কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভোজ্যতেলের বাজারে যেন এক তেলেসমাতি কারবার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশে মূল্য হয় উর্ধমুখী। কিন্তু দাম কমলে সেই হারে আর কমে না। তিন দফায় লিটারপ্রতি ৫৫ টাকা দাম বাড়িয়ে কমানো হয়েছে মাত্র ৬ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত রেটের সঙ্গে মিল নেই বাজার পর্যায়ে। পাইকারিতে খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারণ করে দেয়া মূল্যের চেয়ে কম দরে। ব্যবসায়ীরাই বলছেন, বাজারে তেমন বিক্রি নেই। ধার্য করা রেটের চেয়ে ১৫ টাকা কম দরেও তারা ক্রেতা পাচ্ছেন না। অর্থাৎ নতুন করে বেঁধে দেয়া দর বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি। এ অবস্থায় আমদানি মূল্যের সঙ্গে দেশের বাজারের দাম সমন্বয় যথাযথ হয়নি বলে অভিমত খোদ ব্যবসায়ীদের।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে যে পাম তেলের দর প্রতিটন প্রায় ১৭০০ ডলারে উন্নীত হয়েছিল তা এখন নেমেছে ১২০০ ডলারে। আর সয়াবিন তেলের দাম ২০০০ ডলার থেকে নেমেছে ১৭০০ ডলারে। মূল্য কমে একেবারে আগের পর্যায়ে না এলেও যেটুকু হ্রাস পেয়েছে তা খুব একটা কম নয়। কিন্তু সে অনুপাতে দেশের বাজারে প্রভাব নেই। অন্তত মিল মালিকদের পক্ষ থেকে যে নতুন দর ঘোষণা করা হয়েছে তা অনেক বেশি। বর্তমান মূল্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা ভোজ্যতেলের দাম এতটা বাড়তি হতে পারে না।
কোরবানির ঈদে রান্নার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ এই ভোজ্যতেল। প্রতিটি পরিবারকেই এ উপলক্ষে বাড়তি তেল কিনতে হয়। কিন্তু তেলের দামে গত বছর আর এ বছরের মধ্যে ফারাক অনেক বেশি। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাম বেড়েছিল। এ বৃদ্ধিকে অনেকেই হুজুগ হিসেবে নিয়েছিলেন। কিন্তু বহির্বিশে^র বাজারে সেই হুজুগ কেটে গেলেও বাংলাদেশে তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং মিল মালিকরা এক ধরনের সিন্ডিকেট করে মূল্যকে তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী নির্ধারণ করছেন। তাদের কাছে যেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও অসহায় হয়ে পড়েছে, এমনই অভিযোগ করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে এখনও নির্ধারিত রেটের প্রতিফলন ঘটেনি। তাদের যুক্তি, তারা এখনও নতুন রেটে তেল কেনেননি। খুচরা ব্যবসায়ী দিদারুল আলম জানান, তাদের কেনা পড়ছে সয়াবিন প্রতিলিটার ২০০ টাকা আর বিক্রি ২০৫ টাকায়। ৫ লিটারের কন্টেনার ৯৭৫ টাকা কেনা এবং ৯৯০ টাকায় বিক্রি।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজার, সরকার নির্ধারিত মূল্য এবং পাইকারিতে বিক্রির রেটের মধ্যে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য। কেউ কেউ সরকারের এমন রেট বেঁধে দেয়া ঠিক হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্নও তুলছেন। কেননা, আমদানি রফতানি এবং আন্তর্জাতিক মূল্য সব সময় একই জায়গায় স্থিত থাকে না।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশের বাজারে দাম বাড়লে দেশেও বাড়বে আর কমলে দেশেও কমবে। এই বাড়া-কমা নির্ভর করবে আমদানিতে ব্যয় কেমন পড়ছে তার ওপর। কিন্তু মিল মালিকরা বরং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে দাম নির্ধারণের মাধ্যমে তাদের উচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করছেন। এর চেয়ে বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক চেহারায় চলতে দিলে বরং অধিক সুফল পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, এমনই অভিমত রাখছেন কেউ কেউ। তাদের মতে, দর ঠিক করে দেয়ায় তা আমদানিকারক ও মিল মালিকদের সিন্ডিকেটকে আরও সংহত করতে সহায়ক হয়েছে।