কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজধানী ঢাকার বনানীতে বহুতল এফ আর টাওয়ারে ভয়ঙ্কর অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে ২১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭০ জন। আহতদের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষ চিকিৎসা সেল খোলা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন তেরো জন। আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, ফায়ার সার্ভিসের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ছিল না। এ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয়। সম্মিলিতভাবে টানা পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। উদ্ধারকারীদের চেষ্টায় শত শত মানুষ জীবন ফিরে পেয়েছেন। সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর উদ্ধারকারীদের ব্যাপক তৎপরতায় দুটি হেলিকপ্টার দিয়ে ভবনটির ছাদে আটকেপড়াদের উদ্ধার করায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান তারা। ভবনটি থেকে অন্তত দেড় শতাধিক লোককে উদ্ধার করা হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী অত্যাধুনিক ড্রোন দিয়ে পুরো ভবনসহ আশপাশের এলাকা মনিটরিং করেছে। বিশেষ করে ভবনের ভেতরে আরও কোন লোক আটকে ছিল কিনা তা দেখা হয়েছে। এই প্রথম কোন অগ্নিকা-ের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে তিন বাহিনীকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। আগুনের কারণে পুরো রাজধানীজুড়ে ছিল তীব্র যানজট। বনানী, গুলশান ও মহাখালীসহ আশপাশের জনজীবন থমকে গিয়েছিল। আগুনের ভয়াবহতা এতটাই মারাত্মক ছিল যে, তাপে আশপাশের ভবনের কাঁচ ফেটে ভেঙ্গে পড়েছে।
ঘটনাস্থল : বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে একটার দিকে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ১৭ নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর ২২তলা এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা : নিরাপত্তাকর্মী কামরুল বলছিলেন, প্রথমে ভবনটির ৬/৭ তলা থেকে হালকা ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। সময় যত বাড়ছিল ধোঁয়ার পরিমাণও বাড়ছিল। এরই মধ্যে ভবনটির ভেতর থেকে মানুষের চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছিল। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সেখানে আগুন আগুন বলে চিৎকার আর হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। আগুন খুবই দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছিল। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন ৬/৭ তলার পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় প্রাণে বাঁচতে তিন ব্যক্তি ভবনের পেছনের দিকের কাঁচ ভেঙ্গে সামনে থাকা তার ধরে ঝুঁলে বের হয়। তারা তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে যায়। একই সময় আগুনের হাত থেকে বাঁচতে একজন পেছন থেকে লাফ দেয়। আবার সামনের দিকেও একজন ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে। এরা সবাই পড়ে মারা যায়।
ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার তৎপরতা : খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে হাজির হয়। সঙ্গে নিয়ে যায় এ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য জরুরী জিনিসপত্র। সব মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিসের দেড়শ’ জনবল সেখানে কাজ করতে থাকে। ভবনটির সামনের দিকে চারটি ইউনিট দিয়ে পানি দেয়া হয়। আর পেছন থেকে তিনটি ইউনিট দিয়ে পানি দেয়া হয়।
ল্যাডার দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনের ভেতরে পানি দিচ্ছিলেন। পানি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছিল। তীব্র আগুনের মুখে পানি পর্যন্ত পুড়ে বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছিল। ঠিক ওই সময় ভবনের ভেতর থেকে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে যেভাবে লাভা ছড়িয়ে পড়ে তার চেয়েও তীব্র গতিতে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছিল। এ সময় পুরো আশপাশের এলাকা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এখনই তীব্র কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাবে। কালো ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্ট তীব্র হয়ে যাচ্ছিল। ওই সময় কয়েকজন বয়স্ক নারী দম বন্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ফায়ার সার্ভিস কোনভাবেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না।
সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসে সম্মিলিত উদ্ধার তৎপরতা : পরে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী ঘটনাস্থলে হাজির হয়। নৌবাহিনীর অগ্নিনির্বাপণের পানি ছেটানোর শক্তিশালী মেশিন দিয়ে নিচ থেকে পানি দেয়া হচ্ছিল। নৌবাহিনীর উদ্ধারকারীরা নিচতলা থেকেই বিশেষ সেই পানি ছেটানো যন্ত্র দিয়ে ১৪/১৫তলা পর্যন্ত পানি দিচ্ছিল। ওই সময় আগুন উপরের দিকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এদিকে নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা আশপাশের ভবন দিয়ে আগুন লাগা ভবনটিতে ঢোকার চেষ্টা করে।
নৌবাহিনীর একজন ডুবুরী বলছিলেন, তিনি ১৯তলা পর্যন্ত উঠেছিলেন। অনেক লোককে তিনি ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে দেখেছেন। ধারণা করা হচ্ছিল, ছাদেও একইভাবে অনেক লোক আটকা পড়ে আছে। এদিকে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর উদ্ধারকারীরা হেলিকপ্টার নিয়ে ভবনটির ছাদে বারবার চক্কর দিচ্ছিল। প্রচন্ড ধোঁয়ার কারণে নিচ থেকে হেলিকপ্টার পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। আর হেলিকপ্টার থেকেও ভবনের ছাদে কি আছে তা ধোঁয়ার কারণে দেখা যাচ্ছিল না বলে বুঝা যাচ্ছিল। এজন্য হেলিকপ্টারটি ছাদের ওপর যাওয়ার পর স্থির হয়ে থাকছিল। এতে কপ্টারের পাখার বাতাসে ছাদ থেকে ধোঁয়া সরে যাচ্ছিল। ওই সময় ছাদে কত মানুষ আছে তা দেখা যাচ্ছিল। এরপর তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। আর ছাদ যাতে আগুনের তাপে গরম না হয় এবং গরমের কারণে ছাদে থাকা মানুষ যাতে মারা না যান, এজন্য হেলিকপ্টার থেকে পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছিটানো হচ্ছিল। এদিকে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীরা ভবনের সামনের ও পেছনের দিকে কাঁচ ভেঙ্গে পানি দিচ্ছিল। আর ভেতরে থাকা লোকজনদের মই দিয়ে নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছিল।
ড্রোন দিয়ে ভবনের ভেতরে পর্যবেক্ষণ : বিকেল তিনটার দিকে একটি ছোট ড্রোন ভবনটির অনেক উপরে উড়তে দেখা যায়। সেটি ভবনের চারদিকে বারবার চক্কর দিতে থাকে। একবার নিচে আর আবার উপরে ওঠছিল। চোখের পলকে সেটি ভবনের চারদিকে ঘুরছিল। জানা গেছে, উদ্ধারকারীরা শক্তিশালী ড্রোন দিয়ে ভবনের ভেতরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। ভবনটির ভেতরের পরিস্থিতি কি এবং কি পরিমাণ মানুষ আটকা পড়েছে এসব জানতেই ড্রোনটি পাঠানো হয়েছিল। ড্রোনের দেয়া তথ্য মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় উদ্ধারকারীরা। এতে করে হতাহত কম হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন উদ্ধারকারীরা। রাত আটটার দিকে আগুন পুরো নির্বাপণ করার পর শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। উদ্ধার অভিযানে ব্যবহার করা হয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হওয়ার কারণ : ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা দেবাশীষ বর্ধন বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রচুর পানির দরকার ছিল। সেই পরিমাণ পানি ছিল না। যথাস্থানে পানি পৌঁছানো যাচ্ছিল না। আর ভবনের ভেতরে সিনথেটিক ফাইবার দিয়ে ডেকোরেশন করায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে দেরি হয়েছে।
হাজার হাজার মানুষের ভিড় : ঘটনার পর থেকে সেখানে ভিড় জমায় হাজার হাজার মানুষ। মানুষের ভিড়ের কারণে রীতিমতো উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মানুষকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে দিতে সক্ষম হন। তারপরও উৎসুক মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। তবে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে কোন অসুবিধা হয়নি। ভবনটির সামনের দুটি সড়কেই জরুরী রাস্তা গড়ে তোলা হয়েছিল। উদ্ধারকৃতদের দ্রুত সেই রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সারি সারি এ্যাম্বুলেন্স : ঘটনার পর পরই আশপাশের বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের এ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে আসতে থাকে। এ্যাম্বুলেন্সগুলো বনানী সড়কের দুদিকে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেয়। এছাড়া ভবনটির পেছনে সেরিনা হোটেলের সামনেসহ আশপাশের প্রতিটি রাস্তা ছিল এ্যাম্বুলেন্সে ভরা। ঘটনাস্থলে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসক এবং তাদের সহযোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
চারদিকে আতঙ্ক : আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের ভবনগুলোতে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষজন হুড়োহুড়ি করে বিভিন্ন ভবন থেকে বের হয়ে আসে। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে পুরো এলাকার জনজীবন পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়ে। সেখানে হাজার হাজার মানুষের স্রোত বইতে থাকে। পরে আশপাশের রাস্তা থেকে সব যানবাহন ও মানুষজনকে সরিয়ে দেয়া হয়।
আশপাশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তৎপরতার কারণে হতাহত কম হয়েছে ॥ আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। ঘটনাস্থলের পাশেই প্রাইম এশিয়া, নর্থ সাউথ ও সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি। সেখানকার শত শত শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা ভবন থেকে অনেককে বের করে আনেন। সেই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস বা অন্যান্য উদ্ধারকারী সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যাতে কাজ করতে পারে এজন্য তারা পুরো এলাকার যানবাহন সরিয়ে দেন। রাস্তা পরিষ্কার রাখেন।
নিহতরা হচ্ছেন : আগুনে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ২১ জনের মৃত্যুর কথা জানা গেছে। যার বনানী মডেল থানার পরিদর্শক ইয়াসিন জানান, বিকেল নাগাদ আগুনে পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭), মামুন (৩৬), আমিনা ইয়াসমিন (৪০), আব্দুলাহ আল ফারুক (৩২), মনির (৫০), মাকসুদুর (৩৬) ও নিরস চন্দ্র নিহতের খবর পাওয়া যায়। রাতে অভিযান চালিয়ে ভবনটি থেকে আরও ১৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়। জানা গেছে, পারভেজ সাজ্জাদ গোপালগঞ্জের কাশয়ানির বালুগ্রমের নজরুল ইসলাম মৃধার ছেলে। মামুনের মৃত্যু হয় ইউনাইটেড হাসপাতালে। তিনি এফ আর টাওয়ারে অবস্থিত রিজেন্ট এয়ারের কর্মকর্তা ছিলেন। দিনাজপুর সদরের বালিয়াকান্দির আবুল কাশেমের ছেলে তিনি। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান নিরস ভিগ্নে রাজা (৪০)। তিনি শ্রীলঙ্কার নাগরিক বলে জানা গেছে। তিনি আগুনের হাত থেকে বাঁচতে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন বলে জানা গেছে। এ্যাপোলো হাসপাতালে মারা গেছেন আমিনা ইয়াসমিন। পারভেজ সাজ্জাদ বনানী ক্লিনিকে, মামুন, মাকসুদুর ও মনির ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান। তাদের লাশ যে যে হাসপাতালে মারা গেছেন, সেই হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানান, বিকেলে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় আব্দুল্লাহ আল ফারুকের নামের একজনকে। পরে তিনি মারা যান। তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এছাড়া রেজাউল আহমেদ (৩৭) ও আবু হোসেনের (৩৫) অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
এছাড়া আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অন্তত ৫০ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বনানী ক্লিনিক, ইউনাইটেড হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া লাফিয়ে পড়ে আহত সিরি ইন্দ্রিকা (৪৬) নামের আরেক শ্রীলঙ্কার নাগরিককে ঢাকা মেডিক্যালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করেছেন ॥ বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুন লাগার ঘটনায় পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও হতাহতদের পাশে দাঁড়াতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অগ্নিকান্ডের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন।
জানালা দিয়ে বাঁচার আকুতি : ঘটনার সময় আগুন লাগা এফ আর টাওয়ারের বিভিন্ন তলার জানালা থেকে হাত বাড়িয়ে উদ্ধারের আকুতি জানান আটকাপড়া ব্যক্তিরা। তাদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যাচ্ছিল। উদ্ধারকারীরা শতাধিক লোককে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেবাশীষ বর্ধন।
তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি : ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।
রেডিও টুডে ও দুরন্ত টিভির সম্প্রচার সাময়িক বন্ধ : আগুনের কারণে রেডিও স্টেশন রেডিও টুডে (এফএম ৮৯.৬) ও দুরন্ত টিভির নিয়মিত সম্প্রচার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও সম্প্রচার শুরু হবে। এফ আর টাওয়ারের পাশেই আওয়াল সেন্টারের ২০তলায় রেডিও টুডে স্টেশনটি। আর পাশের আরেকটি ভবনেই দুরন্ত টেলিভিশন সেন্টার।
সব হাসপাতালে জরুরী চিকিৎসা সেবা : অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আহতদের জরুরী চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য রাজধানীর সব সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডাঃ সত্যকাম চক্রবর্তী জানান, সব হাসপাতালকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সব খরচ সরকার বহন করবে। বেসরকারী হাসপাতালগুলোর চিকিৎসার খরচ পরবর্তীতে সরকার প্রদান করবে। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের দুটি এ্যাম্বুলেন্স ও কাছাকাছি বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালের একটি এ্যাম্বুলেন্সসহ বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্সগুলো কাজ করছে সরকারী নির্দেশনায়। তিনি আরও বলেন, ঢামেকের বার্ন ইউনিটকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এফ আর টাওয়ারের পাশের ভবনগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল : বনানীর এফ আর টাওয়ার থেকে পাশের ভবনেও আগুন ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন আর পাশের ভবনগুরোতে ছড়াতে পারেনি।
স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, বৃহস্পতিবার ঢাকার বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দিনাজপুরের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৭) পুড়ে মারা গেছেন তিনি ঢাকার বনানীর এফ আর টাওয়ারে হ্যারিটেজ এয়ার কার্যালয়ের চীফ এ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মামুন দিনাজপুর শহরের পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা অন্ধহাফেজ মোড় এলাকার প্রাক্তন ফরেস্ট অফিসার মরহুম আবুল কাশেমের ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন। তার মা, স্ত্রী, দুই কন্যা এবং চার ভাই রয়েছে। তার প্রথম জানাযা শুক্রবার বেলা ১১টায় গ্রামের বাড়ি জেলার বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ এলাকার মিরাবনে অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় জানাযা শেষে দিনাজপুর শহরের ফরিদপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।