নগরীতে পরিবহন শ্রমিকদের ৩ ঘন্টা অরাজকতা ॥ রাস্তায় হঠাৎ যান দাঁড় করিয়ে সড়ক অবরোধ ॥ চরম জনভোগান্তি

2
দক্ষিণ সুরমায় পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধ। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার  :
ঘোষনা ছাড়াই হঠাৎ সিলেটে শ্রমিক নেতাদের পাল্টাপাল্টি মামলা প্রত্যাহার ও এসএমপি কমিশনারের অপসারণের দাবিতে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা নগরীর সব কয়টি প্রবেশদ্বারে সড়কের মধ্যখানে যানবাহন দাঁড় করিয়ে আন্দোলন চালান। আন্দোলনকালে শ্রমিকরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রশাসনের সাথে বৈঠকের ৩ ঘন্টা পর শ্রমিক নেতারা তাদের অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে এ বৈঠক শেষে রাত সোয়া ১০টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়। এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে হুমায়ুন রশিদ চত্বরের একটি স্থানে বসেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ, উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) সোহেল রেজা ও দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি কামরুল হাসান তালুকদার। বৈঠকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা শ্রমিক নেতাদের দাবি মানার আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। বৈঠকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা শ্রমিক নেতাদের দাবি মানার আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে আন্দোলনের কারণে সিলেট শহরে কোনো ধরনের যানবাহন প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে প্রতিটি সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে শতশত গাড়ি আটকা পরে। দূরপাল্লার বাসসহ সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

চৌহাট্টা পয়েন্টে পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধ। ছবি- মামুন হোসেন

এদিকে, রাত ৮টায় নগরীর শাহজালাল উপশহর পয়েন্ট, শাহী ঈদগাহ, বালুচর, টিলাগড়, হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বর, সিলেট-সুনামগঞ্জী সড়ক, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের প্রবেশদ্বার সামাদ আজাদ চত্ত্বর (চন্ডিপুল)সহ বিভিন্ন মোড়ে পরিবহন শ্রমিকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। এ সময় তারা রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সবধরণের যান চলাচল। এতে সবকটি সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। আর আচমকা এমন কর্মসূচীতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী সাধারণরা।
জানা যায়- গত ১৪ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ সুরমা থানায় মারপিট ও টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে লেগুনা শ্রমিক মো. সাহাব উদ্দিন বাদি হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম (৫৫), সিএনজি অপটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ (৫২), হিউম্যান হুলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রুনু মিয়া মইন (৫৭), দক্ষিণ সুরমা পিরোজপুর গ্রামরে আওলাদ মিয়া (৫৬) সহ অজ্ঞাত ৩৫/৩৫ জনকে আসামি করে মামলা ( নং-১৬, তাং-১৪/০৯/২২) দায়ের করেন।
অপরদিকে বেআইনী জনতাবদ্ধে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে গুরুতর জখম করত: হুমকী প্রদর্শন করা ও হুকুম দানের অপরাধ এনে একই দিন দক্ষিন সুরমা থানায় পাল্টা মামলাটি (নং-১৩) করেন দক্ষিণ সুরমা পিরোজপুর গ্রামের আওলাদ মিয়া। এ মামলার আসামীরা হচ্ছে- এয়ারপোর্ট থানার ইউনুছ আহমদ (৫০), জালালাবাদ থানার টুকেরগাঁওয়ের মোরাদ হোসেন (৩৮), নগরীর কাজিটুলার জীবন চৌধুরী (৩৫), নগরীর শাহী ঈদগাহের বাসিন্দা মো: মর্তুজ আলী আবাহনী (৪৫), এয়ারপোর্ট থানার বরশালার জুবের আহমদ (৩৫) ও জৈন্তাপুর থানার চিকনাগুল কয়াইখরের মো: শাহাব উদ্দিন (৩৭)।
মামলা দায়ের’র ৮ দিন পর বিষয়টি নজরে আসে শ্রমিক নেতাদের। পরে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার নিশারুল আরিফের সঙ্গে দেখা করতে যান শ্রমিক নেতারা। এসময় পুলিশ কমিশনার তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এর প্রেক্ষিতে গতকাল রাতে আন্দোলনে নেমেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা সিলেট শহরের সবকয়টি রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন। এসময় রাস্তার মধ্যখানে যানবাহন দাঁড় করিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেন পরিবহন শ্রমিকরা। এছাড়াও টায়ার জ্বালিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেন তারা। এসময় মামলা প্রত্যাহার, এসমএমপি কমিশনারের অপসারণের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্লোগান দিতে দেখা গেছে তাদের।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন- ‘আমাদের নামে মামলা হয়েছে জেনে কিছু শ্রমিক নেতা এসএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন। এসময় তিনি তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন। যা আমাদের শ্রমিকরা মেনে নেয়নি। তারা বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পরেছে। মামলা প্রত্যাহার ও এসএমপি কমিশনারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চলমান থাকবে। তিনি আরও বলেন- যিনি আমাদের নামে মামলা করেছেন তাকে আগেই শ্রমিক সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই কারণে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের নামে চাঁদাবাজি ছিনতাইয়ের অভিযোগে মিথ্যে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল রাতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের পর বৈঠকে প্রশাসনের শ্রমিক নেতাদের দাবি মানার আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।