার একমাত্র পেশা। তার পুত্র কলেজছাত্র সোহানকে খুন করার পর কামালকে হত্যা করে খুনী গুলজার বাহিনী হত্যার দায় সোহান পরিবারের উপর চাপিয়ে তাদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালাতে থাকে। তাদেরকে এলাকার ত্রাস বানিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করে। তার ভাসুর নিহত মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলামকে ফেনসিডিল ব্যবসায়ী, তার স্বামী তাজুল ইসলাম ও ভাসুর নূরুল ইসলামকে ছিনতাইকারী ও ভূমিখেকো সাজিয়ে মিথ্যা প্রচার চালায়। সোহানের খুনী গুলজার ও সহযোগী আলাউদ্দিন ভুয়া ঠিকানার এক মহিলাকে বাদী করিয়ে তার স্বামী তাজুল ইসলাম ও জনৈক আকিকুর রহমানকে আসামী করে সিলেটের ওসমানীনগর থানায় মিথ্যে একটি গুমের মামলা দায়ের করায়, যা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কলেজছাত্র সোহান হত্যামামলার উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও খন্ডিত চার্জশিটকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেন সোহানের মা সাবেক কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু। তিনি তার পুত্র সোহান হত্যামামলার উচ্চ পর্যায়ের পুনঃতদন্ত দাবি করেন। পাশপাশি কামাল হত্যা মামলা থেকে সোহানের মা-বাবাসহ আসামীদের অব্যাহতি দিতে প্রধান মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন নিহত সোহান পরিবারের সদস্য দিলরুবা ইসলাম, শাহানা বেগম, রীনা বেগম, সোহানের দাদী শামসুন নাহার, সোহানের ছোট বোন ফাতেমা ও সোহান হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী বোন স্বর্না, দুলাল আহমদ ও রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।