ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অনলাইন বাণিজ্য বা ই-কমার্সের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় মানুষ এখন ঘরে বসেই কেনাকাটা করছে, নানা রকম সেবা পাচ্ছে। সারা পৃথিবীতেই অনলাইন কেনাকাটা দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও অনলাইন বাণিজ্য বা ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কিন্তু যে হারে ই-কমার্স বেড়েছে, সেই হারে নজরদারি বাড়েনি। শুরুতে ই-কমার্সের আলাদা কোনো নীতিমালা ছিল না। পরে একটি নীতিমালা হয়েছে। কিন্তু তার যথাযথ বাস্তবায়ন ছিল না। আর এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির প্রতারকচক্র গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার অভিযোগে কিছু প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় আনা হয়।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ই-কমার্স কম্পানির লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত লাখো গ্রাহকের পাওনা প্রায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা ফেরত পাওয়া প্রায় অনিশ্চিত। ১৩টি কম্পানির কাছ থেকে গ্রাহকরা আংশিক টাকা ফেরত পেলেও ১৪টি কম্পানি কোনো টাকাই দেয়নি। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়ার সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল বলছে, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অন্যদিকে প্রতারিত গ্রাহকের তথ্য দিতে কম্পানিগুলো সহযোগিতা করছে না। এতে বিপুল অঙ্কের ওই টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ই-কমার্স খাতে যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে বা যাদের কাছে মার্চেন্ট ও ভোক্তারা টাকা পাবে, তাদের কাছে দুই ধরনের অর্থ রয়েছে। একটি হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) বা নির্দেশিকা হওয়ার আগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যাওয়া অর্থ। সেই অর্থ দেওয়ার জন্য সরকার চেষ্টা করছে। তাদের মধ্যে যাদের ব্যবসা চালু হবে, তারা ব্যাবসায়িক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নজরদারিতে থেকে গ্রাহকের অর্থ পরিশোধ করবে। অন্যদিকে আর যাদের ব্যবসা আইন ভঙ্গ করার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের বিষয়ে প্রচলিত আইনে সরকার বা আদালত আলাদা সিদ্ধান্ত দেবেন। যাদের অর্থ পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে, তাদের ক্ষেত্রে তালিকা ও অভিযোগ যাচাই করে টাকা পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করছে বলে খবরে প্রকাশ।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অভিযোগ ওঠা কম্পানির কেউ কেউ আগেই দেশ ছেড়েছেন, কেউ বা গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে। মামলায় পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও অনেককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাওয়ার পরও আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে আসছেন।
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক কর্মকা-ের কারণে সামগ্রিকভাবে ই-কমার্সের ওপর থেকে মানুষের আস্থা কমে গেছে, তা বলার অপেক্ষা রখে না। সেই আস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা নিতে হবে।