পরিবহন শ্রমিক নেতা জয়নাল হত্যা মামলা ॥ ২ জনের আমৃত্যু ও ৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

24

স্টাফ রিপোর্টার :
জৈন্তাপুরে সিলেট জেলা অটোটেম্পু চালক শ্রমিক ইউনিয়নের দরবস্ত শাখার কোষাধ্যক্ষ ক্যারীক্যাব গাড়ী চালক জয়নাল আবেদীন হত্যা মামলায় ২ জনের আমৃত্যু কারাদন্ড ও ৯ জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং একজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল রবিবার বিকেলে সিলেটের অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো: ইব্রাহিম মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন। গতকাল ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আমৃত্যু দন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছে, জৈন্তাপুর থানার করগ্রামের মৃত ছয়ফুল আজম পাটোয়ারীর পুত্র মামুন আহমদ (৩২) ও একই থানার মানিকপাড়ার আব্দুস সাত্তারের পুত্র কবির আহমদ (৪০)।
যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে, জৈন্তাপুর থানার করগ্রামের মৃত ছয়ফুল আজম পটোয়ারীর পুত্র তরিকুল ইসলাম (৩৫), তার ভাই আখলাকুল আম্মিয়া (৪৫), একই থানার চাল্লাইন গ্রামের মুজম্মিল আলীর পুত্র আলী আহমদ উরফে আলী (২৯), একই গ্রামের মৃত আছদ আলীর পুত্র জিয়াউর রহমান (৩৬), উপর মহাইল গ্রামের মঈন উদ্দিনের পুত্র আলীম উদ্দিন (২৬), চাল্লাইন গ্রামের মোহাম্মদ আলীর পুত্র জমির উদ্দিন (৪১), করগ্রামের নূরুল হকের পুত্র সুহেল আহমদ (২৪), খলাগ্রামের আফতাফ হোসেনের পুত্র ইশবাল আহমদ (২২) ও উপর মহাইল গ্রামের মাহমুদ আলীর পুত্র রাহিন আহমদ (৩০)। এবং খালাসপ্রাপ্ত হচ্ছেন, জৈন্তাপুর থানার করগ্রামের মৃত ছয়ফুল আজম পাটোয়ারীর পুত্র ও আমৃৃত্যু কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামী মামুন আহমদের ভাই মুহিবুল হক (৩৮)। এদের মধ্যে ৭ আসামী পলাতক থাকলেও বাকি আসামীরা কারাগারে রয়েছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, সিলেট জেলা অটোটেম্পু চালক শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং ১৩২৬ এর অর্ন্তভূক্ত দরবস্ত শাখা সিলেট অটোটেম্পু চালক শ্রমিক ইউনিয়নের নব নির্বাচিত কমিটির কোষাধ্যক্ষ হন ক্যারীক্যাব গাড়ী চালক জয়নাল আবেদীন (৩৩)। এ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টার দিকে দরবস্ত অটোটেম্পু চালক শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস কক্ষে আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দলবদ্ধ হয়ে দেশীয় দা, রুল, চাকু ও রড ইত্যাদি দিয়ে জয়নাল আবেদীনকে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে গুরুতর ও রক্তাক্ত আহত ও অফিস কক্ষের আসবাবপত্র তছনছ ও ভাংচুর করে। পরে জয়নাল আবেদীনের মৃত্যু হয়েছে ভেবে আসামীরা তামাবিল সড়কের পশ্চিম পাশের্^ একটি সো-মিলের সামনে রাস্তার পাশে ফেলে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন জয়নাল আবেদীনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে ১১ টার দিকে জয়নাল আবেদীন মৃত্যু বরণ করেন। এ ঘটনায় নিহত জয়নাল আবেদীনের পিতা জৈন্তাপুর থানার দরবস্ত ফান্দু গ্রামের মো: মনোফর আলী বাদি হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনকে আসামী করে জৈন্তাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং ৪ (৬-০৯-২০১৪)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে জৈন্তাপুর থানার এসআই সুশান্ত পাল ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ ১২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-৩৬) দাখিল করেন। এবং ২০১৬ সালের ১০ আগষ্ট আদালত এ মামলার বিচারকায্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল আদালত ৩০২ ও ৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আসামীদের বিরুদ্ধে উল্লেখিত রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট রঞ্জিত চন্দ্র সরকার ও আসামীপক্ষে এডভোকেট লুৎফুর কিবরিয়া শামীম মামলাটি পরিচালনা করেন।