কাজিরবাজার ডেস্ক :
ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের করা ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট। এই টেস্টের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকায় এখন থেকে কোনো ধর্ষণ মামলায় নারীর ওপর এই পরীক্ষা করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার দেওয়া এক রায়ে আদালত টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করেন। বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ে বলা হয়েছে, একজন নারী চিকিৎসক বা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর পরীক্ষা করতে হবে। এ সময় একজন নারী গাইনোকোলজিষ্ট, একজন নারী ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ভিকটিমের একজন নারী আত্মীয়, একজন নারী পুলিশ সদস্য, নারী সেবিকা রাখতে হবে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ যে সনদ দেবে তাতে অভ্যাসগত যৌনতা বলে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। পরীক্ষার পর ধর্ষিতার যাবতীয় গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। এছাড়া বিচারাধীন মামলায় নিম্ন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণকালে নারীকে অমর্যাদাকর কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।
রায়ে আরো বলা হয়, যদি ধর্ষিতার আঘাত বা খত গভীর থাকে, সেক্ষেত্রে একজন গাইনোকোলজিস্টের কাছে তাকে পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে ঠিক কোন কারণে ধর্ষিতার এই গভীর খতের পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে তা লিখতে হবে। কোনো আঘাত বা খত না থাকলে ধর্ষিতা, শিশু ও তরুণীর ক্ষেত্রে স্পার্স স্পেক্যুলাম (এক ধরণের যন্ত্র, যা দিয়ে যৌনাঙ্গ এলাকায় পরীক্ষার করা) পরীক্ষা করা যাবে না।
রায়ে হেলথ কেয়ার প্রোটোকল ব্যাপকভাবে প্রচার এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে বিশেষ করে চিকিৎসক, আদালত, পিপি (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল), ধর্ষণ মামলায় পুলিশের সংশ্লিস্ট তদন্ত কর্মকর্তা, উৎসাহী আইনজীবীর কাছে সরবরাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হেলথ কেয়ার প্রোটোকল বিষয়ে সচেতনা বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সেমিনার করতে বলা হয়েছে।
২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নারীপক্ষ নামে ৬টি পৃথক সংগঠন এবং দুইজন ব্যাক্তি ধর্ষণের শিকার নারীর ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা এই বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ১০ অক্টোবর হাইকোর্ট ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের ডাক্তারি পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়।
এরপর দীর্ঘ সময় ধরে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে এবং আইনি প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার টেস্টটি নিষিদ্ধ করে রায় দিলেন হাইকোর্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে (টু ফিঙ্গার টেস্ট) ধর্ষণের পরীক্ষা করার কারণে অনেক ভিকটিম পরীক্ষা করতে আসেন না। আর এ কারণে অনেকে ধর্ষিত হয়েও ন্যায় বিচার পায় না। পার্শ্ববর্তী ভারতে এ পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে।
টু ফিঙ্গার টেস্ট’ কী : ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ভিকটিম নারীর যোনিমুখে আঙুল ঢুকিয়ে দেখা হয়, তার হাইমেন (যোনিমুখের পর্দা) অটুট রয়েছে কি না। আগে ধারণা করা হতো এই পরীক্ষার মাধ্যমে নারীর শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে কিনা প্রমাণ পাওয়া সম্ভব। ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার ডাক্তারি প্রমাণ হিসেবে অবিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করা হতো। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, এই পরীক্ষার কোনও কার্যকারিতা নেই। কারণ শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া আরও বিভিন্ন কারণে কারণে হাইমেন ছিন্ন হতে পারে।