সামাজিক মাধ্যম কি গতির মধ্যে দুর্গতি

7

যেকোনো গণমাধ্যমকে সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হবে, তা পত্রিকা হোক, টিভি বা রেডিও হোক। একই সঙ্গে এসব গণমাধ্যম ও আজকাল দর্শক-শ্রোতা হারাচ্ছে। অনলাইনের জয়জয়কার অব্যাহত গতিতে চলছে, চলবেও। সামাজিক মাধ্যম বা নিউ মিডিয়ার যে দোর্দÐ প্রতাপ, তা ভালো-মন্দের বিবেচনায় না রেখে ব্যবহারকারীদের মগ্নতা এবং তাদের এনগেজমেন্টের বিষয়টিকে আজ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন। সামাজিক মাধ্যম যেভাবে মানুষের মনোজগতের ওপর দখল নিয়েছে এবং গভীর প্রভাব ফেলছে, তাতে এখন যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো কনটেন্টের বৈচিত্র্য ও ইন্টার‌্যাক্টিভ কনটেন্টের ওপর জোর দিচ্ছে। তাতে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা সফলতার মুখ দেখছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অ্যালগরিদম কম্পিউটারে নেট ব্যবহারকারীদের পছন্দ-অপছন্দকে শ্রেণিভুক্ত করে আজকাল ধাপে ধাপে নতুন চাহিদা তৈরি করে দেয়, তাদের পছন্দগুলোকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিন্যস্ত করে এগিয়ে দেয়। যেমন একজন নেট ব্যবহারকারী কোনো বিষয়ে কথা বলছে কিংবা মেসেজ দিচ্ছে, সেখানে ‘কি ওয়ার্ড’গুলো অনুসরণ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যালগরিদম সেই নেট ব্যবহারকারীকে সাজেশন দিচ্ছে। কোনো পণ্য বা কোনো সেবা তার লাগবে কি না, তা তুলে ধরছে। বন্ধু নির্বাচনে ব্যক্তিবিশেষের বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করে দিচ্ছে। নেট ব্যবহারকারীর মন বুঝে তাকে সহায়তা করছে। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নিজের অধিকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যালগরিদমের দাসে পরিণত হচ্ছে। সমাজ ও দেশের প্রতি নাগরিক অধিকার বাস্তবায়নের যে ভ‚মিকা, তা-ও কার্যকর করা যাচ্ছে না। সমাজ যেন বৃত্তাবস্থায় তার নিজের একটি বলয় তৈরি করে ফেলছে, যেখানে সময়ের গতিময়তায় নতুন নতুন সৃষ্টি এবং সৃজনশীলতার স্বাক্ষর না রেখে সে নিজেই একটি স্থবির সমাজব্যবস্থা তৈরি করছে। অবশ্য সবাই এই গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেবে না। ব্যতিক্রম তো আছেই।
নিউ মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে তার অডিয়েন্সকে নানা ধরনের সার্ভিস দিচ্ছে। সেবা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার সঙ্গে সন্তুষ্টি প্রদান করা এবং তার বিনিময়ে তার মূল্যমান আদায় করে ব্যবসা নিশ্চিত করছে। নারী-পুরুষের বিভিন্ন বয়স, পেশা, নেশা, ভালো লাগা, মন্দ লাগা, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন এসব প্রবণতা সার্বক্ষণিক ট্র্যাক করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অ্যালগরিদম কাজ করে এমন পর্যায়ে যাচ্ছে যে সামাজিক মাধ্যমে লেগে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব কিংবা গোপনীয় আর কিছু অবশিষ্ট থাকছে না। ব্যবহারকারীর মনের অভ্যন্তরে এসে এক জাদুকরী ডিমান্ড তৈরি করছে, যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হিসেবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাকে প্রলোভন দেখিয়ে সরবরাহ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর আগে মানুষের মনের কথা প্রকাশ কিংবা কারও সঙ্গে শেয়ার করার এত বেশি সুযোগ ছিল না। গণমাধ্যমে কনটেন্ট পরিবেশনকারী নির্দিষ্টসংখ্যক সাংবাদিক/লেখক/শিল্পীর মধ্যে তাঁদের যোগাযোগ সীমিত ছিল। সাংবাদিক তথা অন্যরা যা ভালো মনে করেন শুধু তা-ই উপস্থাপন করেন, কালে-ভদ্রে দু-একজন দর্শক-শ্রোতা-পাঠক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চিঠি লিখে বা ফোন করে তাঁদের মতামত জানান।
ইন্টারনেট এবং আধুনিক প্রযুক্তি সব সীমারেখা পেরিয়ে ‘মাল্টিডিরেকশনাল’ বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ করে। কোনো ব্যক্তি যেকোনো স্থান থেকে বিশ্বের অন্য যেকোনো প্রান্তে তার মনের কথা ব্যক্ত কিংবা মতপ্রকাশ করে চলেছে তার পরিচিত কিংবা অপরিচিত মানুষের কাছে। কখনো কখনো সেগুলো শুধু মতামত নয়, প্রেরণাদায়ক এবং সচেতনতামূলক কিংবা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণমূলক। কখনো আবার নিরেট বিনোদনধর্মী। বিনোদন কিংবা নির্মল আনন্দ দেওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যম যথেষ্ট অবদান রাখছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও ব্যবহার নিশ্চিতভাবে মানুষকে সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।