ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে শিগগির

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ইন্দোনেশিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে। আগে থেকেই উৎপাদন কম, মহামারিতে শ্রমিক ঘাটতি ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ভোজ্যতেলে বিদ্যমান সংকটের মধ্যে দেশটির এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ববাজার পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। ইন্দোনেশীয় পাম অয়েলের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে বেড়ে গেছে ভোজ্যতেলের দাম। এবার তাদের জন্য সুখবর- খুব শিগগির প্রত্যাহার হতে পারে ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা।
সোমবার (৯ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় এরই মধ্যে পাম অয়েলের মজুত সক্ষমতা প্রায় পূর্ণ হওয়ার পথে। ফলে রপ্তানি শুরু না করলে উদ্বৃত্ত পাম অয়েল নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবে দেশটিকে। তাছাড়া ইন্দোনেশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি বড় অংশই আসে পাম রপ্তানি থেকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটিও বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন রপ্তানি বন্ধ থাকলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশটির অর্থনীতিতে। আর বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তো রয়েছেই!
ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে সৃষ্ট ‘বাণিজ্যিক বাধার’ বিষয়ে গত সপ্তাহে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। গত এপ্রিলে খবর বেরিয়েছিল, ইন্দোনেশিয়ায় নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতের প্রায় তিন লাখ টন ভোজ্য পাম অয়েল আটকে গেছে।
মালয়েশিয়ার পর ইন্দোনেশিয়া থেকেই সবচেয়ে বেশি পাম অয়েল আমদানি করে ভারত। তবে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে পাম অয়েলের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা ইন্দোনেশিয়া। দেশ দুটি চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি পাম অয়েল ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে।
গত সপ্তাহে পাকিস্তান বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিভিএমএ) আশঙ্কাপ্রকাশ করেছে, দেশটিতে চলতি মাসেই পাম অয়েলের মজুত ফুরিয়ে যেতে পারে। এ কারণে পাকিস্তানের শিল্প ও উৎপাদন মন্ত্রণালয়কে দ্রুততম সময়ে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অবশ্য পাম অয়েল আমদানিকারক দেশগুলোর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি। তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে সেটি শুরু হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (আরএসআইএস) সহযোগী ফেলো জেমস গিল্ড বলেন, আমার সন্দেহ নেই যে, আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আসবে। বিশেষ করে, ইন্দোনেশিয়া যেহেতু এ বছরের শেষের দিকে জি২০ সম্মেলন আয়োজন করতে চলেছে। একটি নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য অংশীদার বা জি২০র সভাপতির দায়িত্বে থাকা একটি দেশের কাছ থেকে এটি সঠিক আচরণ নয়।
তিনি বলেন, তবে কারোরই বেশি কিছু করার নেই। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম পাম অয়েল উৎপাদক। তাই সব তাস তাদের হাতে এবং ইন্দোনেশীয় সরকারও তার দেশীয় লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে কূটনৈতিক চাপ গ্রহণ করতে রাজি বলে মনে হচ্ছে।
অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমানোর লক্ষ্যে দাবি করে গত ২২ এপ্রিল ঘোষিত এ নিষেধাজ্ঞাকে বৈধতা দিয়েছেন ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। দেশীয় বাজারে পাম অয়েলের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, এই নিষেধাজ্ঞা স্বল্পমেয়াদী।
জাকার্তার সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এগা কুর্নিয়া ইয়াজিদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য মূলত স্থানীয় পাম অয়েল কোম্পানিগুলোকে বার্তা দেওয়া যে, বড় অংকের রপ্তানি মুনাফা ত্যাগ করে হলেও দেশীয় বাজারকে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ইন্দোনেশীয় এ বিশেষজ্ঞ বলেন, এটি ইন্দোনেশিয়ার ভোক্তাদের আশ্বস্ত করারও বিষয় যে, সরকার ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে কিছু অন্তত করছে। সরকার যখন মনে করবে, এসব বার্তা পৌঁছানো হয়ে গেছে, তখনই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। সুতরাং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি পুরোপুরি স্থানীয় রাজনীতি ও অর্থনীতির বিষয়। রাষ্ট্রের কৌশলগত হিসাবে অভ্যন্তরীণ এসব লক্ষ্য অর্জন স্বল্পমেয়াদে বৈশ্বিক পরিস্থিতি জটিল করা ও বাণিজ্য অংশীদারদের বিরক্ত করার চেয়ে মূল্যবান।
তবে এতে ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি আয়ে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ান পাম অয়েল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ২০২০ সালে দেশটি ৩ কোটি ৪০ লাখ টন পাম অয়েল রপ্তানি করে ১ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আয় করেছে।
গ্রিনপিস ইন্দোনেশিয়ার প্রচারক এরি রোম্পাস বলেন, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পুরোপুরি অনুমান করা কঠিন। কারণ এতে কতটা কাজ হবে এবং তা কতদিন স্থায়ী হবে তা অস্পষ্ট। এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় অপরিশোধিত পাম অয়েল মজুতের সক্ষমতা পূর্ণ হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তাই সম্ভবত খুব শিগগির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।