গভীর সংকট চেপে রেখেছিল রাজাপাকসে সরকার

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বৈদেশিক ঋণের ভারে ডুবতে বসা ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা এখন সংকটের উদাহরণ। স্মরণকালের যে ভয়াবহ পরিণতি দেশটিতে দেখা গেছে তা নিয়ে বিশ্লেষকরা নানা মন্তব্য জানিয়েছেন। তবে এবার ভিন্ন সুর তুললেন দেশটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে। ঋণের ভারে দেশটির অর্থনীতি যে ভেঙ্গে পড়ছে সেই সত্য এতদিন গোতাবায়া রাজাপকসে সরকার গোপন করেছিলেন। সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন রনিল।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা ‘দেউলিয়া’ হয়ে পড়েছে। সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে যাওয়া প্রয়োজন। এই সত্যটি গোপন করেছে বিক্ষোভে উৎখাত হওয়া শ্রীলঙ্কার সাবেক নেতা গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকার।
বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নেমে যাওয়ায় খাদ্য ও জ্বালানির মত জরুরি রসদ আমদানিও অসম্ভব হয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কার জন্য। ব্যাপক মূল্যস্ফীতি কঠিন করে তুলেছে জীবন। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক মাস ধরে গোতাবায়ার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে দেশটির জনগণ। ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে গত সপ্তাহে দেশ ছেড়ে পালিয়ে মালদ্বীপ চলে যায় গোতাবায়া। সেখান থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সে চড়ে সিঙ্গাপুর পাড়ি জমান তিনি। সিঙ্গাপুর থেকে গত শুক্রবার নিজের পদত্যাগপত্র পাঠান। পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে তার পদত্যাগ গ্রহণ করে। ওইদিনই দুপুরে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
সোমবার দেশের প্রশাসনিক রাজধানী জয়াবর্ধনেপুরা কোট্টের পার্লামেন্ট থেকে সিএনএনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি জানি তারা কতটা কষ্ট পাচ্ছে। আমরা পিছিয়ে গেছি। নিজেদের যা আছে তা দিয়েই আমরা আবার নিজেদের টেনে তুলতে চাই।
দেশকে অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থায় ফেরানোর প্রত্যয় জানিয়ে এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের পাঁচ বছর বা ১০ বছরের প্রয়োজন নেই। চলুন, আগামী বছরের শেষ নাগাদ আবার স্থিতিশীলতায় ফিরতে শুরু করি, আর ২০২৪ সালের মধ্যে একটি কার্যকর অর্থনীতি গড়ে তুলি, যা বাড়তে শুরু করবে।’
ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমবার তিনি কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন। তিনি আরো দাবি করেন, গোতাবায়া এখন সিঙ্গাপুরেই অবস্থান করছেন নাকি অন্যত্র চলে গেছেন তা তিনি জানেন না।
আজ নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে ভোট হবে শ্রীলঙ্কায়। তাতে প্রার্থী হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহেও। ছয়বারের এই প্রধানমন্ত্রী কোনোবারই তার ক্ষমতার পূর্ণ মেয়াদ পার করতে পারেননি। অপরদিকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন বিরোধি দলের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা। মঙ্গলবার পার্লামেন্টে তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন।
তবে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায়না লঙ্কানরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, রনিলকে গোতাবায়া প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছিল। তার সঙ্গে রনিলের সম্পর্কের কারণে জনরোষের মুখেও পড়তে হয়েছিল যখন স্পিকার তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে। গত সপ্তাহে গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বিক্রমাসিংহের ব্যক্তিগত বাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ঢুকে তার পদত্যাগের দাবি জানায়।