কাজিরবাজার ডেস্ক :
মহামারীর সময় পেরিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জনজীবন। ২০২০ সালের শুরু থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত করোনা মহামারীর কারণে দারিদ্র্য পীড়িত মানুষের মধ্যে খাদ্য বৈষম্য বেড়েছে চরম আকারে। এ কারণে বেড়েছে কম ওজনের শিশু জন্ম নেয়া। শুধু তাই নয় খর্বকায়, কম উচ্চতাসম্পন্ন শিশুর জন্মও বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দারিদ্যের কারণেই শিশুদের মধ্যে ভিটামিন-ডি, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিডের ঘাটতি বেশ স্পষ্ট। এমন অবস্থায় সব মানুষ বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য অপরিহার্য। আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনসচেতনতা বাড়াতে আজ থেকে দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ। ‘সঠিক পুষ্টিতে, সুষ্ঠু জীবন’ প্রতিপাদ্যে দেশব্যাপী নানা আয়োজনে পালিত হতে যাচ্ছে দিবসটি।
ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ এ্যান্ড নিউট্রিশনের (আইপিএইচএন) এক জরিপের প্রেক্ষিতে জানা যায়, বাংলাদেশে ৩৬ শতাংশ মানুষ স্ট্যান্টিং (উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন) নিয়ে বেড়ে উঠছে। সম্প্রতি স্ট্যান্টিং কমলেও তা কাক্সিক্ষত মাত্রায় কমছে না। দ্রুত পুষ্টির ঘাটতি কমিয়ে স্ট্যান্টিং কমিয়ে আনতে না পারলে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্য অনুযায়ী ২৭ শতাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পূর্ণ বয়স্ক নারীদের মধ্যেই কম ওজনের হার বেশি। উপকূলীয় এলাকার মানুষ এবং হাওর এলাকার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা খুবই কম। শহুরে এলাকার মানুষের মধ্যে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হলেও শহুরে বস্তিতে খুবই খারাপ অবস্থা। বস্তিতে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের অর্ধেকই স্ট্যানটিংয়ে ভুগছে। বস্তি এলাকার ৬ থেকে ২৩ মাস বয়সী প্রতি ৪টি শিশুর মধ্যে একটি (২৫.৯ শতাংশ) যথাযথ পুষ্টি পেয়ে বড় হতে পারছে না।
আইপিএইচএনর মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ নাসির উদ্দিন মামুন বলেন, পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিশেষ সেবা প্রদান করা হবে। এছাড়া পুষ্টি সপ্তাহে প্রতি জেলা ও উপজেলা, বিভাগে দুস্থদের মধ্যে পুষ্টিকর খাদ্য বিতরণ করা হবে। ইপিআই টিকা কেন্দ্রে আসা মায়েদের মধ্যে বিশেষ পুষ্টি বার্তা বিতরণ করা হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় মসজিদে জুমার খুতবায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে বিশেষ বার্তা প্রদান করা হবে।
জানা যায়, জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এ বছরও পালিত হবে দিবসটি। আজ থেকে শুরু হয়ে এর কার্যক্রম চলবে ২৯ এপ্রিল। সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজনে ২৪ তারিখ আলোকসজ্জা, ব্যানার ফ্যাস্টুন ও গণমাধ্যমে প্রচার করা হবে। এসব কর্মসূচীর উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। রাজধানীর নিপসম অডিটরিয়ামে আজ এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে এক আলোচনা সভার। এছাড়া সোমবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মিলনায়তনে ‘আরবান নিউট্রিশন’ বিষয়ক একটি সেমিনার এবং মঙ্গলবার ‘নিউট্রিশন : অপরচুনিটি এ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে। পরে ২৭ তারিখ লেকশোর হোটেলে ‘নিউট্রিশন গর্ভারনেন্স’ শীর্ষক সেমিনারও অনুষ্ঠিত হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহব্যাপী এই কর্মসূচীতে ৭টি বার্তা দেশব্যাপী প্রচার করা হবে। সেগুলো হলো-জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে শালদুধ খাওয়ানো, শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ এবং ৬ মাস বয়সের পর থেকে ২ বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি সুষম খাবার দেয়া, শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কি না জানতে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ করা, কিশোর-কিশোরীদের ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করা, গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দেয়া এবং নিয়মানুযায়ী আয়রন-ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ানো, পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের পুষ্টি চাহিদার প্রতি নজর দেয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং কোভিড প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হবে।