কাজির বাজার ডেস্ক
গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে রয়েছে। এসব পরিচালনা পর্ষদ নতুন করে গঠন করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছে সরকার। রোববার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের প্রথম দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্য-অধিবেশনে জেলা প্রশাসকদের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। অধিবেশন শেষে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছে। এখানে যারা ছিল তাঁরা চলে গেছে। চর দখলের মতো নতুন প্রভাবশালীরা সেটা দখলের চেষ্টা করেছে। আমরা পরিচালনা পর্ষদগুলো ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করেছিলাম। ডিসি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমরা এটাও বুঝি যে এতগুলো দায়িত্ব তাদের পক্ষে পালন করা খুব কঠিন।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এ কারণে আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছি যে বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পরিষদগুলো আবার শুরু করে দিতে। এটা করতে গিয়ে তারা এই সময়ে যেন রাজনৈতিক চাপ সহ্য করে, প্রতিহত করে তারা যেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে স্থানীয় যারা ভালো মানুষ আছেন, যারা সৎ মানুষ, সবার মধ্যে যারা গণ্যমান্য, সরকারি চাকুরে আছেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আছেন, এমন লোকদের যেন পরিচালনা পর্ষদে নেন। যেন শিক্ষকেরা চাকরি পাওয়া ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার না হন।’
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমরা একটি পরিপত্র দিয়েছি। স্কুলের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে কমপক্ষে বিএ পাস এবং কলেজের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে হলে কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে। এটাতে তাদের পক্ষে রাজনৈতিক চাপ ঠেকানো একটু সুবিধা হয়েছে।’ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষা প্রশাসনের অনেক অনেক দুর্নীতি আছে। এগুলোতে একটু নজরদারি করতে বলেছি। শিক্ষকেরা ঠিকমতো তাদের ভাতা পান না, স্কুল পরিদর্শকদের হেনস্তার শিকার হন। দুই পক্ষেরই দোষ থাকে। এগুলো নজরদারি দরকার।’
পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও বিতরণ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যে বিষয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হবে, সেসব বিষয়ের বই ফেব্রæয়ারির শেষের মধ্যে চলে যাবে বলে আশা করছি। প্রান্তিক স্কুলগুলোতে যেন আগে বই যায়, সে বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (ডিসি) সামনে নির্বাচন আসছে এবং সেই নির্বাচনকে কী করে সুষ্ঠু করা যায়, আমাদের সরকারের তো প্রধান কাজ সবার দাবি-দাওয়া মেটানো না। বরং একটি সুশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাতে উত্তরণ হয়, সে ক্ষেত্রে তারা সব থেকে বেশি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হয়।’ শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আগের জেলা প্রশাসকেরা তাদের শহরের জন্য একটা কিছু স্মৃতি রেখে যেতেন। আমি ডিসিদেরকে তাদের শহরে একটি করে নিদর্শন রেখে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকাল সবকিছুই রাজনৈতিকদের নামে হয়, প্রশাসকদের নামে কিছু হয় না। অন্তর্র্বর্তী সরকারে যারা আছেন, তাদের নামেও কিন্তু কোথাও কিছু হবে না। আমরা কোনো ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চাই না। আমাদের একমাত্র কাজ হলো- সুন্দর নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়া।’
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘এমপিওভুক্ত স্কুলশিক্ষকদের জন্য যতটুকু করার, আমি করার চেষ্টা করব। তাদের জন্য অনলাইনভিত্তিক বদলির একটি ব্যবস্থা করছি। তারা যে ভাতাগুলো পান তা অপ্রতুল, আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে তাদের ভাতাগুলো বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের ৬-৭ বছরের অবসর ভাতা বকেয়া রয়েছে, সেটা যাতে আগামী অর্থবছর থেকে একটি স্থায়ী সমাধান হয়, আমরা সেই চেষ্টা করছি। কোথাও স্কুল আছে শিক্ষক নাই, কোথাও শিক্ষক আছে দালানকোঠা নাই। মানসম্মত শিক্ষা না দেওয়ার থেকে বরং অবকাঠামোর কিছু ঘাটতি থাকলেও যাতে শিক্ষার মান উন্নয়ন হয়, শিক্ষকেরা আরেকটু ভালো সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন, সেদিকে চেষ্টা করব।’
আগামী বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ অন্যান্য বছরের থেকে আনুপাতিকভাবে বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে বলে জানান শিক্ষা উপদেষ্টা।