কাজির বাজার ডেস্ক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে দেশের রাজনীতি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার দূরত্ব ঘোচাতে দুই পক্ষকে আবারও সংলাপের তাগিদ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, এমন সম্ভাবনা থাকলেও নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে অনড় অবস্থানে দেশের প্রধান বড় দুই রাজনৈতিক দল। ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এদিকে, মাত্র সাড়ে ৫ মাস বাকি থাকলেও দেশজুড়ে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতির আভাস পাওয়া গেলেও মাঠের বিরোধী দল ব্যস্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েই।
এদিকে, বিগত সময়ে নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই আগ্রহী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণার চিত্রের সঙ্গে দেশের মানুষ পরিচিত। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেষ ঈদ হয় প্রার্থীদের প্রস্তুতির অন্যতম উপলক্ষ। কিন্তু এবার সেই চিত্র তেমন দেখা যায়নি। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঈদ উৎসবের মধ্যে তাদের নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগটি কাজে লাগান। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের প্রেক্ষিতে, ছুটির দিনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় প্রস্তুতি স্বাভাবিক ছিল। কারণ এই ঈদেই প্রার্থীরা তাদের বেশিরভাগ ভোটারের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুশলাদি বিনিময় করতেন। কিন্তু এবার ঈদে সেই চিরচেনা দৃশ্য অধিকাংশ এলাকায় দেখা যায়নি। শুধু কিছু রেকর্ড করা ভয়েস মেসেজ ও পোস্টারের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত সময়গুলো তুলনায় এবার আগ্রহী প্রার্থীদের ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা ছিল নগণ্য।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় আগামী দিনে কী হবে- তা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আছে। নির্বাচন হবে কি না, না হলে দেশে কী হবে- সর্বত্রই এমন আলোচনা। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকার অলিগলির চায়ের দোকান, হাট কিংবা ঘাটে, অফিস-আদালতে, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ সর্বত্রই আলোচনা- কী হবে আগামী দিনে। নির্দিষ্ট সময়ে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না। না হলে রাজপথে কি ফের সংঘাত হবে কিংবা জ্বালাও-পোড়াও হবে কিনা- তা নিয়েও ভাবনা আছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা ছিল- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর নানামুখী চাপে সংলাপের সম্ভাবনা তৈরি হবে। কিন্তু বিদেশি চাপের পর বড় দুই দলের দূরত্ব আরও বেড়েছে। এ ইস্যুতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে ব্যস্ত তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠের প্রস্তুতি এখনো শুরু না করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে গণসংযোগ করবে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচনের জন্য দলের ইশতেহার তৈরির কাজও চলছে। এই লক্ষ্যে সারা দেশে আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলোয় স্থাপন করা হচ্ছে স্মার্ট কর্নার। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। তবে আওয়ামী লীগ তৃণমূলের সব শাখার সম্মেলন সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠন গোছানোর জন্য কঠোর নির্দেশনা দেন। সর্বশেষ গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি বলেন, অক্টোবর থেকেই নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হবে। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হবে। দলীয় সংসদ সদস্যদের ঢাকায় না থেকে নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
অন্যদিকে, বিএনপি আন্দোলনকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি আদায়কে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় প্রস্তুতি হিসেবে বিবেচনা করছে দলটি। আন্দোলন সফল করতে সাংগঠনিক সব শক্তিকে কাজে লাগাতে চায় তারা। এর অংশ হিসেবে যে যেখানে আছে সবার কাছে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, নিষ্ক্রিয় থাকার দিন শেষ, সক্রিয় হতে হবে সবাইকে। এক দফার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার আগে সব অঙ্গ-সহযোগী ও সমর্থিত সংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি দিয়ে সবাইকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ঈদুল আজহায় এক দফা আন্দোলনের সেই বার্তা তৃণমূলে পৌঁছানোর নির্দেশনা ছিল দলের হাইকমান্ডের। সঙ্গত কারণে নেতারা নির্বাচনের জন্য নয়, আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের জন্য এই দল সবসময় প্রস্তুত। কিন্তু সেই নির্বাচন হতে হবে অবাধ সুষ্ঠুু, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে প্রহণযোগ্য। তেমন নির্বাচন হতে পারে একমাত্র নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে। সেজন্য এই দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে। সেই আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত হয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করেই নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বিএনপি।
জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করেছে বিএনপি। চলতি মাসেই ঘোষণা হতে পারে সরকার পতনের এক দফা। সেই আন্দোলনে রাজপথে নামতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।