নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও সড়ক দুর্ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রকাশিত রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মাসিক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন অনুযায়ী গত জুন মাসে দেশের সড়কে ৫৫৯টি দুর্ঘটনায় ৫১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ৮১২ জন। জুন মাসে গড়ে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তার আগে মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন মারা গেছে ১৩ জন। মে মাসে সারা দেশের সড়কে ৪৯১টি দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৪০৮ জন। মে মাসের তুলনায় জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে ৩১ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের মধ্যে নারী ৭৮ জন এবং শিশু ১১৪ জন।
২০৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৯ জন নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ৩২.৭৫ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৯৯ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৯.১৮ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছে ৭৬ জন, যা মোট নিহতের ১৪.৭২ শতাংশ। কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
নতুন আইন হয়েছে। ডিভাইডার বসানো হয়েছে। তার পরও সড়ক দুর্ঘটনা থেমে নেই। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। কত পরিবার যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।
ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক, মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনগণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, মহাসড়কে ছোট যানবাহন চলাচল এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
দেশের সড়ক-মহাসড়কে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাÐও বলা যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় মূল্যবান প্রাণহানিকে শুধু দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার কোনো কারণও নেই। অনেক দুর্ঘটনাই চালকের ভুলে ঘটে থাকে। অনেক চালক রাত-দিন গাড়ি চালান। অত্যধিক ক্লান্তি এবং গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়।
আমরা কোনো মতেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। প্রতিদিনের এই মৃত্যুও কাম্য নয়। যেকোনো মূল্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। সড়কে নজরদারি জোরদার করতে হবে।