সড়ক যোগাযোগ আশানুরূপ নয়। মহাসড়কগুলোর বেশির ভাগ নাজুক, স্থানে স্থানে যানজটেও পড়তে হয়। এসব কারণে দূরের যাত্রায় ব্যাপক ভোগান্তি সইতে হয়। অন্যদিকে রেলপথে যানস্বল্পতা প্রকট। সেই পথেও সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। ফলে ভোগান্তি এড়াতে ও সময় বাঁচাতে সামর্থ্যবান অনেক মানুষই আকাশপথ বেছে নিচ্ছে। এই বিমানযাত্রীদের বেশির ভাগের, বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রধান অবলম্বন বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনস। তিনটি বেসরকারি বিমান সংস্থাও রয়েছে। গত ২২ বছরে ১০টি দেশি বেসরকারি এয়ারলাইনস চালু হলেও এখন টিকে আছে মাত্র তিনটি। তার পরও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী দ্রুত বাড়ছে। প্রতিযোগিতাজনিত কারণে ভাড়া কমায় অনেকেই এ পথে যাতায়াতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। অভ্যন্তরীণ রুটে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৬৪.৭৩ শতাংশ যাত্রী বেড়েছে। আর আন্তর্জাতিক রুটে একই সময়ে যাত্রী বেড়েছে ২২.১০ শতাংশ। যাত্রী বৃদ্ধিতে বেসরকারি সংস্থাগুলোর অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। বিমান পরিবহনের এই বিষয়গুলো অবশ্যই আশাব্যঞ্জক।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩১টি বিদেশি এয়ারলাইনস ৩৭টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এ ছাড়া দেশি এয়ারলাইনস বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা ও রিজেন্ট এয়ার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বছরে ৬০ লাখের বেশি যাত্রী বিমানে যাতায়াত করছে। বিমান পরিবহনের প্রসারের এ চিত্র সন্তোষজনক হলেও এ ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। আকাশপথে নিরাপত্তাব্যবস্থা এখনো জোরালো নয়। পাইলটরা কাক্সিক্ষত সম্মানী ও সুবিধা পান না, যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তায় বেসরকারি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ উদাসীন, যান্ত্রিক বা কারিগরি সমস্যার সঙ্গে আপস করা হয়, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে চলাচলে বাধ্য করা হয়, খরচ বাঁচানোর জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং লগে বা গ্রাউন্ডিংয়ে যেতে দেওয়া হয় না, অভ্যন্তরীণ রুটের বিমানবন্দরগুলোর রানওয়েসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নত নয়, অধিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ আমদানিতে জটিলতা, বেসরকারি বিমান কম্পানিগুলোর জন্য হ্যাঙ্গারের অভাব প্রভৃতি অভিযোগ রয়েছে। নীতিগত সুযোগ-সুবিধাও কম। ফলে বিদেশি এয়ারলাইনসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দেশি বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর টিকে থাকা খুবই কঠিন। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতে আধুনিক অনেক ব্যবস্থাই নেই। আকাশপথে যাতায়াতের বিষয়ে যে আগ্রহ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে সেটিকে ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকতে হবে। সময়ের চাহিদা পূরণের জন্য এ পথ নিরাপদ করে তোলার বিকল্প নেই। যাত্রী নিরাপত্তার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন জরুরি। সম্প্রসারিত এই পরিবহনব্যবস্থার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হলে বিভিন্ন অবকাঠামো ও কারিগরি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। উড়োজাহাজ কেনার জন্য অর্থায়নের সুদের হার কমানোর কথা ভাবা যেতে পারে। এয়ারপোর্ট চার্জ, যন্ত্রাংশ আমদানি, রক্ষণাবেক্ষণ, হ্যাঙ্গার এসব নিয়েও ভাবা উচিত। পর্যাপ্ত নীতি সহায়তাও দিতে হবে। সম্ভাবনার যে দ্বার উন্মোচিত হয়েছে তাকে আগলে রাখার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকার যথাযথ মনোযোগ দেবে এটিই আমাদের আশা।