ছাতক-দোয়ারায় বন্যায় ২০ জনের প্রাণহানি

24

আতিকুর রহমান মাহমুদ ছাতক থেকে :
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় ইতিহাসের ভয়াবহ বন্যায় নৌকা ডুবি, পানির স্রোতে ভেসে, বজ্রপাত ও বিদ্যুৎস্পৃষ্টসহ এ পর্যন্ত ২০জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৩ জুন থেকে ২৩জুন পর্যন্ত তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী দাফন ও দাহ করা হয়েছে। মারা যাওয়া মানুষের পরিবারদের এখন পর্যন্ত খবর নিচ্ছে না প্রশাসন। ভয়াবহ বন্যা, প্রাণহানির বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টাও করছেন এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ লোকজন। ভয়াবহ বন্যায় ছাতক-দোয়ারাবাজার মানুষ যে কত বিপদে ছিল ভুক্তভোগি ছাড়া কেউ বুঝার সাধ্য নেই। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখে আলিশান বাসা-বাড়িতে যারা নাকে তৈল দিয়ে ঘুমিয়েছিল তারা মানুষের কষ্ট, প্রাণহানী বিষয়টি জানবেন বা কি ভাবে এমনটাই মন্তব্য ভুক্তভোগি মানুষের।
এ বন্যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ভাসিয়ে নিয়েছে মানুষ ও গবাদিপশুসহ অসংখ্য ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট। মানুষ সাঁতার কেটে, নৌকা যোগে, ভেলায় ছড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে রক্ষা পেয়েছেন। এদের মধ্যে ছাতকে ৬ জন ও দোয়ারাবাজারে ১৪জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সুরমা ইউনিয়নে ৫জন, দোহালিয়া, বাংলাবাজার ও মান্নারগাঁও ইউনিয়নে ২জন করে ৬জন, বোগলা, লক্ষিপুর ও নরসিংপুর ইউনিয়নে ১জন করে ৩জন।
১৩জুন উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের কড়ালিয়া গ্রাম সংলগ্ন হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে আবদুল হাসিম (৫৫) মারা যান। তিনি ভবানিপুর গ্রামের মৃত হাছন আলীর পুত্র।
স্কুলে যাওয়ার পথে নৌকা ডুবিতে এক সাথে মারা যায় তামান্না আক্তার (১৬) ও তার ভাই সৌরভ মিয়া (১০)। তারা উপজেলার রাজনগর গ্রামের ময়না মিয়ার সন্তান। পুকুরে গোসল করতে গিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় শুকুর আলী ওরফে আবদুন নুরের (২১)। সে দক্ষিন কলোনির নোয়াব আলীর পুত্র। টেংরা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে নৌকা যোগে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে সাদ্দাম হোসেন (৩৫) ও জরিফ হোসেন (১৫) নামের দুই সহোদরের মৃত্যু হয়। তারা টেংরাটিলা গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র। বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল যোগে নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বন্যার পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে মারা যান এসএমপির ট্রাফিক পুলিশ এর কনস্টেবল আবুল কাশেম (৩৮)। তিনি টেংরাটিলা গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের পুত্র। কুমারকান্দি সরকারী গ্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে নৌকা ডুবিতে ইমাম উদ্দিন (৬৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি দোহালিয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মৃত ছিদ্দেক আলীর পুত্র। নৌকা ডুবিতে সাদমান হোসেন (৪) বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে শরিফপুর গ্রামের জমির হোসেনের পুত্র। বাংলাবাজার ইউনিয়নে প্রচন্ড বৃষ্টিতে বসত বাড়ির টিলা ধসে হনুফা বেগম (৫০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি পেকপাড়া গ্রামের মৃত আবদুর রশিদের স্ত্রী। চেলা নদীতে লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে বজ্রপাতে শফিক মিয়া (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। সে নরসিংপুর ইউনিয়নের পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের মৃত শাহাব উদ্দিনের পুত্র। নদীর পানি বসত ঘরে প্রবেশ করায় প্রাণ বাঁচান জন্য পায়ে হেঁটে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার পথে পানির প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে মারা যান আনফর আলী (৪৪) নামের এক ব্যক্তি। তিনি লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের জিরারগাঁও গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর পুত্র। প্রবল স্রোতে বসতঘরসহ পানিতে ভেসে গিয়ে জাহানারা বেগম (৬০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি বোগলা ইউনিয়নের আলমখালি গ্রামের মৃত কালা মিয়ার স্ত্রী। ১৬জুন নিজ বসত ঘরে পানি উঠায় বিছানা থেকে পানিতে পড়ে মারা যান খুশি রানী দাস (৬০)। তিনি মান্নারগাঁও ইউনিয়নের পুটিপশি গ্রামের মৃত নিতানন্দন এর স্ত্রী। ১৪জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেবদুলাল ধর।
এদিকে, ছাতকে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে ইতোমধ্যে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে ও নৌকা ডুবিতে তাদের মৃত্যু হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ জুন স্থানীয় একটি হাওর থেকে মখলিছুর রহমান (৪৫) নামের এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে স্বজনরা। তিনি উত্তর খুরমা ইউনিয়নের নাদামপুর- বিলচরা গ্রামের রমজান আলীর পুত্র। গত ২০জুন বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও গ্রামের শরিফ হোসেনের পুত্র তমাল আহমদ (২০), নৌকা ডুবিতে ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের আহমদ আলীর পুত্র খালেদ আহমদ (৩০), দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের জাতুয়া গ্রামের উমেশ দাসের পুত্র অশোক দাস (২০), সিংচাপইড় ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের নুরুজ্জামানের শিশু কন্যা হানিফা বেগম (৮), শহরের ব্যবসায়ী বাগবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা পীযুষ দে’র (৪৮) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। মৃতদের ভাসমান লাশ উদ্ধার করে স্বজনরা।
ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান জানান, কাগজ কলমে তাদের কাছে একজনের মৃত্যুর খবর আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।