সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী ইমরান আহমদ ॥ জাপানে গমনেচ্ছুক যুবক ও যুব মহিলারা প্রশিক্ষণ নিন

110
বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা ও সচেতনতা শীর্ষক প্রেসব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ জাপান বাংলাদেশ থেকে ১৫টি ক্যাটাগরিতে কর্মী নেবে। এ লক্ষ্যে জাপান সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকারের একটি নতুন শ্রমবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী এবং সিলেট-৪ আসনের সাংসদ ইমরান আহমদ।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় সিলেট সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান মন্ত্রী। ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য চাই দক্ষতা ও সচেতনতা” শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়। তত্ত্বাবধানে ছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
ইমরান আহমদ বলেন, ‘উন্নত দেশ জাপানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের দেখভাল করার মতো মানুষ জাপানে নেই বললেই চলে। জনবলের অভাবে তাদের অর্থনীতির চাকাও প্রায় অচলের পথে। তাই জাপান বিশ্বের ৮টি দেশ থেকে জনবল নিয়ে তাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করছে। এ বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবেকে জাপানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সচল রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তির সহযোগিতা নেওয়ার জন্য আহবান জানান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রীর প্রস্তাবে সম্মতি দেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের ফসল হিসেবে জাপান সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকার একটি নতুন শ্রমবিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। গত ২৭ আগস্ট টোকিওতে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ফলে বাংলাদেশ এখন জাপানে দক্ষ জনবল প্রেরণের জন্য ৯ম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ সহযোগিতামূলক চুক্তির ভিত্তিতে ১৫টি ক্যাটাগরিতে জাপান ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে দক্ষ (স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার) কর্মী নেবে। জাপানী ভাষাগত দক্ষতা এন৪ লেভেল এবং কাজ জানার দক্ষতা অবশ্যই লাগবে। জাপান সরকার পরীক্ষা নিয়ে একটি প্যানেল তৈরি করবে। সেই প্যানেল থেকে জাপানী কোম্পানিসমূহ কর্মী বাছাই করে চাহিদাপত্র দাখিল করতে পারবে। দুই সরকারের অনুমোদনক্রমে কর্মীদেরকে জাপানে নিয়ে কাজে নিয়োগ দেওয়া হবে।’
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জানান, এটি একটি ‘জিরো কস্ট মাইগ্রেশন’ পদ্ধতি। দুই দেশের সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্তির পর কর্মীকে কোনো ব্যয় বহন করতে হবে না।
মন্ত্রী ইমরান যে ১৫টি ক্যাটাগরিতে (ট্রেড) জাপান সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে, সেগুলোও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।
এ ক্যাটাগরিগুলো হলো- কেয়ার ওয়ার্কার, ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইনফরমেশন, কনস্ট্রাকশন, শিপবিল্ডিং বা শিপ মেশিনারি, অটোমোবাইল মেইনটেইনেন্স, অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি, বিল্ডিং ক্লিনিং ম্যানেজমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রি মেশিনারি, অ্যাকোমোডেশন; অ্যাগ্রিকালচার, ফিশারি ও অ্যাকোয়াকালচার; ম্যানোফেকচার অব ফুড অ্যান্ড বেভারেজেস, ফুড সার্ভিস, ইলেকট্রিক্যাল, মেশিন পার্টস অ্যান্ড টুলিং এবং প্রিকাস্ট ম্যানুফেকচারিং ওয়ার্কস।
ইমরান আহমদ আরো জানান, ২০১৭ সালের অপর একটি সহযোগিতামূলক মেমোরেন্ডামের ভিত্তিতে জাপানের রিক্রুটিং এজেন্ট ‘আইএম জাপান’ বাংলাদেশ থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নিচ্ছে। ইতিমধ্যে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে জাপানে ৯২ জন কাজ পেয়েছেন। এ প্রক্রিয়াটি এখনও চালু আছে।
জাপানে গমনেচ্ছুক যুবক ও যুব মহিলাদের (যাদের বয়স ৩২ বছরের কম) জাপানী ভাষা ও ১৫টি ট্রেডের যেকোনো একটিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানান মন্ত্রী। কেউ যেন দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীকে কোনো টাকা না দেন, সে আহবানও জানান তিনি।
ইমরান আহমদ জানান, সরকারি ৩৩টি টিটিসিতে জাপানী ভাষা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সিলেট মহিলা টিটিস ও মৌলভীবাজার টিটিসিতেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দেশে প্রায় ১০০টি বেসরকারি জাপানী ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু আছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম। বিজ্ঞপ্তি