ভার্থখলা মসজিদের মোতাওয়াল্লীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

1

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেট নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভার্থখলা জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব না দিয়ে অর্থ তছরুপের অভিযোগ ওঠেছে। কমিটির অন্য সদস্যদের উপেক্ষা করে একক রাজত্ব ও আয়ের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছেন তিনি। বুধবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন পঞ্চায়েত ও এলাকাবাসী।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘ভার্থখলা জামে মসজিদ ওয়াকফ এস্টেট এর সম্পত্তি এবং পঞ্চায়েত সদস্যদের প্রস্তাবে পাঁচ সদস্যের কমিটি দ্বারা মসজিদ পরিচালিত হয়। ২০০৩ সালে ভার্থখলার বাসিন্দা মিছবাহ উদ্দিন আহমদকে মসজিদের মোতাওয়াল্লীর দায়িত্ব দেন এলাকাবাসী। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করছেন। অন্য সদস্যদের পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো করে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।’
বক্তব্যে পঞ্চায়েত সদস্যরা আরও বলেন, ‘প্রতি বছর সাধারণ সভা করে সবার সামনে বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার কথা থাকলেও বিগত ২২ বছরে একবারও তিনি তা করেননি। মসজিদ মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দানের টাকার হিসাব উপস্থাপনের পাশাপাশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রাখার কথা। তিনি তা করছেন না। এমনকি, প্রায় সাত মাস অসুস্থ থাকাবস্থায় কমিটির অন্য সদস্যদের উপেক্ষা করে তিনি নিজের ছেলেকে দিয়ে মসজিদ পরিচালনা করিয়েছেন।’
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘ভার্থখলা জামে মসজিদ একটি ওয়াকফ এস্টেট সম্পত্তি যার ইসি নম্বর ১২৫১০। আয়ের দিক থেকে মসজিদটি নগরের অন্য কয়েকটি মসজিদের মধ্যে একটি। যে কারণে এই মসজিদের আর্থিক উন্নতির দিকে নজর পড়েছে একটি মহলের। তারা মসজিদের আর্থিক আয়কে নিজেদের আয়-উন্নতির উপলক্ষ্য করে ঘাপটি মেরে বসে আছেন।’
এ অবস্থায় মোতাওয়াল্লীর অপসারণের দাবি তুলেছেন ভার্থখলা এলাকাবাসী ও পঞ্চায়েত সদস্যরা। এ দাবিতে ইতোমধ্যে ঢাকার ইস্কাটন রোডে অবস্থিত ওয়াকফ এস্টেট এর ওয়াকফ প্রশাসকসহ সিলেটের প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছেন বলে জানান তারা। এর আগে, মোতাওয়াল্লী মিছবাহ উদ্দিনের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে কমিটির তিন জন সদস্য পদত্যাগ করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওয়াকফ প্রশাসন মোতাওয়াল্লীর কাছে কারণ দর্শানোর চিঠি দিলেও তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। সবকিছু উপেক্ষা করে তিনি এখনও মোতাওয়াল্লীর পদ আঁকড়ে রাখতে মরিয়া। গত ৭ মে মসজিদ কমিটির জীবিত তিন সদস্য আব্দুল আহাদ, আব্দুল কাহার চৌধুরী (মঈন) এবং শাহ মুজিবুর রহমান (জাহাঙ্গির) অব্যাহতিপত্র জমা দেন। মোতাওয়াল্লীর অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তারা ভার্থখলা জামে মসজিদ কমিটি থেকে অব্যাহতি নেন বলে উল্লেখ করেন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ‘মিছবাহ উদ্দিন আহমদ মসজিদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি প্রতিবছর মসজিদের দোকানকোঠার ভাড়া, দানবাক্সের আয়, প্রতি জুমআর দান, কোয়ার্টার ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতের আয়ের হিসাব না দিয়ে নিজের মতো করে তছরুপ করছেন। পঞ্চায়েতের কোনো মতামতকে তিনি পাত্তা দিচ্ছেন না। মূলত- অর্থের লোভে তিনি এ পদ আঁকড়ে ধরে আছেন।’ সম্প্রতি পঞ্চায়েত সদস্যরা মসজিদের দানবাক্স ও জুমআ দিনের দানের টাকা একত্রিত করে এক মাসে ৬০ হাজার টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেন। বছরে বিভিন্ন খাত থেকে অন্তত ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা আয় হয় বলে তারা জানান।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে মসজিদ মার্কেটের দোকানের মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত লাখ লাখ টাকা তার পকেটে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে বছরে কয়েক লাখ টাকা তার পকেটে যাচ্ছে এবং তিনি ব্যক্তিস্বার্থে টাকা খরচ করে যাচ্ছেন।’এ অবস্থায় গত ১৭ মে মসজিদের ২য় তলায় ভার্থখলা পঞ্চায়েতের মিছবাহ উদ্দিনসহ ভার্থখলা পঞ্চায়েতের অর্থাৎ, এলাকার প্রায় ২৫০-৩০০ মুসল্লির উপস্থিতি ও সবার সম্মতিতে পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে রেজুলেশনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অনুমোদনের জন্য ওয়াকফ এস্টেট প্রশাসক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। মিছবাহ উদ্দিন আহমদকে অপসারণ ও নতুন কমিটি দ্রæত অনুমোদনের জন্য ওয়াকফ এস্টেটের প্রতি জোর দাবি জানান এলাকাবাসী। একইসাথে মিছবাহ উদ্দিনের দায়িত্ব পালনকালে মসজিদের অর্থ তছরুপের তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আহŸান জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভার্থখলা স্বর্ণালী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম সাহেদ। উপস্থিত ছিলেন ভার্থখলা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি হাজী মখলিছুর রহমান, সহসভাপতি মির্জা মকবুল বেগ, লায়েক আহমদ, আব্দুল হানিফ নানু, আল এহতেশামুল হক মান্না, আহমদুল কবির মামুন, আব্দুল বাছির বাদল, মকসুদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক এম সিরাজ উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক এম এন ইসলাম, মসজিদ কমিটির সদস্য আব্দুল আহাদ, আবুল কাহের চৌধুরী মঈন, শাহ মুজিবুর রহমান জাহাঙ্গীর, পঞ্চায়েত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর সামছুল পাবলো, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাই শ্যামল, নির্বাহী সদস্য হুমায়ুন কবির, সদস্য দুলাল আহমদ, বাদল আহমদ, মিন্টু খান, বেলাল আহমদ চৌধুরী ওয়েছ, মির্জা আব্দুল কাদির বেগ, মির্জা আব্দুল জলিল বেগ, মহিউদ্দিন ধারা একলাছুর রহমান সুমন, আল আমিন রাজু, সৈয়দ মাহদী হাসান, আব্দুল আলিম, আদনান ফেরদৌস বর্ষা প্রমুখ।