মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘যদি’ অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে অথবা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান ‘হয়তো’ সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচনপ্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করা হয়, তাহলে অন্তত আরো ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এই দুটি কমিশনের সুপারিশের ওপর প্রধানত নির্ভর করছে আমাদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও তারিখ।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুত রয়েছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের জন্য কমিশন প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।
প্রধান উপদেষ্টা বরাবরই বলে এসেছেন, অন্তর্র্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারের শীর্ষে রয়েছে নির্বাচন। সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা যে ভাষণ দেন, তাতে তিনি বলেন, নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। দ্রæতই রোডম্যাপ দেওয়া হবে। তবে সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিত হতে পারে।
জনগণ সুযোগ দিলে কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারকাজ শেষ করেই সরকার কাক্সিক্ষত নির্বাচন আয়োজন করবেÑএমন কথা আগেও বলেছেন তিনি। চলতি ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা এবং ইউএনডিপির সাবেক প্রধান লর্ড মার্ক ম্যালক-ব্রাউনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, তাঁর সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আগে বড় ধরনের সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।
গত অক্টোবরে অন্তর্বতীঁ সরকার প্রধানের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর যে বৈঠক হয়, সেখানেও নির্বাচনের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। শুরু থেকেই রোডম্যাপ দিতে বলছে রাজনৈতিক দলগুলো। সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপির প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
সরকার যে নির্বাচনের চিন্তা করছে, তাতে আশা দেখছে দলটি। বিএনপি মনে করে, নির্বাচন করতে এত সময় লাগার কথা নয়। সরকার আন্তরিক হলে আরো দ্রæত নির্বাচন সম্ভব।
গত ১৬ বছরে যে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ছিল না বললেই চলে। দেশের ভেতর থেকে, তেমনি দেশের বাইরে থেকেও এসব নির্বাচনের ব্যাপক সমালোচনা ছিল। তাই দেশের মানুষ প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনেরও পূর্বশর্ত হচ্ছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। নির্বাচন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুসংহত করতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ দ্রæত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসুকÑএটি সবারই কাম্য। আমরা চাই, দ্রæত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দেশ এগিয়ে যাক এবং দেশে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হোক। সবার অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হোক।