কমলগঞ্জের কানিহাটি চা বাগানে মাদকের আস্তানা

68

pic-kamalgongপিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর-চাতলাপুর শুল্ক অফিস সড়কের কানিহাটি চা বাগানে ভারতীয় মাদকের আস্তানা গড়ে উঠেছে। এখানে চা বাগানের দেশীয় চোলাই মদের সাথে রীতিমতো ভারতীয় মাদকের হাটে পরিণত হয়েছে। মৌলভীবাজার সদর সহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যুবকরা প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাদক কেনা-বেচা ও সেবন করে থাকে। অবাধে মাদক সেবন প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নেশাগ্রস্ত ও পারিবারিক কলহে জড়িয়ে কানিহাটি চা বাগানের কয়েকজন শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের কৈলাশহর ও উত্তর ত্রিপুরার সাথে যাতায়াতের সড়ক হিসাবে শমসেরনগর-চাতলাপুর সড়কে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানী হচ্ছে। ফলে এই রুট দিয়ে সহজেই ভারতীয় বিভিন্ন ধরণের মাদক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এই সড়কটি ডানকান ব্রাদার্স শমসেরনগর চা বাগান ও ফাঁড়ি কানিহাটি চা বাগানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কানিহাটি ও চাতলাপুর চা বাগানের কয়েকটি স্পটে অবাধে মাদক সেবন ও বেচাকেনা চলছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কানিহাটি চা বাগানের বড় লাইন সহ রাস্তার ধারে, খোলা জায়গায় ভারতীয় কোরেক্স, হুইস্কিসহ বিভিন্ন ধরণের মাদকের লেবেল পড়া খালি বোতল পড়ে রয়েছে। কানিহাটি চা বাগানের স্থানীয় দুই জন সহ আশপাশ বস্তির কয়েকজন ব্যবসায়ী অবাদে ভারতীয় মাদকের জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে কার, লাইটেস, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল যোগে যুবকরা এসে গভীর রাত পর্যন্ত মাদক সেবন ও বেচাকেনা করেন। এর সাথে চা বাগানের কিছু যুবকরাও মাদক সেবন করে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কানিহাটি বাগানের শ্রমিকরা জানান, গত একমাস যাবত কানিহাটি চা বাগানে মাদক সেবনের পর পারিবারিক কলহে ও দাঙ্গা হাঙ্গামা করে চা শ্রমিক গপি চাঁন মৃধা (৪০), নরেশ রিকিয়াশন (৩০), প্রসাদ রবিদাস (৩৫) মারা যান। এছাড়াও আহত হন জীবন রিকিয়াশন (৩০)। কানিহাটি চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক বৈকুন্ঠ রবিদাস বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে কানিহাটি বাগানের বড় লাইনে অপরিচিত বহিরাগত লোকেরা গাড়ি নিয়ে  এসে গভীর রাত পর্যন্ত ভীড় জমিয়ে মাদক সেবন করেন। শিক্ষক প্রদীপ কুমার পাল বলেন, তাঁর বাসার পার্শ্ববর্তী পরিত্যক্ত জমি থেকে ৭৩টি কোরেক্স ও হুইস্কি মাদকের খালি বোতল ফেলেছেন। তারা বলেন, অবাদে মাদক সেবন ও মাদকাসক্তদের কারনে চা বাগানের যুব সমাজ বিপথগামী হচ্ছে এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও এর প্রভাব পড়ছে।
শমসেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কানিহাটি চা বাগান এলাকায় ইত্তেফাক কমলগঞ্জ সংবাদদাতা নূরুল মোহাইমিন এবং বাগানের ইউপি সদস্য সিতারাম বিন ঘুরে ভারতীয় মাদকের পরিত্যক্ত খালি বোতলের ছবি তোলে আনার কারনে বাগানের মাদক ব্যবসায়ী মোহন লাল রবিদাস ইউনিয়ন অফিসে এসে সিতারাম বিনকে হুমকি প্রদান করেন। সিতারাম বিন বলেন, এ ঘটনায় তিনি কমলগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন। জিডি নং ৮১৫ তাং ২৩/০১/১৫ ইং। অভিযোগ বিষয়ে মৌলভীবাজারের এএসপি (সার্কেল) মো. আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিকদের  বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।