একদিনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো ৫টি মামলা দায়ের

7

কাজির বাজার ডেস্ক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি হত্যা ও আরেকটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালত খিলগাঁও থানার দুটি হত্যা মামলা এবং মুগদা থানার একটি হত্যাচেষ্টার মামলার আবেদনকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। এছাড়া ঢাকার সিনিয়ার জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত আশুলিয়া থানাকে একটি হত্যা মামলার আবেদন এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। বগুড়ায় নিহত দর্জি শ্রমিক শিমুল সরদার নিহতের ঘটনায় আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মুদি দোকানি হত্যা মামলায় হাসিনা-রেহানা-জয়-পুতুলসহ আসামি ৩১ জন : রাজধানীর বনশ্রীতে মুদি দোকানি মিজানুর রহমান গুলিতে নিহতের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বাবা কামাল হোসেন এ মামলা করেন।
মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন – ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জুনায়েদ আহমেদ পলক, শেখ ফজলে নূর তাপস, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, আমির হোসেন আমু, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, বিজিপির মহাপরিচালক, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাবিবুর রহমান, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, হারুন-অর-রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার, সাদ্দাম হোসেন এবং ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন।
শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে আশিকুল হত্যা মামলা : ১৪ বছরের কিশোর আশিকুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা করেছেন তার মা আরিশা আফরোজ। গত ১৯ জুলাই খিলগাঁও থানাধীন বনশ্রী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আশিক। মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- আসাদুজ্জামান খান কামাল, আব্দুল্লাহ আল মামুন, হারুন-অর-রশীদ, বিপ্লব বিশ্বাস।
শেখ হাসিনাসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী সজল হত্যা মামলা : আশুলিয়া থানার সামনে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ হোসেন সজলকে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ আগুন দিয়ে পোড়ানোর অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার ভাই মিজানুর রহমান। মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, হারুন অর রশীদ, বিপ্লব কুমার, হাবিবুর রহমান। মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনে সময় ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানাধীন বাইপাইলে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করছিলেন। সেই আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় এবং গ্রেফতার করে। ওই সময় সিটি ইউনিভার্সিটির বিএসসি (টেক্সটাইল) দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র মো. সাজ্জাদ হোসেন সজলকে (১৯) আটক করে থানায় নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের পর পুলিশ গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে তার মরদেহ ধ্বংস/গুম/নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে আরও অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন আশুলিয়া থানার সামনে রাস্তার ওপর রাখা পুলিশের ব্যবহৃত লেগুনায় থাকা সজলের মরদেহসহ অন্য ছাত্রদের মরদেহ পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
শেখ হাসিনাসহ ৫৯ জনের বিরুদ্ধে আইনজীবীকে হত্যাচেষ্টা মামলা : রাজধানীর মুগদায় আবদুল বাছেদ শামীম নামে এক আইনজীবীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনাসহ ৫৯ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আবদুল বাছেদ শামীম বাদী হয়ে মামলা করেন। আদালদ মুগদা থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এ মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ওবায়দুল কাদের, শেখ সেলিম, আসাদুজ্জামান খান কামাল, মাহাবুবুল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, নাজমুল হাসান পাপন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, বিপ্লব বড়ুয়া, আবদুস সোবহান গোলাপ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জুনায়েদ আহমেদ পলক, শেখ ফজলে শামস পরশ, মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, নায়ক ফেরদৌস আহমেদ, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, কাজী সালাউদ্দিন, ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসীম আহমেদ খান, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাবিবুর রহমান, ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন, শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, মাজহারুল কবীর শয়ন, তানভীর হাসান সৈকত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে সময় গত ১৮ জুলাই আদালতের কার্যক্রম শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন আবদুল বাছেদ শামীম। মানিকনগর পৌঁছালে আন্দোলনকারীদের ওপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হন আবদুল বাছেদ।
বগুড়ায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও এক হত্যা মামলা : বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত দর্জি শ্রমিক শিমুল সরদার নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ১৩৫ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বগুড়া সদর থানায় মামলাটি করেন নিহত শিমুলের স্ত্রী শিমু বেগম। মামলায় বগুড়ার তিন জন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ইনডিপেনডেন্ট টিভির উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি হাসিবুর রহমান বিলু, দৈনিক জনকণ্ঠের বগুড়া প্রতিনিধি মাহামুদুল আলম নয়ন ও দৈনিক কালেরকণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি জে এম রউফ। মামলায় ১৩৫ জনের নাম উল্লেসহ অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০-৪০০ জনকে।
মামলায় বলা হয়, গত ৪ আগষ্ট দুপুরে শহরের ঝাউতলা এলাকায় ছাত্র-জনতার একদফার আন্দোলনে এসে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শিমুল মÐল মতি। তিনি শহরের দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়ার দর্জি শ্রমিক ছিলেন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ মামলার বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বগুড়ায় এর আগে আরও পাঁচটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে চারটি হত্যা এবং একটি হত্যাচেষ্টার মামলা।