অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রার ভয়াবহতা আমলে নিতে হবে

38

 

উন্নত জীবনের আশায় অবৈধ পথে বিদেশ গমনের বিষয়টি বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না, অবৈধ পথে বিদেশ গমনে নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ভ‚মধ্যসাগরের লিবিয়া উপক‚ল থেকে এক অপ্রাপ্তবয়স্কসহ ৩০ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে ফরাসি দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের (এমএসএফ) উদ্ধারকারী জাহাজ জিও ব্যারেন্টস। তথ্য মতে, গত ৩ নভেম্বর এসব অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইউরোপে অভিবাসন সংক্রান্ত সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস। এমনটিও জানা গেছে যে, শুক্রবার রাতে লিবিয়া উপক‚লের আন্তর্জাতিক জলসীমায় উদ্ধার অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। ওই সময় একটি মোটরচালিত নৌকায় ঝুঁকিতে থাকা ৩০ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে জিও ব্যারেন্টস জাহাজে তোলা হয়।
আমরা বলতে চাই, অবৈধ পথে বিদেশ গমন কতটা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগেও নানা সময়ে অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ভয়াবহতা সামনে এসেছে। যেখানে দালালদের খপ্পরে পড়ে নিশ্চিত বিপদ জেনেও ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় ইউরোপের পথে পা বাড়ায় অনেকে। এছাড়া সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার ঘটনা ঘটেছে অনেকেরই। মৃত্যুর চ্যালেঞ্জ নিয়ে অনেকে সাগরে ডুবেও মারা যাচ্ছেন, আর যারা ভাগ্যগুণে বেঁচে যান, তাদের ঠাঁই হয় জেলের অন্ধকার খুপড়িতে।
আমরা মনে করি, এবারে যখন ভ‚মধ্যসাগরের লিবিয়া উপক‚ল থেকে এক অপ্রাপ্তবয়স্কসহ ৩০ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে ফরাসি দাতব্য সংস্থা- তখন এটা এড়ানো যাবে না। বিষয়টি বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে, এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্মর্তব্য যে, অভাবের তাড়নায় কিংবা পরিবারে নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে, উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে নারী-পুরুষ ও শিশু বিভিন্ন দেশে পাচারের শিকার হচ্ছে এমন বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। বিশেষ করে দালালদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে একের পর এক মানুষ। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সাগর পথে পাড়ি দেওয়া বা অবৈধ পথে নিয়ে যাওয়ার নামে মানব পাচারের ঘটনা রোধে উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, বিভিন্ন দেশে মানব পাচারের ঘটনাতেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশ। ফলে এই উৎকণ্ঠাজনক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা জরুরি।
এটাও আমলে নেওয়া দরকার, করোনা মহামারিতে যখন সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল প্রায় প্রতিটি দেশ। তখন কঠোর কড়াকড়িকেও পাত্তা দিচ্ছে না। না দিয়ে দালালদের প্রতারণায় অবৈধ পথে ইউরোপে অভিবাসনের স্বপ্নে অনেকেই পা বাড়িয়েছিল। মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ভ‚মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টায় বাংলাদেশিদের নাম বারবার সামনে এসেছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়।
আমরা বলতে চাই, অবৈধ পথে বিদেশ গমনে নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। এছাড়া বলার অপেক্ষা রাখে না, মানব পাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যার নাম। গরিব দেশগুলো এ সমস্যার নিত্যকার শিকার। বাংলাদেশের মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। অভাবের তাড়নায় কিংবা পরিবারে নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে, উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে নারী-পুরুষ ও শিশু মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে দালালদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে একের পর এক মানুষ। উন্নত জীবনসহ নানা ধরনের ভালো চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের পাচার করার পর তাদের জীবনে নেমে আসছে করুণ পরিণতি। কারো কারো লাশ মিলছে, কারো আবার খোঁজও পাওয়া যায় না। সঙ্গত কারণেই এই পরিস্থিতির ভয়াবহতা আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রার ভয়াবহতা আমলে নিতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। দালালদের খপ্পরে যেন সাধারণ মানুষ না পরে, সেটাও আমলে নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, মানব পাচার একটি জঘন্য অপরাধ। এ ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করার পাশপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও উদ্যোগ নিতে হবে। অবৈধপথে বিদেশ গমনের ভয়াবহতা আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।