ধীর গতিতে নামছে বন্যার পানি : ২৮ জুন থেকে সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা- জেলা প্রশাসক

23

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটে সাড়ে ৮ লাখ মানুষ এখন পর্যন্ত পানিবন্দী। ধীর গতিতে নামছে বন্যার পানি। এছাড়া এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে সিলেটের দুটি নদীর পানি ৪ পয়েন্টে।
এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণের সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা। একই সাথে বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে নলক‚প। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যা কবলিত এলাকায় রয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিচ্ছে। তবে বানভাসীদের দাবি যা দেয়া হচ্ছে-তা চাহিদার তুলনায় কম।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র রবিবার দুপুরে জানায়, এ পর্যন্ত সিলেটে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৭ জন বন্যা কবলিত। এর মধ্যে মহানগরে ১৫ হাজার। বর্তমানে মহানগরীর ৮টি ওয়ার্ড জেলার ১০৭টি ইউনিয়নে বন্যার পানি রয়েছে। সিলেটে বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ১৯ হাজার ৭৩৮ জন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। পৌঁছানো হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধপত্র।
তিন দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সিলেট মহানগরীরও বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামছে। তবে অনেক নিচু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি থেকে পুরোপুরি পানি নামেনি এখনো। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লোকালয় থেকে পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বসতবাড়িতে ফিরছেন বাসিন্দারা। তবে যারা বাড়ি ফিরেছেন তারা পোহাচ্ছেন নানা ভোগান্তি।
বন্যার্তরা জানিয়েছেন, পানি কমার সাথে সাথে দুর্ভোগও বাড়ছে বাসিন্দাদের। অনেক জায়গায় বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। রান্না-বান্নায়ও কষ্ট হচ্ছে বন্যার্তনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যা কবলিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাব। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যেসব ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় কম। বিশুদ্ধ পানির সংকটও রয়েছে এলাকাগুলোতে। গবাদি পশুর খাবার নিয়েও বিপাকে রয়েছেন অনেকে। টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন ফের বন্যায় কবলিত হয় সিলেট।
ঈদুল আযহার দিন ১৭ জুন ভোররাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরীর অনেক এলাকা। পুরো জেলায় বিস্তৃতি ঘটে বন্যার। সোমবার বিকেলে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কিছুটা কমে পানি। কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ফলে হু হু করে বাড়তে থাকে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি। এ অবস্থা চলমান থাকে পরবর্তী ৩ দিন। একপর্যায়ে সিলেটজুড়ে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১০ লাখে। তবে গত তিন দিন ধরে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র রবিবার বিকেল ৩টায় জানিয়েছে, এ সময় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। তবে এ নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে রয়েছে বিপৎসীমার নিচে। একই সময়ে কুশিয়ার নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৯ ও শেরপুর পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে, সিলেটে গত দুদিন উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। তবে আগামী ২ দিন সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বন্যার পানি ধীরে নামার কারণ হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন- ফেঞ্চুগঞ্জের উজানে রয়েছে জুড়ী নদী। এছাড়া মনু নদীও কুশিয়ারার শেরপুরে এসে যুক্ত হয়েছে। ফলে কুশিয়ারা নদীর পানি নামছে ধীর গতিতে। তাছাড়া ডাউন-স্ট্রিম এর প্রায় সব এলাকা প্লাবিত। এটাও বন্যার পানি ধীর গতিতে নামার একটি কারণ। তবে বৃষ্টিপাত না হলে ও সিলেট অঞ্চলে প্রতিদিন রোদ হলে বন্যার পানি কমা অব্যাহত থাকবে।
সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে আগামী ২৮ জুন থেকে সিলেট অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন- গত শুক্রবার থেকে কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় ঘণ্টায় ৬শ’ লিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।