উত্তাল পার্বত্যের তিন জেলা খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে চারজন নিহত

11

কাজির বাজার ডেস্ক

খাগড়াছড়ি শহরে চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে বুধবার এক যুবক মারা যান। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতভর দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। শুক্রবার সকালে এই সহিংসতা রাঙামাটিতেও ছড়িয়ে পড়ে। দুই জেলায় এ পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত ৭০ জন। সংঘর্ষের সময় দোকানপাট ও বাড়িঘরে ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
উ™‚¢ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুপুরে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
নিহত চারজন হলেন- খাগড়াছড়ির ধন রঞ্জন চাকমা (৫০), রুবেল ত্রিপুরা ও জুরান চাকমা (২০) এবং রাঙামাটিতে একজন। এর মধ্যে ধন রঞ্জন চাকমার বাড়ি দিঘীনালায়। রুবেল ত্রিপুরা ও জুরান চাকমার সদরের নারানখাইয়া এলাকায়। তবে রাঙামাটিতে নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের গুজবকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সদরের বাঙালি অধ্যুষিত থানা বাজার ও বোয়ালখালী বাজারের বাসিন্দাদের মধ্যে ভয় ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিকেল ৪টার দিকে জনা পঞ্চাশেক বাঙালি মিছিল নিয়ে কলেজ গেট থেকে থানা বাজার ঘুরে লারমা স্কয়ারের দিকে এগোলে পাহাড়িরা বাধা দেয়। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা লারমা স্কয়ারে সওজের জায়গায় স্থাপিত অস্থায়ী মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় বেশ কয়েকটি ফাঁকা গুলির শব্দ হলে বাঙালিরা পিছু হটে।
সন্ধ্যার পর থেকে দীঘিনালা, পানছড়িসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাস্তার অবরোধ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চড়াও হয়। পানছড়িতে বিক্ষোভকারীরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
রাতে জেলা সদরের নারানখাইয়া ও স্বনির্ভর এলাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শুনা যায়। কারা গুলিবর্ষণ করেছে কেউ নিশ্চিত না করলেও এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গভীর রাতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দুই পাহাড়ি যুবক ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জুরান চাকমাকে (২০) মৃত অবস্থায়, রুবেল ত্রিপুরা (৩৫) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় শুক্রবার বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারির নোটিশ জারি করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যে কোনো ধরনের সহিংসতা রোধে এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে শুক্রবার সকালে রাঙামাটি শহরের জিমনেসিয়াম চত্বর থেকে কয়েক হাজার পাহাড়ির একটি মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগ তুলে বাঙালিদের বেশ কিছু দোকানে হামলা চালানো হয়। এ সময় রাস্তায় চলাচলকারী বাস, ট্রাক, ট্যাক্সিতেও হামলা করা হয়। শহরের হ্যাপির মোড়কে কেন্দ্র করে এর দুদিকে অবস্থান নেন পাহাড়ি ও বাঙালিরা।
এ সময় সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এই সংঘাতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক সাদিয়া আক্তার জানান, সংঘাতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ থেকে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া একজন মারা গেছেন। তবে তার নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
সকাল থেকে রাঙামাটিতে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনার পর পৌর এলাকায় বেলা ১টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান। তিনি বলেন, যেহেতু রাঙ্গামাটির পৌর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে এবং জনগণের জানমালের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেই কারণে শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়ার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এই আদেশ না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, রাঙামাটিতে সকালে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি হয়। শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি কাজ শুরু করেছে। খাগড়াছড়িতেও সতর্ক রয়েছে পুলিশ।
এদিকে আগুনে ফাইবার অপটিকের ক্যাবল পুড়ে যাওয়ায় শহরে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইয়েস নেটের পরিচালক মো. শাহীন।
বর্তমানে পাহাড়িদের মধ্যে আতঙ্ক ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দুই জেলার বিভিন্ন স্থানে উত্তেজিত পাহাড়ি লোকজন রাস্তায় গাছ কেটে এবং চেঙ্গী নদীর জন্য নির্মিত বøক ফেলে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। ফলে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এর আগে গত বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ি শহরের নোয়াপাড়ায় চুরির অভিযোগে মো. মামুন নামে এক যুবদল কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় বিএনপি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এ ঘটনা নিয়ে বুধবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাঙালি ও পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে অনেকটা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে দীঘিনালায় সংঘাত ঘটানোর উসকানি দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সবাইকে শান্ত থাকার আহŸান সরকারের : পার্বত্য ৩ জেলার সবাইকে শান্ত থাকার আহŸান জানিয়েছে অন্তর্র্বর্তী সরকার।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি ও শুক্রবার রাঙামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি ও পরে তার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান হামলা, আক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার গভীরভাবে দুঃখিত ও ব্যথিত।
সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসকারী সব জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর।
এতে বলা হয়, আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়া এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়া এবং যেকোনো সম্পত্তি ধ্বংস করা দÐনীয় ও গর্হিত অপরাধ। সহিংসতার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আর দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি খুব শিগগিরই গঠন করা হবে। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আজ শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শন করবেন।
প্রতিনিধিদলে থাকছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এবং প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে আইএসপিআরের অনুরোধ : তিন পার্বত্য জেলায় সংঘর্ষ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর)। সংঘর্ষের সূত্রপাত এবং বর্ণনা দিয়েছে আইএসপিআর। একই সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর। শুক্রবার আইএসপিআর জানায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল জনগণের গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) (পিতা মৃত নুর নবী) নামক একজন যুবক নিহত হন। পরবর্তীতে সদর থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধারপূর্বক ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দীঘিনালা কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফের (মূল) কতিপয় সন্ত্রাসী মিছিলের ওপর হামলা করে ও ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। আইএসপিআর আরো জানায়, সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের ছয়জন আহত হলে তাদের চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর টহলদল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার ব্রিগেড ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আগুন নেভায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশপাশের এলাকাগুলোতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
সেই সঙ্গে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরো উত্তেজনাকর করে তুলছে বলে দাবি করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে দ্রæততার সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়িসহ সব উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সব পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার পরামর্শ প্রদান করতে বলা হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আরো জানিয়েছে, একই রাতে (১৯ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহলদল সাড়ে ১০টায় একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে।
এক সময় ইউপিডিএফের (মূল) সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহলদলের সদস্যদের ওপর গুলি করে এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়।
একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনসাধারণ কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের ওপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। সেই সঙ্গে উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফের (মূল) নেতৃত্বে ফায়ার ব্রিগেডের অফিসে ভাঙচুর করে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কর্তৃক রাঙামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণ রাঙামাটি জিমনেশিয়াম এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় ৮০০-১০০০ জন উত্তেজিত জনসাধারণ একটি মিছিল বের করে বনরূপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয় এবং বনরূপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজি-অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে করে উভয় পক্ষের বেশ কিছু লোকজন আহত হয়। উ™‚¢ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। উপরোক্ত ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। অনতিবিলম্বে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
সহিংসতায় দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে : প্রধান উপদেষ্টা : তিন পার্বত্য জেলায় সবাইকে শান্ত থাকার আহŸান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সহিংসতার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।
শুক্রবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এসব কথা জানানো হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি ও পরবর্তী সময়ে তাঁর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান হামলা, আক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনায় সরকার গভীরভাবে দুঃখিত ও ব্যথিত। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসকারী জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিশ্চিতকরণে সরকার বদ্ধপরিকর।
আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়া এবং ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হওয়ার জন্য সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বার্তায় আরও বলা হয়েছে, আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়া এবং যে কোনো সম্পত্তি ধ্বংস করা দÐনীয় ও গর্হিত অপরাধ। সহিংসতার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত আর দায়ী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি শিগগিরই গঠন করা হবে। আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।