চুনারুঘাটে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছালেন উপজেলা প্রশাসন ও কৃষকলীগ

17
smart

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
করোনা ভাইরাসের কারণে ধান কাটার শ্রমিক ও অর্থ সংকটের পাশাপাশি প্রবল ঝড়-বৃষ্টির আতঙ্কে আছেন চুনারুঘাটের কৃষকরা। জমির পাকা ধান ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারবেন কি না সে শঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। তবে কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলো কৃষকের পাকা ফসল ঘরে তুলতে তাদের সঙ্গে সাধ্যমতো লড়ছেন কৃষকলীগের নেতাকর্মীরা। দুশ্চিন্তায় থাকা কৃষকদের দিকে যৌথ উদ্যোগে উপজেলা কৃষকলীগ এর পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের লোকজনও বাড়িয়ে দিয়েছেন হাত।
শ্রমিক সংকটে থাকা এক কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন চুনারুঘাটের ইউএনও, কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকলীগের সভাপতি-সেক্রেটারী। এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন উপজেলা কৃষকলীগের নেতাকর্মীরাও।
শনিবার (২৫ এপ্রিল) হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেওরগাছ গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার জমির ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়া হয়।
এ সময় চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সত্যজিৎ রায় দাশ সেখানে উপস্থিতি ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন সরকার, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জামাল আহমেদসহ কৃষকলীগ নেতা-কর্মীরা।
ওইদিন সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অসহায় কৃষক আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার প্রায় এক বিঘা জমির ধান কেটে তারা বাড়ি পৌঁছান।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন- চুনারুঘাট উপজেলা কৃষকলীগ, উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে বোরো মৌসুমে ধান কাটার উদ্বোধনী ও কৃষককে উৎসাহীত করার জন্য কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক জেলা ও কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের নির্দেশে আমরা উপজেলা কৃষকলীগের নেতৃত্বে ধান খেটে দিব এবং অসহায় কৃষকের বাড়ীতে পৌঁছে দিব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দির্দেশ “বাঁচলে কৃষক বাঁচবে দেশ” প্রধানমন্ত্রীর এ স্লোগানকে বুকে ধারণ করে আমাদের এ ধান কাটার উদ্বোধনী। মূলত কৃষক ভাইদের উৎসাহিত করার জন্য আমরা কৃষকলীগ ও উপজেলা প্রশাসন কৃষকের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সেই ধারাবাহিকতায় চুনারুঘাটের দক্ষিণে এক কৃষকের ধান কেটেছি। তিনি আরো বলেন, ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে আমাদের চুনারুঘাটে এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষকেরা ধানের ফসল করেছেন। ধানের ন্যায্য মূল্য পেলে কৃষকেরা ভবিষ্যতে এক ইন্সি জমিও খালি রাখবে না এটা আমার বিশ্বাস। এই মহামারিতে আমাদের খাদ্যের সয়ং-সম্পূর্ণতা করেও আমরা বিভিন্ন দেশকে সহযোগীতা করতে পারবো। এভাবে এ উপজেলার অন্যান্য সমস্যাগ্রস্থ চাষিদের ধান পর্যায়ক্রমে কেটে ঘরে পৌঁছে দেবে কৃষকলীগের নেতাকর্মীরা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা কৃষকের পাশে থাকবেন।
উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জামাল আহমেদ বলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কেন্দ্রী কৃষকলীগ ও জেলা কৃষকলীগের নির্দেশে কৃষকের ধান ঘরে-ঘরে পৌঁছে দিতেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন করোনা ভাইরাসের কারনে শ্রমিক সল্পতায় যেন কৃষকের এক টুকরো জমির ধানও নষ্ট না হয়। সে জন্য আমরা কৃষকলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে কৃষকের পাশে দাড়িয়ে ধান কেটে দিচ্ছি।
উপকারভোগী কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, শ্রমিক সংকটের কারণে তিনি ধান কাটতে পারছিলেন না। ফলে পাকা ধান জমিতেই নষ্ট হবার আশঙ্কা ছিল। উপজেলা প্রশাসনসহ কৃষকলীগের নেতা-কর্মীরা এগিয়ে এসে তার এক বিঘা জমির ধান কেটে ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। এজন্য তিনি তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন সরকার বলেন- বোরো মৌসুমে ধান কাটা শুরু হয়েছে এবং চুনারুঘাটে ধানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে উপজেলার সমস্যাগ্রস্থ কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের জমির ধান কৃষকলীগ নেতা-কর্মীরা কেটে যে ঘরে তুলে দিলো এটা খুবই ভাল কাজ। ভবিষ্যতেও যে কোনো দুর্যোগে কৃষকলীগ এলাকার কৃষকের সঙ্গে থাকবে এই আশা ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ উপজেলার কৃষকদের জমিনে ফলানো সম্পূর্ণ ধান কৃষকের ঘরে উঠানোসহ আগামী ৬ মাসের খাবারও ঘরে উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব।
চুনারুঘাটের ইউএনও সত্যজিৎ রায় দাশ বলেন- প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দ্রুত কৃষকের ফসল ঘরে তুলতে হবে। আমরা যে যেখানেই অছি ও যারা এখনও ঘরে আছেন তাদেরকে অনুরুধ করে ইউএনও বলেছেন, আসুন কৃষকের পাশে দাড়িয়ে তাদের ফসল ঘরে পৌঁছে দেই এবং আমরা যাতে খাদ্যে সয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারি সে জন্য সকলকে এক সাথে কাজ করতে হবে। তিনি আরোও বলেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের জমির পাকা ধান কেটে দেওয়া হয়েছে। করোনার এই দুর্যোগের সময়ে খাদ্য মজুদ রাখতে হবে। কোনো খাদ্য নষ্ট করা যাবে না। খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের পাশে থেকে উৎসাহ দিতে আজ ধান কাটায় আমরা সবাই এসেছি। সবাই মিলে আজ কৃষকের জমির ধান কেটে দেওয়াতে খুব ভাল লেগেছে।
উল্লেখ্য, গত ৩দিন ধরে চুনারুঘাটের বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে উপজেলা কৃষকলীগের নেতাকর্মীরা অসহায় কৃষকদের জমির ধান কাটা অব্যাহত রেখেছেন।