সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কামাল আহমদ ॥ নিজেদের অপকর্ম ঢেকে রাখতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে

4
সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওসমানীনগর উপজেলার রাউতখাই গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো: কামাল আহমদ।

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার রাউতখাই গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী কামাল আহমদ অভিযোগ করেছেন তার বিরুদ্ধে একটি দখলবাজ ও সন্ত্রাসী চক্র অপপ্রচার চালাচ্ছে। মনগড়া ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালিয়ে ওই চক্র নিজেদের ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে প্রবাসী কামাল বলেন, সম্প্রতি ওসমানীনগরে সংবাদ সম্মেলন করে একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য পরিবেশন করেছে। মূলত তাদের দখলবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আড়াল করতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।’ তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বালাগঞ্জের তাজপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার ইকবাল হোসেন মোস্তাক সংবাদ সম্মেলন করে আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তারা আমার বাসাবাড়ি দখল করতে নানাভাবে হয়রানি ও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব অভিযোগের জবাব দিয়ে কামাল আহমদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে বালাগঞ্জ থানার মজলিসপুর গ্রামের মো. সাজিদ আলীর পুত্র আব্দুল খালিকের বাসা দখলচেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আব্দুল খালিকই দীর্ঘদিন থেকে আমার বাসা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার সহযোগী হিসেবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত ইকবাল হোসেন মোস্তাক। তিনি আরও বলেন, এলাকায় পুলিশের আইজি পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্মের অভিযোগটিও সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং হাস্যকর বটে। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। পুলিশের কোনো সদস্য নই। সেখানে আইজি পরিচয় দেওয়ার অভিযোগ অজ্ঞতা ও মূর্খতার পরিচয়। একইসঙ্গে ২০১৯ সালে কামালের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভুয়া পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী একজনকে পুলিশ গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি অসত্য। ভুয়া পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করা ওই ব্যক্তিকে আমি নিজে পুলিশ ডেকে এনে ধরিয়ে দিয়েছি এবং এ ঘটনায় আমি নিজেই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করি। বর্তমানে এটি বিচারাধীন রয়েছে।
কামাল আহমদ বলেন, ওসমানীনগর থানার মোল্লারপাড়া মৌজায় আমার বাবা মরহুম হাজী আব্দুল বারী ২০০২ সালে ১৫ শতক ভূমি ক্রয় করেন। বাবার মৃত্যুর পর এই জমিতে বাউন্ডারিসহ একটি ভবন নির্মাণ করি। ভবন নির্মাণের শুরু থেকে আব্দুল খালিক আমার কেয়ারটেকার শাহীন মিয়ার নিকট মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে ভবন নির্মাণ করতে দেবেন না বলে হুমকি প্রদান করেন। বিষয়টি জানার পর দেশে এসে আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালত ২০২১ সালের ২৬ আগষ্ট স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ প্রদান করেন।
তিনি বলেন, তারা আদালতের আদেশ অমান্য করে গত ২৭ মে আব্দুল খালিকের নির্দেশে ওসমানীনগর থানার দশহাল গ্রামের মৃত আব্দুল গনির পুত্র সাবেক মেম্বার ইকবাল হোসেন মোস্তাক ও তার স্ত্রী রুবি আক্তার, বালাগঞ্জ থানার রাজাপুর গ্রামের মো. গোফরান আহমদ জায়গীরদার ওরফে মাসুম ও একই থানার হুশিয়ারপুর গ্রামের মৃত আব্বাস উল্লাহর পুত্র সুন্দর আলী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভাড়াটিয়াদের জোরপূর্বক বাসা থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। স্থিতাবস্থার আদেশ রয়েছে জানালেও তারা ভাড়াটিয়াদের হুমকি-ধমকি, গালিগালাজ ও মারধর করতে থাকে। তিনি অভিযোগ করেন, ওসমানীনগর থানা পুলিশ আব্দুল খালিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমার ভাড়াটিয়া ও আত্মীয় একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং তার ওপর অমানসিক নির্যাতন করে। সাজানো একটি অস্ত্র মামলা দিয়ে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
কামাল বলেন, এর আগেও আব্দুল খালিক ও তার সহযোগীরা চাঁদা চেয়েছিল, দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে আমার জায়গার উপর স্থাপিত সাইনবোর্ড ভেঙ্গে ফেলে এবং অস্ত্রের মুখে আমার সাথে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি।
গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আব্দুল খালিকের সহযোগী ইকবাল হোসেন মোস্তাক উরফে ইকবাল হোসেন মস্তান, শামীম, মো. গোফরান আহমদ, রাসেল, সুমন, মো. লতিফুর রহমান, মজনু মিয়া, ফরিদ আহমদ আমার কেয়ারটেকার শাহীন মিয়ার ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। তারা গভীর রাতে বাসায় প্রবেশ করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে তাকে রক্তাক্ত জখম করেন। এ ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আমার কেয়ারটেকার শাহীন মিয়া আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ইকবাল হোসেন মোস্তাক উরফে ইকবাল হোসেন মস্তানসহ ৬ আসামি কারাভোগ করেন।
পরবর্তীতে আদালতে জাল কাগজ দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে তারা জামিন লাভ করেন বলে অভিযোগ করেন প্রবাসী কামাল। তিনি বলেন, জালিয়াতির ঘটনায় আমরা আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করেছি। বর্তমানে সেটি বিচারাধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ইকবাল হোসেন মোস্তাক আবারও তাজপুর বাজারে তার সহযোগী সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমার কেয়ারটেকার শাহীন মিয়ার ওপর চড়াও হয়। তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। মারধরের দৃশ্য আবার সে ভিডিও করেছে। তিনি বলেন, ‘আব্দুল খালিক ও তার সহযোগীরা একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালালেও ওসমানীনগর থানা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’ তিনি আব্দুল খালিক, আবুল খয়ের, ইকবাল হোসেন মোস্তাক ও তার অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।