বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ও পানিতে ডুবে শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু

9

স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ও পানিতে ডুবে শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার সিলেট নগরী, জৈন্তাপুর, জগন্নাথপুর ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
নগরীঃ সিলেটে বন্যার পানিতে গোসল করতে নেমে এক স্কুলছাত্র মারা গেছে। শুক্রবার বেলা ১টার দিকে মহানগরীর শাহপরান থানার ৩১ ওয়ার্ডেরর মুক্তিরচক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত অভি (১৭) স্থানীয় একটি স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩১ ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল হোসেন জানান, বেলা ১টার দিকে মুক্তিরচক কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশের একটি খালে গোসল করতে নেমে ৮ম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস তাকে উদ্ধার করে।
সিলেট তালতলা ফায়ার সার্ভিসের লিডার শহিদুন ইসলাম জানান, পানিতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয় স্কুলছাত্র। ফায়ার সার্ভিসের টিম স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে।
জগন্নাথপুরঃ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ঘাস কাটতে গিয়ে ঢলের স্রোতে ডুবে রুহুল আমিন (৩৭) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২০ জুন বিকেলে উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের সাতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রুহুল আমিন সাতা গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামের হাওরে ছেলে ইয়াছিনকে সঙ্গে নিয়ে গরুর জন্য ঘাস কাটতে যান কৃষক রুহুল আমিন। পরে ঘাস কাটা অবস্থায় হঠ্যাৎ করে নৌকা থেকে বন্যার পানির স্রোতে পড়ে ডুবে যান ওই কৃষক। এসময় তার ছেলে ইয়াছিনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ওই কৃষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক কৃষককে মৃত ঘোষণা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক তাজুল ইসলাম বলেন, ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তিনি হাসপাতালে আসার আগেই মারা যান।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, রুহুল আমিন শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় পানি থেকে উঠতে পারেননি। কারো কোন অভিযাগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জৈন্তাপুরঃ জৈন্তাপুর উপজেলায় পৃথক দুইটি ঘটনায় পুকুড়ের পানি ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দুইটি ঘটনাই ঘটেছে উপজেলার ৪ নং দরবস্ত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত একটি করগ্রামে অপরটি বারইকান্দি গ্রামে। নিহত এক শিশু ১৯ মাস বয়সী হাবিবুর রহমান ইমন। ইমন দরবস্ত ডাইয়া গ্রামের বিলাল আহমেদের ছেলে। অপরজন হলেন ১৩ মাস বয়সী মানহা আনজুম সাফা। মানহার বাবা দরবস্ত বারইকান্দি গ্রামের আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে রফিকুল ইসলাম রকি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০শে জুন বৃহস্পতিবার দরবস্ত ডাইয়া গ্রামের মৃত তজুম্মুল আলির ছেলে বিলাল আহমেদের স্ত্রী মারজিয়া বেগম তার ১৯ মাস বয়সী পুত্র সন্তান ইমনকে নিয়ে দুপুর ১২ টার দিকে বিলালের বোনের বাড়ী করগ্রামে আসেন। দুপুরে ইমনের মা ফুফু ঘরে বসে গল্প করার এক পর্যায়ে ইমন তার ফুফুর বাড়ী নিজ মালিকানাধীন পূর্ব পাশের পুকুরে সবার অজান্তে পড়ে যায়। এর ঘন্টা খানেকের মধ্যে ইমনকে না পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এক পর্যায়ে ইমনের নিথর দেহ পুকুড়ের পানিতে ভেসে উঠলে তাকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ে আসা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরিক্ষা করে শিশু ইমনকে মৃত ঘোষনা করেন।
অপর এক ঘটনায় একই ইউনিয়নের বারইকান্দি গ্রামের আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে রফিকুল ইসলাম রকির ১৩ মাস বসয়ী কন্যাশিশু মানহা আনজুম সাফা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সকলের অজান্তে বাড়ীর পশ্চিমে থাকা পুকুড়ে পড়ে যায়। এক পর্যায়ে মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে গাড়ীতে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে একইদিনে পুকুড়ে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম পিপিএম। তিনি বলেন, পৃথকভাবে দুইটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই সাথে তিনি বন্যা মৌসুম হওয়ায় উপজেলার সকল অভিভাবকদের তাদের শিশুদের বিশেষ করে যারা নতুন হাঁটা শিখেছে তাদের হাতের নাগালে রাখা সহ বাড়তি সর্তকতা অবলম্বনের আহবান জানিয়েছেন।
হবিগঞ্জঃ হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার একটি হাওরের মধ্যে বানিয়াচংয়ের এক কলেজ ছাত্র বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু বরণ করার খবর পাওয়া গেছে। নিহত কলেজ ছাত্র হলো বানিয়াচং উপজেলার ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আড়িয়া মুগুর গ্রামের জশদূর দাসের পুত্র সবুজ দাস(২০)।
শুক্রবার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে বানিয়াচং আদর্শ বাজার নৌকাঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর বাজারে যাওয়ার মধ্যে পথে জিলুয়া চক বাজার নামক স্হানের হাওরের মধ্যে অসাবধানতা বসত সবুজ দাস নৌকার উপর থেকে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে পানিতে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিক নৌকার অন্যান্য লোকজন পানি থেকে সবুজ দাসকে উদ্ধার করে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সবুজ দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের পরিবারের লোকজন তাদের সন্তানের পোস্ট মর্টেম না করিয়ে লাশটি নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলেও খবর পাওয়া যায়।
এদিকে নিহত সবুজ দাসের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর কলেজের এইচএসসির ১ম বর্ষে লেখাপড়া অধ্যায়নরত ছিলো। সবুজের পরিবার তাদের নৌকা দিয়ে বানিয়াচং আদর্শ বাজার নৌকাঘাট থেকে আজমিরীগঞ্জের পাহাড়পুর বাজারে লাইনের যাত্রী পারাপার করতেন। পরিবারের সহযোগীতার জন্য সবুজ দাস নৌকা নিয়ে যাত্রী পারাপার করতে গিয়েছিলো আজ।
বানিয়াচং আদর্শ বাজার নৌকাঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে আজমিরীগঞ্জ পাহাড়পুরের উদ্যেশে নৌকাটি ছেড়ে ঝিলুয়া চকবাজার এলাকার হাওরের মধ্যে অসাবধানতার কারণে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে প্রান হারায়। সবুজ দাসের মৃত্যুতে পরিবারের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।