মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি’র অন্তর্গত এককালিন নগদ অর্থ সহায়তার কার্ড বিতরণে চা শ্রমিকদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্য ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট ইউনিয়নের খাইছড়া চা বাগানের নাট মন্দিরে ভুক্তভোগী চা শ্রমিকরা জড়ো হয়ে ইউপি সদস্য দয়াল বুনার্জী ও তার ছেলে মনিশংকর বুনার্জীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
সমাবেশে সবিতা বাড়াইক, বিপুল ভুইঁয়া ও হারুনসহ ১০-১২ জন ভুক্তভোগী চা শ্রমিক জানান, ‘দয়াল মেম্বারের ছেলে তাদেরকে বলে, ‘আইডি কার্ড যে সমাজসেবা অফিসে দিছো টাকার জন্য। সরকার থেকে তোমাদের টাকা আইছে, ৫ হাজার টাকা। এখন ৩০০ টাকা দেও, আমি কার্ড দিচ্ছি।’ তখন তারা বলেন, ৩০০ টাকা কোথা থেকে দিবেন। তখন মেম্বারের ছেলে বলে, টাকা না দিলে তোমরা মেম্বারের কাছে যাইবা, আর ৩০০ টাকা নিয়ে যাইবা। পরে ৩০০ টাকা দেওয়ার পর তাদেরকে কার্ড দিছে মেম্বার দয়াল বুনার্জী।’
ভুক্তভোগী চা শ্রমিকরা আরও জানান, ‘রাতে ঘরে ঘরে গিয়ে মেম্বারের ছেলে জানায়- তোমাদের ৫ হাজার টাকার কার্ড আইছে, তোমরা ৩০০ টাকা করে না দিলে কার্ড পাইবায় না। ৩০০ টাকা দিতে হবে। তখন মেম্বারের কাছে গেলে, মেম্বার বলে এখন কার্ড দেওয়া যাবে না। এটা আমি ঘরে পৌঁছাবো। তারপর অনেকেই তিন-চার ঘর থেকে ঋণ করে ৩০০ টাকা এনে দেওয়ার পর আমাদের কার্ড দেয় মেম্বার।
ভুক্তভোগীরা জানায়, টাকা না দিলে কার্ড দেবে না তাই বাধ্য হয়ে ৩০০ টাকা দিয়ে তারা কার্ড নিয়েছেন।’
সমাবেশে খাইছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি পুস্প দাস পাইনকা বলেন, ‘দুইদিন আগে সমাজসেবা থেকে কার্ড আসার পর চেয়ারম্যান কার্ড পাঠাইছে মেম্বারের কাছে। চেয়ারম্যান-মেম্বারকে বলছে- পঞ্চায়েত সভাপতি ও সর্দারকে দিয়ে তুমি কার্ড বিতরণ করবে। কিন্তু মেম্বার দয়াল বুনার্জী আমাদেরকে বলেনি। না বলেই কার্ড বিতরণ করছে। সন্ধ্যার পর হঠাৎ মেম্বার আমাকে রস্তায় পেয়ে জানায় যে, সরকার থেকে শ্রমিকদের এককালিন ৫ হাজার টাকার কার্ড আসছে, আমি বিতরণ করছি। কিন্তু বিতরণের পর জানতে পেরেছি, যে কার্ড দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে বাড়তি টাকা নিচ্ছে দয়াল মেম্বারের ছেলে মনিশংকর বুনার্জী। কার্ডটা নেও টাকা দেও, টাকা না দিলে কার্ড দেব না। ৫ হাজার টাকা পাওয়ার আগে যে, আরও সে ৩০০ টাকা করে নিচ্ছে এর কারণটা বুঝতে চাই?’
টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য দয়াল বুনার্জী বলেন, ‘আমি সব ছেলেদেরকে ডেকে জানতে চেয়েছি তারা কেনো টাকা নিছে, তখন তারা বলছে মন্দিরের জন্য নিছে। কার্ড দিয়ে টাকা নেওয়ার কোন যুক্তি নেই। আমি বাগানের মুরুব্বি ও পঞ্চায়েত কমিটিকে নিয়ে বসবো, ছেলেগুলা যে টাকা উত্তোলন করেছে তার একটা সঠিক সমাধান করবো।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, ‘চা শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে উপহার স্বরুপ এই টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই ৫ হাজার টাকা চা শ্রমিকদের জন্য বিশাল টাকা। এই টাকা বিতরণের ক্ষেত্রে যদি কার্ডের জন্য টাকা নেওয়া হয় তাহলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।