কাজিরবাজার ডেস্ক :
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হওয়ার প্রথমদিন থেকে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে কমেছে যাত্রীর চাপ। আর আগের মতো থাকছে না যাত্রীর ভিড়। এজন্য মুখে না বললেও ভেতরে পুড়ছে নৌরুটের লঞ্চ মালিকরা।
যাত্রী সংখ্যা কতটা কমবে বা কমার সংখ্যা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে? এ দুশ্চিন্তার প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হয়েছে আসন্ন ঈদ-উল-আজহা বা কোরবানি উপলক্ষে বিশেষ সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা নিয়ে। বিগত সময়ে ঈদের ১৫/২০ দিন আগে বিশেষ সার্ভিস চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত করা হলেও এবার এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ।
লঞ্চ মালিকরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হবার পর তারা একটু পর্যবেক্ষণ করছেন যাত্রী চাপ কেমন হবে। তারপরই তারা ঈদের বিশেষ সার্ভিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আগের মতোই তারা সবধরনের প্রস্তুতি রাখবেন বলে জানিয়েছেন। একাধিক লঞ্চ মালিক বলেন, এবার বিশেষ সার্ভিসে পূর্বের চেয়ে লঞ্চের সংখ্যা কমবে। একই সঙ্গে কমিয়ে আনা হবে দিনের সংখ্যাও।
অপরদিকে লঞ্চ মালিকদের দুশ্চিন্তার প্রভাব পড়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর। লঞ্চ মালিকদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটিও এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি।
সূত্রমতে, পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুর লঞ্চগুলোই ছিল মূলত বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের মূল মাধ্যম। ফেরি ভোগান্তির কারণে সড়কপথ বিমুখ ছিল এ অঞ্চলের মানুষ। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যথারীতি সড়কপথে যাতায়াতের দিকে ঝুঁকেছে যাত্রীরা।
গত দুদিনে পরিবহনে যাত্রীদের চাপ জানান দিয়েছে সড়কপথে যাত্রা করতে যাত্রীরা এতদিন কতটা ব্যাকুল ছিলেন। যাত্রীদের এই ব্যাকুলতাই টেনশনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চ মালিকদের। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে লঞ্চ মালিকদের বক্তব্য ছিল, লঞ্চে যাত্রী কমবে না। তবে সেতু উদ্বোধনের পর সে বক্তব্য থেকে সরে এসেছেন লঞ্চ মালিকরা।
ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের সবচেয়ে বিলাসবহুল সুন্দরবন নেভিগেশনের স্বত্ত্বাধিকারী ও কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর লঞ্চে যাত্রী কিছুটা কমবে তা নিশ্চিত। তবে কতটুকু কমে সেটি দেখার বিষয়। তিনি বলেন, সেতু চালু হবার পর এবার প্রথম ঈদ। ধারণা করতে পারছি না যাত্রীদের চাপ কেমন হবে। তাই আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণে রেখেছি। যে কারণে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, যদি আগামী ৯ জুলাই ঈদ হয় তাহলে ৭ ও ৮ জুলাই দুদিন ঢাকা থেকে স্পেশাল সার্ভিস চলবে। আর ১০ জুলাই হলে ৯ জুলাই আমরা বেশি লঞ্চ দেব। সবকিছুই নির্ভর করছে যাত্রী চাপের ওপর। তিনি সড়কপথের সঙ্গে ভাড়ার তুলনা করে বলেন, বাসে ঢাকা থেকে বরিশাল আসতে একজন যাত্রীর সর্বনিম্ন পাঁচ থেকে ছয়শ’ টাকা লাগে। সেখানে একই ভাড়া দিয়ে লঞ্চে দুজন যাত্রী বরিশাল আসতে পারবে। এছাড়া সঙ্গে ছোট বাচ্চারাও ফ্রি আসতে পারছে, যা বাসে সম্ভব নয়।
বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু এবার আমাদের লঞ্চ পথে নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। আমরা সে অভিজ্ঞতা গ্রহণের অপেক্ষায় আছি। তিনি বলেন, স্পেশাল সার্ভিসের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে পূবের্র মতোই আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি থাকবে।