স্কুল পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিকৃতি, বানান ভুল, লেখা পরিবর্তন, পরিমার্জন ইত্যাদি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা নতুন কিছু নয়। এসব কারণে ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিকৃতি ও বাক্য গঠনের ভুলগুলো শুধু অদক্ষতাই নয়, এটি অমার্জনীয় অপরাধ। নানামুখী চাপে গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের অসঙ্গতি, ভুল-ত্রæটি চিহ্নিত করে সুপারিশ দিতে গত ৩১ জানুয়ারি ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরবর্তী এক মাসের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও মাসপূর্তির আগেই কমিটি পাল্টে ৮ সদস্যের নতুন আরেকটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ২৬ মার্চ কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের সময় রয়েছে। কিন্তু এখনো সংশোধনী কী হবে, তা ঠিক করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পাঠ্যবই সংশোধনীসংক্রান্ত এই জটিলতা শঙ্কাজনক। সংশোধনের নামে এত দীর্ঘ সময় চলে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। শিক্ষার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়া এবং তার অবসান না হওয়া খুবই দুঃখজনক। এর ফলে পাঠ্যবই সংশোধন নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিশেষ করে প্রথমবার গঠিত কমিটির কর্মপরিকল্পনায় বলা ছিল ষষ্ঠ ও সপ্তমের সবকটি পাঠ্যবই সংশোধন। কিন্তু আগের কমিটি বাদ দিয়ে গঠিত দ্বিতীয় কমিটির কর্মপরিকল্পনা নির্ধারিত তিনটি বই সংশোধনীর কথা বলা হয়েছে। আমরা চাই, চ‚ড়ান্ত গুরুত্ব দিয়ে দ্রæততার সঙ্গে সুষ্ঠু ও নির্ভুল সংশোধনী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হোক। প্রণীত পাঠ্যবই প্রত্যাহারের মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়া স্বস্তিদায়ক নয়। একটি বই পড়তে শুরু করার পর সেটি বাদ দেয়ায় বিভ্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই গাফিলতির দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। নতুন শিক্ষাক্রমে ছাপানো পাঠ্যপুস্তকে ভুল হলো কেন? শিক্ষাক্রমের ভুল-ভ্রান্তির জন্য এনসিটিবির কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার মেরুদÐ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। এর আগেও স্কুল পাঠ্যবইতে ভুলের ছড়াছড়ি হয়েছে। কৌশলে হয়েছে তথ্য বিকৃতি। বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিপরীতে দেশের যাত্রা। রাজনীতি থেকে শুরু করে শিক্ষা, সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন আনার চেষ্টা হয়। পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িক চিন্তা ও বিকৃত ইতিহাসের অনুপ্রবেশের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মগজ ধোলাই চলে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পাঠ্যবইয়ে যে পরিবর্তন করে সেই পরিবর্তন এই খাতে স্মরণকালের মধ্যে বড় সংস্কার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এ সময় পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তুলে ধরা হয়। কিন্তু আমরা দেখছি, ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর কোনো না কোনো বইতে ভুল ও বিকৃতি দেখা যায়। এর দায় কার? এনসিটিবির দায়িত্ব কী? নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। আমাদের সন্তানদের প্রকৃত ইতিহাস ও সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পাঠ্যবই বিকৃতি ও ভুলের নেপথ্যে যারা যুক্ত তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। একদিকে ভুল-ত্রæটি, বিকৃতি অপরদিকে সংশোধনী নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা- এসব জটিলতা শিক্ষার্থীদের কষ্টের কারণ না হোক। পাঠ্যবইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভুল-ভ্রান্তি ও বিকৃতি যেন কোনোভাবেই আর না থাকে সে বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সচেতনতা আমরা আশা করি।