লবিস্ট ইস্যুতে রাজনীতির ময়দান সরগরম

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
লবিস্ট ইস্যুর বিতর্ক নিয়ে রাজনীতির ময়দান এখন সরগরম। লবিস্ট রাজনীতি এতই উত্তাপ ছড়াচ্ছে যে, এখন এটাই যেন টক অব দি কান্ট্রি। হঠাৎ করেই দমকা হাওয়ার মতোই রাজনীতির হাওয়া পরিবর্তন হয়ে লবিস্ট রাজনীতিতে মোড় নিয়েছে। লবিস্ট নিয়ে উঠেছে বহু প্রশ্ন। এসব প্রশ্ন উত্থাপন করেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদ। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি রাজনীতির বিতর্ক মাঠের উত্তাপ ছাড়িয়ে এখন সংসদের ভেতরেও। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী একে অপরকে লবিস্ট নিয়োগ করে কোটি কোটি টাকা বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগের বিষয়ই লবিস্ট রাজনীতির মোড় নিয়েছে।
সরকারের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনাটির পরই লবিস্ট রাজনীতির বিতর্ক রাজনীতির আলোচনায় সরব ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন রাজনীতিবিদগণ। এরপর লবিস্ট রাজনীতির পালে হাওয়া লাগে র‌্যাবকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার চিঠি। র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিতে ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বরাবর ইভান স্টেফানেকের চিঠি দেয়ার ঘটনা লবিস্ট নিয়োগে কে কত টাকা খরচ করেছে তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। হঠাৎ রাজনীতির হাওয়া পরিবর্তন লবিস্ট নিয়ে উঠার কারণে বহু প্রশ্ন ঠেকেছে দেশীয় অস্তিত্বে। লবিস্ট ইস্যুতে সম্পৃক্ততার বিষয়ে চোখ রাখছে দেশের মানুষও।
দেশে লবিস্ট বিতর্কে গরম হাওয়া তৈরি হয়েছে নেট দুনিয়ায়। বিরোধী রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিও সরকার নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছে। বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতে সারাদেশে দুই দফা কর্মসূচী পালন করেছে। অতীতের মতো কোন বাধা আসেনি। এখন দৃশ্যপটে হঠাৎ রাজনীতিতে সামনে আসে লবিস্ট বিতর্ক। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করে দেশের ক্ষতি করছে, তিন বছরে লবিস্টে বিএনপি ৩২ কোটি টাকা খরচ করেছে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, ক্ষমতাসীন দল ২০১৪ সাল থেকে লবিস্ট নিয়োগ করে আসছে, প্রতিবছর খরচ ৩০ কোটি টাকা। এ নিয়ে মুখ খুলেছে জাতীয় পার্টিও। তারা বলছে, এই লবিস্ট কার স্বার্থে ? সরকার যদি লবিস্ট নিয়োগ করে থাকে তাহলে সেটি রাষ্ট্রীয় টাকা কি-না ? আবার বিএনপি যদি লবিস্ট নিয়োগ করে থাকে তারা টাকা কোত্থেকে পেল ? দেশের মানুষ এবং আমরাও জানতে চাই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি আসলে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছে কি-না ?
গত ১৭ জানুয়ারি সংসদে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দাবি করেন, তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি লবিস্ট ফার্মের পেছনে বিএনপি দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে কত টাকা খরচ করেছে তার হিসাব সরকারের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম লবিস্ট ‘এ্যালক্যাডে এ্যান্ড ফো’-কে নিয়োগ দেন ২০০৪ সালের ২৯ নবেম্বর, যা কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ২০০৫ থেকে। এই লবিস্ট ফার্মকে চুক্তি স্বাক্ষরকারী হিসেবে মাসে ৩০ হাজার ডলার হিসাবে সাড়ে ১২ লাখ ডলার অর্থাৎ ১০ কোটি টাকার বেশি দিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ নিয়ে আরও বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সুশাসন ও দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তির কথা তুলে ধরার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করেছিল। আপনার-আমার মধ্যে ঝগড়া থাকতে পারে কিন্তু আপনার-আমার ঝগড়ায় যখন দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেয়া হয় তখন খুবই দুঃখজনক। আওয়ামী লীগ সুশাসন এবং দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তির কথা তুলে ধরার জন্য লবিস্ট নিয়োগ করেছিল। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি যাতে না হয়… তারা যখন লবিস্ট নিয়োগ করেছিল এদের শাস্তি হবে না। তখনও আওয়ামী লীগ সেই ভুল ধারণা বদলাতে আমরা বলি এটা পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছিল সরকার। এগুলো অনেকদিন ধরেই আছে, নতুন না। এরশাদের সময় থেকেই এগুলো প্রচলিত আছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেন এ মামলায় অভিযুক্ত মীর কাসেম আলী। ওই ফার্মকে ২৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ২১২ কোটি টাকা) পরিশোধ করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করা হয়ে গেছে। কিন্তু এ অর্থের উৎস এখনও জানতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। কে বা কারা অর্থ পরিশোধ করেছে, বাংলাদেশ থেকে কোন প্রক্রিয়ায় পাচার হয়েছে- এসব বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।