মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য আকর্ষণীয় ছিল বরাবর। আবহাওয়া, কাজের পরিবেশ, খাদ্য ইত্যাদি অনেকটাই বাংলাদেশের মতো। দূরত্ব বিবেচনায়ও বাংলাদেশীদের জন্য অনুকূল। অন্যদিকে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বাংলাদেশী কর্মীদের চাহিদা ছিল ব্যাপক। শারীরিক সক্ষমতা, কাজের প্রতি আন্তরিকতা এবং আনুগত্যে তারা বিনিয়োগকারীদের মন জয় করে নিয়েছিল। গত শতাব্দীর ৮০ ও ৯০ দশকে মালয়েশিয়ার বাজার একতরফাভাবে দখল করে রেখেছিল বাংলাদেশী শ্রমিকরা। ১৯৭৮ সাল থেকে প্রায় ১০ লাখ ৫৭ হাজার কর্মী বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় গেছেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে সেই বছরই মালয়েশিয়ায় গেছেন এক লাখ ৭৫ হাজার কর্মী। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশী অভিবাসীরা পাঠিয়েছেন প্রায় ৬.৩ বিলিয়ন ডলার। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হচ্ছে মালয়েশিয়া।
বাংলাদেশী শ্রমিক প্রেরণকারী এজেন্সিগুলোর অতিমুনাফার লোভ এবং নানা অনৈতিক কর্মকান্ডে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের একতরফা নিয়ন্ত্রণ শিথিল হতে থাকে। প্রতিযোগিতা শুরু হয় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপিন্সের সঙ্গে। অনিয়ম চরম আকার ধারণ করলে বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এই আকর্ষণীয় শ্রমবাজার। এ নিয়ে গত কয়েক বছর দুই দেশের সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে অনেক আলোচলা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। চলতি মাস থেকেই বাংলাদেশী কর্মীদের মালয়েশিয়ায় যাওয়া শুরু হবে। বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার সঙ্গে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা সফররত মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান এবং বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী এক বছরে দুই লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। আগামী পাঁচ বছরে তারা আরও পাঁচ লাখ কর্মী নিতে চায়। কর্মীদের ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫শ’ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। অভিবাসন ব্যয় হবে সব মিলিয়ে এক লাখ ৬০ হাজার টাকার কম। বাংলাদেশ প্রান্তের কিছু খরচ বহন করবে কর্মী নিজে। আসা-যাওয়ার বিমান টিকিট থেকে শুরু করে অন্য সব খরচ বহন করবে মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তা। মালয়েশিয়া সরকারের পছন্দ অনুযায়ী ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠানোর দায়িত্ব পাবে। কোন এজেন্সি বা নিয়োগকর্তা শর্ত ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেসব শর্তে আবারও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা খুবই প্রশংসনীয়। এতে কর্মীদের খরচ খুব কম। সহায়সম্বল সব বিক্রি করে তাদের মালয়েশিয়া যেতে হবে না। তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নিয়োগকর্তা এসব শর্ত থেকে বের হওয়ার নানা অপকৌশল বের করে ফেলবে। চাপ সৃষ্টি করে কর্মীদের বাধ্য করবে অতিরিক্ত অর্থ দিতে। বিষয়টি দুই দেশের সরকারকেই কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখতে হবে। তা না হলে এই সুন্দর উদ্যোগ ভেস্তে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না।