পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত লাঘাটা নদীর খনন কাজ চলছে। খনন কাজে নদীর পেটে যাচ্ছে কৃষকদের ভোগদখলকৃত রেকর্ডীয় জমি। নদী খননে সেচ সমস্যার কারণে শত শত কৃষক বোরো আবাদ বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে নদীর পেটে জমি হারিয়ে ও বোরো চাষাবাদ বঞ্চিত কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বছরে লাঘাটা নদী খননের জন্য সার্ভে কাজ সম্পন্ন হয়। তবে নানা জটিলতায় খনন কাজ শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হয়। দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের লাঘাটা নদীর উৎসস্থল পর্যন্ত ২৪ কি.মি. খনন কাজ চলবে। দু’উপজেলায় খননের জন্য ১১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স (প্রা:) লিমিটেড কমলগঞ্জ উপজেলা অংশে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কমলগঞ্জে অংশে নদী খননের প্রাক্কলিত মূল্য ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ৮০৭ টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে লাঘাটা নদীর কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর ও পতনঊষার ইউনিয়ন অংশে খনন কাজ চলছে। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর নদী খনন কাজ শুরু হয়। খনন কাজ শুরুর সাথে সাথে কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিলেও কৃষকদের শত শত কিয়ার ভোগদখলকৃত এসএ রেকর্ডীয় জমি নদীর বাঁধের জন্য গিলে খাচ্ছে। তাছাড়া নদী খননের জন্য এ বছর কৃষকরা বোরো আবাদ বঞ্চিত হচ্ছেন। বিস্তীর্ণ বোরো আবাদী জমি পতিত রয়েছে। কৃষকরা একদিকে নদীর পেটে জমি হারাচ্ছেন, অন্যদিকে বোরো আবাদ বঞ্চিত হয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি করছেন। তাছাড়া নদী খনন কাজেও বিভিন্ন ত্র“টি বিচ্যুতি রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তোলেছেন।
উপজেলার কেছুলুটি গ্রামের জসিম উদ্দিন, আকলুছ মিয়া, ধূপাটিলা গ্রামের কৃষক আক্তার মিয়া, রেজাউল করিম, নুরুল মোত্তাকিম শেরওয়ান আলী, ওয়াহিদ মিয়া, ফারুক মিয়া, শওকত মিয়া, হারুণ মিয়া বলেন, নদী খননের জন্য আমাদের ভোগদখলকৃত এসএ রেকর্ডীয় আবাদীয় জমির ২৫ শতক, ৩০ শতক, ২০ শতক, ১৫ শতক হারে জমি নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। নদী খননের জন্য ইতিপূর্বে যে সীমানা খুঁটি দেয়া হয় এখন সীমানা খুঁটি ছাড়িয়ে আমাদের জমিতে প্রবেশ করছে। এছাড়া বাঁধের মাটিসহ অধিকাংশ স্থানে আমাদের জমির উপর দিয়ে বাঁধ দেয়া হচ্ছে। এতে আমরা কৃষকরা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। তারা আরও বলেন, এবছর নদী খননের জন্য সেচ সমস্যার কারনে আমরা বোরো আবাদও করতে পারছি না। ফলে সবদিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে।
কমলগঞ্জে হাওর ও নদী রক্ষা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি দুরুদ আলী ও সদস্য সচিব তোয়াবুর রহমান কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, নদী খনন আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। তবে কৃষকদের জমি কতটুকো নদী নিয়ে যাবে সে বিষয়ে কৃষকদের সাথে কোন আলাপ আলোচনা হয়নি। কৃষকরাও জানেন না যে তাদের নিজস্ব রেকর্ডীয় ভোগদখলকৃত জমির একটি বড় অংশ নদী খননের জন্য নিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, নদী খনন করতে গেলে বাঁধের মাটি ফেলতে হবে। স্বাভাবিকভাবে সে মাটি পার্শ্ববর্তী জমিতে ফেলা হবে। বৃহত্তর স্বার্থে কৃষকদের সেটুকু ক্ষতি মেনে নেয়া উচিত। তাছাড়া এখন খনন কাজ চলছে। বাঁধের মাটি ড্রেসিং করে দেয়া হবে। তবে নদীতে পানি থাকার কারণে খননেও কিছুটা সমস্যা হয়েছে। কৃষকদের চাষাবাদের স্বার্থে কিছুদিনের জন্য স্লুইসগেট খুলে দেয়া হয়েছে এবং খনন কাজও চলছে।