কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনেও দেশের জনগণ নৌকাকে বেছে নেবে এমন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশের যা কিছু অর্জন তা আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে। বিএনপির হৃদয়ে তো পাকিস্তান, এরা দেশের ভাল চাইবে না এটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে আসছে। দেশবাসীও জানে নৌকা আওয়ামী লীগের প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক- সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তাই নৌকা ছাড়া তাদের বিকল্প নেই, গতি নেই। কেননা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য নয় বরং মানুষের ভাগ্য গড়তে। জন্মলগ্ন থেকেই সেই আদর্শ নিয়েই রাজনীতি করে যাচ্ছে। নেতৃত্ব শূন্য দল (বিএনপি) নির্বাচন করবে আর জনগণ ভোট দেবে কি দেখে? বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।
বিএনপি কথা বানানো এবং মিথ্যা বলার কারখানা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘হত্যার সঙ্গে জড়িত’, তাদের ছেলে তারেক রহমান তা প্রমাণ করেছে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সমর্থন দিয়ে। আজকে তাদের কথার মধ্য দিয়ে এরাই যে ১৫ আগষ্টে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত বা চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত, জিয়া-খালেদা-তারেক জিয়া সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে, ৭৫-এর হাতিয়ারকে সমর্থন দিয়ে অর্থাৎ খুনীদের সমর্থন দিয়ে। কারণ এই খুনীদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং তাদের পুরস্কৃত করেছিল ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে, সেটা আইনে পরিণত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং এদের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল।
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, রাজশাহীর সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মন্নাফী। গণভবন প্রান্ত থেকে সভা পরিচালনা করেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
বিএনপির ‘দিল মে পাকিস্তান’! : বিএনপি দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দেশটা আমাদের। আমি যতটুকু চিনি জানি, দেশের মানুষের কল্যাণ আওয়ামী লীগ যতটা বুঝবে, অন্যরা তা বোঝে না। বুঝবে কি করে? বিএনপির হৃদয়ে তো থাকে পাকিস্তান। তাদের মনেই আছে পাকিস্তান। ‘দিল মে পেয়ারে পাকিস্তান’। সারাক্ষণ গুন গুন করে ওই গানই গায়। ‘হায় মেরে জান, পেয়ারে মান, আখো কি তারা, আসমান কি চান, মেরে জান পাকিস্তান’-এই হলো খালেদা জিয়ার কথা। কাজেই এই যাদের মানসিকতা তারা তো বাংলাদেশের কোন ভাল চাইবে না এটা খুব স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আপনাদের এত দুঃখ, চিন্তা করার কিছু নেই।
তিনি বলেন, ওদের (বিএনপি) কথা যত না বলা যায় ততই ভাল। কারণ ওরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাতেই বিশ^াস করে না। বরং এসব গাট্টি বেঁধে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিলেই ভাল হয়। পাকিস্তানে এখন যে অবস্থা, ওখানেই তারা ভাল থাকবে। এখনও লাহোরে সোনার দোকানে খালেদা জিয়ার বড় ছবি আছে। ওই দোকানের সোনার গয়না তার খুব প্রিয়। তাদের মানসিকতা ওইদিকেই। আমাদের বাংলাদেশের জন্য না। তবে এটাও ঠিক এদের জন্ম তো বাংলাদেশে না। না জিয়ার জন্ম বাংলাদেশ, না খালেদা জিয়ার জন্ম। কারও জন্মই বাংলাদেশে না। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা ছিলেন এই দেশের। আমার জন্মও এই মাটিতে। কাজেই মাটির টান আলাদা। এখানে আমাদের নাড়ির টান। কাজেই এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়াটাই আমাদের লক্ষ্য। সেজন্যই আমরা কাজ করি। আওয়ামী লীগের আদর্শই হচ্ছে জনগণের সেবা করা।
দেশের জনগণ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেতৃত্ব শূন্য কোন দল নির্বাচন করবে আর জনগণ ভোট দেবে কি দেখে? ওই চোর, ঠকবাজ, এতিমের অর্থ আত্মসাত করা অথবা খুন-অস্ত্র চোরাকারবারি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাদের জনগণ ভোট দেবে দেশ পরিচালনার জন্য। তারা তো (দেশবাসী) দেবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।
বিএনপি কথা বানানো এবং মিথ্যা কথা বলার কারখানা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের (বিএনপি) একটা ভাল অভ্যাস আছেÑ মিথ্যা কথা বানানোর আর মিথ্যা কথা বলার একটা কারখানা যদি থেকে থাকে সেটা হলো বিএনপি। তারা মিথ্যা কথা বানানো এবং বলতে খুব ভাল পারে। যত রকম মিথ্যা এটার প্রডাকশন তারা খুব ভালই দেয়, বলেও যায়। আমাদের কিছু লোক সেটা নিয়েও বেড়ায়।
তারেকের কথায় প্রমাণ হয় জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনী : সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শুনলাম- খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া শ্লোগান দেয় ‘পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তি’। এর মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণ করেছে তার বাপ যে পাকিস্তানের দালাল ছিল, তার মাও পাকিস্তানী দালাল হিসেবেই ছিল। এই বাংলাদেশের স্বাধীনতাটাকে সম্পূর্ণরূপে নস্যাত করতে চেয়েছিল। আদর্শগুলো একে একে মুছে ফেলে দিয়েছিল। ইতিহাস মুছে ফেলে দিয়েছিল। জাতির পিতার নামটাও মুখে ফেলেছিল। কাজেই এটা খুব স্বাভাবিক। তারা তো ওই শ্লোগান দেবেই।
তিনি বলেন, পাকিস্তানী সেনাদের পদলেহন করে চলাটাই তো তাদের অভ্যাস। তারা তো স্বাধীনতার চেতনাতেই বিশ^াস করে না। স্বাধীন জাতি হিসেবে যে একটা মর্যাদা আছে, এটাই তাদের পছন্দ না। তারা পরাধীন থাকতেই পছন্দ করে। পাকিস্তানীদের পায়ের লাথি-ঝাঁটাটাও তাদের ভাল লাগত মনে হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এটা মনে করেই এদের করুণা করতে হবে। কিন্তু এরা চক্রান্তকারী-ষড়যন্ত্রকারী, সেটাও মনে রাখতে হবে। নইলে এদেশে অগ্নি সন্ত্রাস, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা, ১৯টা ক্যু, হাজার হাজার সেনাবাহিনীর সৈনিক-অফিসারকে হত্যা করেছে। কত পরিবার লাশটা তো পায়নি। জিয়াউর রহমান তাদের হত্যা করেছে, তাদের লাশ কেউ পায়নি। সব লাশ গুম হয়েছে। কখনও কি অপরাধ তাদের, পরিবারের সদস্যরা জানতেও পারেনি তাদের লাশগুলো কোথায়? পঁচাত্তরের পর যখন জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল তখন থেকে দেশের গুম-খুন শুরু হয়। খালেদা জিয়া এসেও আমাদের কত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এরশাদের আমলেও আমাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে তাদের (বিএনপি) কথার মধ্য দিয়ে এরাই যে পঁচাত্তরের হত্যাকান্ডের সঙ্গে এবং চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত, জিয়া যে জড়িত তা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছে পঁচাত্তরের হাতিয়রাকে সমর্থন দিয়ে অর্থাৎ খুনীদের সমর্থন দিয়ে। কারণ এই খুনীদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং তাদের পুরস্কৃত করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। জিয়াউর রহমান কিন্তু সেভাবেই নিহত হয়েছিল এবং তার লাশও কিন্তু কেউ পায়নি। খালেদা জিয়া ও তার ছেলেও কখনও বলতে পারবে না তার বাপের লাশ দেখেছে। সে কথা তো বিএনপি নেতারা একবারও স্মরণ করেন না। একটা বাক্স এরশাদ সাহেব নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু সেই বাক্সে কি ছিল? পরবর্তীতে এরশাদ সাহেবের মুখেই তো আছে যে, সেই বাক্সে জিয়ার লাশ ছিল না। জিয়ার লাশ তারা পায়নি। জিয়ার লাশ কোথায় গেছে কেউ পায়নি। কিন্তু একটা বাক্স এনে সংসদ ভবনের সেখানে তারা রেখে দিয়েছে। সেখানে তারা ফুলের মালা দেয়। সেখানে লাশ নেই। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তারেককে আসতে দেয়া হয় না এটা মিথ্যা : প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির এক নেতা বলেছেন তারেক জিয়াকে নাকি আসতে দেয়া হয় না! এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলেছে। ২০০৭ সালে তারেক জিয়া তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল সে আর রাজনীতি করবে না। এই শর্তে সে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। বিএনপি নেতাদের এটা তো ভুলে যাওয়ার কথা না। এটা লিখে দিয়ে সে কিন্তু চলে যায়। কাজেই তাকে তো কেউ বিতাড়িত করে নাই। স্বেচ্ছায় চলে গিয়ে আর সে ফিরে আসে নাই।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতার যদি ফিরে আসার সাহস না থাকে, সে আবার নেতৃত্ব দেয় কিভাবে? আমাকেও তো বাধা দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মাডার কেস দিয়েছিল, ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দেশে এসেছিলাম। মামলা মোকাবেলা করেছিলাম। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছি। এরপর আমাকে কারাবন্দী করেছে। আমি জানি রাজনীতি করি কারাবন্দী হতেই হবে। কিন্তু আমাকে তো খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান গ্রেনেড মেরে হত্যাও করতে চেয়েছে। কোটালিপাড়ায় বিশাল বোমা সেটাতেও কি তাদের হাত ছিল না। বারবার হত্যার চেষ্টা এরাই তো করেছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দুর্নীতি করে যদি টাকা না বানাবে তাহলে বিদেশে তারেক রহমান এত বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে কিভাবে? কত টাকা খরচ করে ব্রিটিশ নাগরিক সেজে সেখানে কোম্পানি খুলেছে এবং ধরা পড়ে যাওয়ার এক বছর পরে সেখানে বাংলাদেশ নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। কেননা আমরা কথা তুলেছিলাম একজন সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশীকে ব্রিটেন নাগরিকত্ব দেয় কি করে? কাজেই একেই বলে চোরের মার বড় গলা।
যাদের আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা, তারা কথা বলে কিভাবে? : পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আজকে পদ্মা সেতু নিয়ে তারা কথা তুলেছে। সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল বিশ্বব্যাংক। খালেদা জিয়ার আমলে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টে দুর্নীতির দায়ে বিশ্বব্যাংক কিন্তু অর্থ বন্ধ করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এটা বের করেছিল যে কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে খালেদা জিয়ার ছেলেরা অর্থ ঘুষ নিয়েছিল। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড করার সময়ে দুর্নীতির দায়ে বিশ্বব্যাংক সড়কে অর্থ বন্ধ করেছিল। তাদের চরিত্রই এই। তারা বিদেশে যে টাকা পাচার করেছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই টাকা কিছু অংশ ফেরত এনেছে। এরপরও তাদের মুখ থেকে এত বড় কথা কিভাবে আসে? তবে মিথ্যা কথা বানানো এবং মিথ্যা কথা বলার একটি কারখানা যদি থেকে সেটা হচ্ছে বিএনপি।
তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা যখন জাপানে যান, তার অনুরোধে যমুনা সেতুর জন্য সমীক্ষা হয়। জিয়াউর রহমান সেটা বন্ধ করে দেয়। জেনারেল এরশাদ আসার পর আবারও উদ্যোগ নেয় যমুনা সেতু করার। যতটুকু কাজ এরশাদ করে গিয়েছিল, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে খুব বেশি এগোতে পারেনি। কারণ সব জায়গায় কমিশন খাওয়ার অভ্যাস। আবার কমিশন তো একজনকে দিলে হবে না। মায়ের জন্য একটা, দুই ছেলের জন্য, আবার ফালুর এজন্য, অমুক-তমুকের জন্য- এসব করতে করতে কেউ আর কাজ করতে পারত না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে এই সেতুতে রেললাইন, গ্যাসলাইন, বিদ্যুতের লাইন দিয়ে ডিজাইনটা যোগ করে মাল্টিপারপাস সেতু করি। এই রেললাইন করা নিয়ে তখন বিশ্বব্যাংকের আপত্তি ছিল। তখন তাদের কথা আমি শুনিনি। তাদের কথা ছিল রেললাইন লাভজনক হবে না। আমার কথা ছিল লাভজনক হবে। রেললাইনটাই কিন্তু সবেচেয় বেশি লাভজনক হয়েছে। যে কারণে তারা একটা স্বতন্ত্র রেল সেতু করার জন্য ফিরে এসেছে।
বন্যায় কোন নেতা সাহায্য করতে যায়নি : চলমান সিলেটসহ বিভিন্নস্থানে ভয়াবহ বন্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বন্যা হয়েছে। বন্যায় বিএনপির কোন নেতা কেউ কোন সাহায্য দিয়েছে? দেয়নি। ঢাকায় বসে বসে নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেক দুর্গম এলাকায় যাচ্ছে। যেখানে যারা কেউ পৌঁছাতে পারছে না সেখানেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে। উদ্ধার কাজ করে যাচ্ছে, প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সেটা নিয়েও তাদের আবার সমালোচনা। যারা বন্যাবাসীদের জন্য কিছুই করতে পারেনি, কিন্তু এখানে বসে তারা মায়াকান্না করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি স্বশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ প্রশাসন সবাই একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত তাদের উদ্ধার করা, চিকিৎসা দেয়া তাদের মধ্যে খাদ্য দেয়া কোথাও এতটুকু গাফিলতি নেই। কারণ বন্যা এটা প্রাকৃতিক কারণে আমাদের দেশে আসবেই, হয়েছে, হচ্ছে এবং হবেই। তাই বলে আমাদের যে এত বড় অর্জন (পদ্মা সেতু) যেটার বিশ্বব্যাংকের করা দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। কানাডার আদালতের রায়েও বলা হয়েছে, অভিযোগ মিথ্যা, এখানে কোন দুর্নীতিই হয়নি। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে জনগণ উপলব্ধি করেছে, সরকার জনগণের সেবক। ২০০৯ থেকে আমরা সরকার গঠন করেছি। জনগণ বারবার আমাদের ভোট দিয়েছে। সেই ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা বারবার এসেছি। একটা দীর্ঘ সময় হাতে পেয়েছি। তাই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি যখন অংশগ্রহণ করেছিল, তখন তারা নমিনেশন দিয়েছিল কিভাবে? এখান থেকে আমাদের ফখরুল ইসলাম সাহেব একটা (নমিনেশন) দেয়, রিজভী সাহেব একটা দেয় আর লন্ডন থেকে তারেক জিয়া আরেকটা দেয়। সকালে তাদের এক ক্যান্ডিডেটের নাম যায়, দুপুরে যায় আরেকজনের। তারপর যায় আরেকজনের নাম। তাদের অন্তত দুইজন আমাকে নিজের মুখে বলে গেছে, এনাম আহমেদ চৌধুরী এবং মোর্শেদ খান। তারা বলেছেন, তারেক জিয়া তাদের কাছে টাকা চেয়েছে। এমন এক এ্যামাউন্ট চেয়েছে, তারা বলেছে আমরা দিতে পারব না। তাদের মনোনয়ন ক্যান্সেল (বাতিল)। সেজন্য তারা নির্বাচনই করেনি। নির্বাচনের নামে যখন তারা বাণিজ্য শুরু করে দিয়েছে, সেই নির্বাচনে তারা ভোটই বা কী করবে, নির্বাচনও করবেইবা কী করে?
তিনি আরও বলেন, নেতৃত্ব শূন্য কোন দল নির্বাচন করবে, তাদের জনগণ ভোট দেবে কি দেখে? ওই চোর ঠকবাজ এতিমের অর্থ আত্মসাতকারী অথবা খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি; দেশ চালানোর জন্য তাদের এদেশের জনগণ ভোট দেবে? জনগণ তো তা দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। তারা জানে আওয়ামী লীগ এবং নৌকা মার্কা। আর নৌকার যে প্রয়োজন এবার বন্যায়ও তো নৌকার জন্য হাহাকার। কাজেই নৌকা ছাড়া তো গতি নেই বাংলাদেশের। এটাও মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ তার জন্ম লগ্ন থেকেই মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতাই শুধু এনে দেয়নি। স্বাধীনতার সুফল এখন ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে।
এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে : সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে করোনা ভাইরাস। তারপর আবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। আবার করোনা দেখা দিয়েছে। সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। এর ভয়াবহতার কারণে যে ক্ষতি আমাদের হচ্ছে, শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ^ব্যাপী। সমগ্র বিশে^ই খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও আমরা কিন্তু আমাদের অর্থনীতির গতিটা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। বাজেটও আমরা দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি আবারও বলব- আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। প্রত্যেকের যতটুকু জায়গা আছে, সেখানে কিছু না কিছু করতেই হবে। নিজেদের খাবারের জিনিস নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। যেন বাজারের ওপর চাপ না পড়ে। এটা যে শুধু আমরা করব তা নয়, সবাইকে নিয়ে করতে হবে।
তিনি বলেন, বন্যা কিন্তু এখানেই থামবে না। এই পানি আস্তে আস্তে নিচে যত নামতে থাকবে ধীরে ধীরে একেকটা এলাকা প্লাবিত হবে। এটা প্রকৃতির সঙ্গে জড়িত। এটা কিন্তু ভাদ্র মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলবে। কাজেই আমাদের সেই প্রস্তুতিও রাখতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে। এ সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটাই কিন্তু আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক। জনগণের পাশে থাকে এবং জনগণের পাশেই থাকবে। এই আদর্শই আমাদের জাতির পিতা শিখিয়েছেন। এটা নিয়েই আওয়ামী লীগ চলবে। মানুষের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি। সেই শক্তি নিয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাব। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবই।
জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই নির্বাচনের নামে প্রহসনের শুরু হয় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার ‘হ্যাঁ-না’ ভোট। তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেনাপ্রধান হিসেবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে আবার নির্বাচনে সে প্রার্থী হয়। যা কখনও সংবিধান ও আর্মি রুলস এ্যাক্ট মোতাবেক পারে না। তারপরও সে অবৈধ কাজগুলো করে যায়। দুর্ভাগ্য আমাদের কিছু লোক তার সঙ্গে জুড়ে যায়। একজন মার্শাল ল জারি করে, সংবিধান, সেনা আইন, রুলস লঙ্ঘন করে প্রার্থী হলো বা দল গঠন শুরু করল, তাকেই বানানো হলো গণতন্ত্রের প্রবক্তা। এটাই বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি, বড় দুঃখ। অনেক কথিত জ্ঞানী-গুণী তার সঙ্গে হাত মেলালো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলার দুখী মানুষের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছে। অগণিত নেতাকর্মী জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছে। জীবন দিতে হয়েছে। তবে মুষ্টিমেয় চাটুকারের দল, তোষামোদি, খোসামোদির দল অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের পদলেহন করতে ছুটে গেছে। কিন্তু সাধারণ বাঙালী তা করেনি। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু সব সময় ঠিক ছিল। ’৭০-এর নির্বাচন যখন হয় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২০ দলীয় জোট করা হয়েছিল। মাঝে মধ্যে মনে হয় আমাদের আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট হলো। পাকিস্তান আমলেও কিন্তু ২০ দলীয় জোট হয়েছিল ’৭০-এর নির্বাচনে। একটু স্মরণ করে বা ডকুমেন্ট দেখবেন। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।