কাজির বাজার ডেস্ক
স্বাস্থ্যসেবাকে ডিজিটাল করার পাশাপাশি আরো বেশি রোগীবান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এক কার্ডেই থাকবে রোগীর বিস্তÍারিত তথ্য। চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, রোগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকবে সেখানে। অনলাইনেই সব তথ্য থাকায় হেলথ কার্ডের নম্বর দিলেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট চলে যাবে রোগীর ই-মেইলে। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই রোগীরা হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন। তাই হাসপাতালে গেলে বইতে হবে না কোনো বাড়তি কাগজপত্র। সেই কার্ডটি সঙ্গে রাখলেই চলবে। সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (এমআইএস) বাস্তবায়িত এই প্রকল্প খুব শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যেই পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি হাসপাতালে এই কার্ড ও কার্ডের মাধ্যমে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা চালু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, সবার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড করার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এর আগেও কাজ করেছে। দাতাদের অর্থায়নে করা ওইসব প্রকল্প সফল হয়নি। এবার জাতীয় পরিচয়পত্রকে সংযুক্ত করে কার্ডের কাজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো। এই উদ্যোগ সফল হলে প্রত্যেকের একটা ইউনিক আইডি থাকবে। রোগী দেশের যে হাসপাতালেই যান না কেন ওই কার্ড দিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয়ের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ সরকার যেভাবে কাজটি করতে চাইছে তাতে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হবে। সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য কার্ডের জন্য আলাদা ওয়েবসাইট হবে। সেই ওয়েবসাইটে অনলাইনে নিবন্ধন করে স্বাস্থ্য কার্ড পাওয়া যাবে। তবে যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না; তারা অনুমোদিত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নিবন্ধন করাতে পারবেন। নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা ১৮ বছরের কম বয়সিদের জন্য জন্ম নিবন্ধনের অনুলিপি নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। হাসপাতালের নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে বিনামূল্যে এই কার্ড করা যাবে। প্রতিটি নাগরিকের একটি নিজস্ব হেলথ আইডি নম্বর থাকবে। স্বাস্থ্য কার্ডের আওতায় আসা একজন রোগীর ‘জন্ম থেকে মৃত্যু’ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবার সব তথ্য ডিজিটাল ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা থাকবে। এ কাজের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে অটোমেশনের কাজ আগেই শুরু হয়েছে। যেসব বেসরকারি হাসপাতাল নিজস্ব অটোমেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করছে, তারা তাদের সফটওয়্যারকে ‘শেয়ারড হেলথ রেকর্ডসের’ সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবেন। যেসব বেসরকারি হাসপাতালের নিজস্ব সফটওয়্যার নেই এবং নতুন কোনো সফটওয়্যার তৈরি করতে চাচ্ছে না, তাদের সংযুক্ত করতে একটি সফটওয়্যার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের জন্য নির্বাচন কমিশন এবং জন্ম নিবন্ধনের জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায়। পুরো প্রকল্প পঞ্চম সেক্টর প্রোগ্রামের আওতায় বাস্তবায়ন হবে। বর্তমানে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এবং ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের সব সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে রোগীদের হেলথ আইডি প্রদান কার্যক্রমের পাইলটিং শুরু হয়েছে।