কাজির বাজার ডেস্ক
সাতাশতম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় ফল বাতিল হওয়ায় বাদ পড়া ১ হাজার ১৩৭ জনকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এ সংক্রান্ত তিনটি আপিল আবেদনের ওপর চ‚ড়ান্ত শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে দেড় যুগ পর সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন আইনি লড়াই চালিয়ে আসা এই চাকরিপ্রত্যাশীরা।
এ মামলায় আপিল আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন দোলন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
আর সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভ‚ঁইয়া।
সালাহউদ্দিন দোলন বলেন, “এ রায়ের ফলে প্রায় ১২শ জন যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হতে চাইবেন তাদের নিয়োগ দিতে হবে ৯০ দিনের মধ্যে।”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে ২৭তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় ৩৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হন। ২০০৭ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সেই মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিল করে।
ওই বছরের জুলাই মাসে দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় সেই মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। তাতে উত্তীর্ণ ৩ হাজার ২২৯ জনকে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা রিট আবেদন করেন। কিন্তু ২০০৮ সালের ৩ জুলাই হাই কোর্ট প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
সেই রায়ের বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারীদের ২৫ জন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন।
অন্যদিকে ২০৫ জন আবেদনকারীর আরেক রিট আবেদনে হাই কোর্টের আরেকটি বেঞ্চ ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করে। এর বিরুদ্ধে সরকার তিনটি লিভ টু আপিল করে।
২০১০ সালের ১১ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারকের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষা বাতিল বৈধ ঘোষণার হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে।
একইসঙ্গে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা লিভ টু আপিল কিছু পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেয়।
ওই রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ১ হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে ১৪০ জন আলাদা আবেদন করেন ২০২৪ সালে। শুনানি নিয়ে ৭ নভেম্বর আপিল বিভাগ তাদের আপিল করার অনুমতি দেয়।
এর ধারাবাহিকতায় তিনটি আপিলের ওপর শুনানি হয় সর্বোচ্চ আদালতে, যার রায় এল বৃহস্পতিবার।
আবেদনকারী প্রার্থীদের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন রায়ের পর বলেন, হাই কোর্ট ২০০৯ সালে তিনটি নির্দেশনাসহ যে রায় দিয়েছিল, সেটি বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
“সেই তিন ডাইরেকশনে বলা হয়েছিল, যাদের ফল বাতিল করা হয়েছিল, তাদের ৯০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দিতে হবে; তাদের জ্যেষ্ঠতা হবে আইন অনুযায়ী; ইতোমধ্যে যারা ২৭তম বিসিএসের মাধ্যমে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাদের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেটি আইনানুগভাবে নির্বাহী বিভাগ দেখবে।”
তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এর আগের রায়ে কোনো রকম লিভ গ্র্যান্ট না করে হাই কোর্টের রায়টা সেট অ্যাসাইড করে দিয়েছিল। সেই রায় বাতিল করা হয়েছে।”
আপিলকারীদের আরেক আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, “আপিল বিভাগ আজকে পূর্বের আপিল বিভাগের দেওয়া রায় বাতিল করল এবং হাই কোর্ট বিভাগে যে রায়ে এই ১১৩৭ জন ব্যক্তির চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল, সেই রায় পুনরুজ্জীবিত হল।
“অর্থাৎ আমাদের মনে করতে হবে যে হাই কোর্ট বিভাগ যে রায় দিয়েছিল, সে রায়টি এই ২৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর ১১৩৭ জনের জন্য প্রযোজ্য হবে।”