‘একমাস ধইর‌্যা আওড়ের মাছ দেখিনা, খাইমু কই থাইক্যা’

22

বাবরুল হাসান বাবলু, তাহিরপুর

একমাস ধইরা আওরের মাছই দেখিনা খাইমু কই থাইক্যা। পত্তিদিন ঘুম থাইক্যা উইট্যা মাছ বাজারও আই কিন্তু আওরের মাছ আর মিলে না। এর ভিৎরে একদিন চাষের কারপো মাছ নিছলাম বাড়িত পোলাপাইন সহ কেউ খায না, তাই চাষের মাছও নেই না। পিদল ডিম আর ডাইলের উপরেই আপাদত ভরসা। রতনশ্রী গ্রামের সোহানুর রহমান সোহাগ, তার বাড়ির উত্তর দিকে লাগোয়া মাটিয়ান হাওর, দক্ষিন দিকে বৌলাই নদী, নদীর দক্ষিন পারে তাহিরপুর সদর মাছ বাজার। বাড়িতে বসেই তিনি খোজ খবর পান মাছ বাজারের তবুও প্রতিদিন তিনি সকাল বেলা দেশী মাছের আশায় বাজারে আসেন গত এক মাস ধরে। কিন্তু দেশী মাছ না পেয়ে প্রতিদিন তিনি ফিরে যান। এর মধ্যে তিনি একদিন চাষের মাছ নিয়েছেন কিন্তু পরিবারের কেউ এ মাছ খেতে চায়নি। তাই তিনি এখন চেপা শুটকি সহ ডিম ডাল ও সবজিকে বেচে নিয়েছেন হাওড়ের মাছের বিকল্প হিসেবে। রবিবার সকালে মাছ বাজারে গিয়ে দেশী মাছ খুজতেই আক্ষেপ প্রকাশ কওে কথাগুলো তিনি বলেছেন এক বাক্যে।
শুধু সোহানুর রহমান সোহাগ নয়। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাহিরপুর উপজেলার সর্বত্রই। কোন হাটবাজারে আর পাওয়া যাচ্ছে না দেশী মাছ। ফলে অনেকে বাদ্য হয়ে বাজার থেকে কিনে নিচ্ছেন পুকুরের চাষকৃত মাছ।
হাওরপারের ক্রেতা সাধারণ ও বিভিন্ন সুধী মহলের মতামত অপিরিকল্পিত মাছ আহরণ, কৃষি জমিতে রিফিট, বিল সেচ দিয়ে মাছ ধারা, জলাশয় কিংবা বিলে হাসের খামার, প্রজনন মৌসুমে পোনামাছ নিধন, রিংছাই সহ বিভিন্ন অবৈধ জাল দিয়ে মাছের পোনা সহ মাছের অভয়াশ্রম নষ্ট কওের ফেলার কারণে হাওড়ে দেশী মাছের সংকট দেখা দিয়েছে চরমভাবে। বিগত বছরগুলোতে এ সংকট প্রবল না হলেও এবার এ সংকট চোখে পড়েছে বাজারে মাছ কিনতে আসা ক্রেতা সাধারণ লোকজনদের।
দেশের রামাসার সাইট টাঙ্গুয়া হাওর শনি, মাটিয়ান, মহালিয়, ফানা, গলগলিয়া সহ ২৩ টি ছোট বড় হাওর রয়েছে তাহিরপুর উপজেলায়। ২৩ ছোট ছাট বড় হাওরে অসংখ্য বিল জলাশয় রয়েছে সেই সাথে যাদুকাটা, রক্তি, পাঠলাই, বৌলাই সহ বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত হয়েছে এ উপজেলার ভেতর দিয় কিন্তু গত এক মাস ধরে এ হাওর উপজেলার কোন বাজারেই মিলছে না নদী কিংবা হাওড়ের মাছ।
তাহিরপুর বাজার মাছ ব্যাবসায়ী উজান জামালগড় গ্রামের শামছু মিয়া বলেন, গত একমাস ধরে চাষের মাছ বিক্রি করছি দেশী কোন মাছই বাজারে আসছে না। তার মতে কিছুটা বৃষ্টি হলে তখন কিছু মাছ পাওয়া যেতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানান যায়, উপজেলার তাহিরপুর, আনোয়ারপুর, বাদাঘাট, কাউকান্দি, শ্রীপুর, বালিয়াঘাট বাজার সহ একাধিক বাজারে বর্তমানে কোন দেশী প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাহিরপুর সদ থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে শ্রীপুর দক্ষিন ইউনিয়নের সোলেমানপুর বাজাওে পাঠলাই নদীর ঘাটে নাম মাত্র দেশী মাছ জেলেরা নিয়ে আসছেন বিক্রির জন্য। মাছের আড়ৎদারদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকার নেয়ার কারণে তাদেরকে মাছ দিয়ে দিতে হচ্ছে। ফলে সে মাছও দেখছেন না সোলেমানপুর বাজারের ক্রেতা সাধারণ।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, কোন বাজারেই দেশী মাছ মিলছে না। এ বছর হাওড়ের বিল জলাশয় ফিশিং শেষ হাবার পর থেকেই দেশী মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। বর্ষার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত এ সংকট চলামন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি ধারনা করছেন।
তাহিরপুর পুর উপজেলা মৎস্য অফিসার মো.ই্উসুফ আলী বলেন, হাওড় বিল বা জলাশয়ে পানি কমে যাওয়ায় দেশী প্রজাতির মাছ কমেছে। বৃষ্টি বাদল হলে মাছ কিছুটা বাড়বে। দেশী প্রজাতির পোনা মাছ নিধনকারী অসাধু মৎস্য শিকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।