কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ২ বছর ভিন্ন রকম এক পরিবেশে ঈদ উদযাপন করা হয়। এবার উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপনের অপেক্ষায় দেশবাসী। আজ রবিবার চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল সোমবার উদযাপিত হবে ঈদুল ফিতর। তা না হলে মঙ্গলবার উদযাপিত হবে ঈদ। ইতোমধ্যেই সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ঈদ উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে।
প্রচলিত নিয়ম অনুসারে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর মুসলমানরা ঈদ আনন্দে মেতে ওঠে। অন্য ধর্মের মানুষও তাদের সঙ্গে আনন্দে শামিল হয়। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে বিগত ২ বছর সেভাবে ঈদ উৎসব উদ্যাপিত হয়নি। তবে এবার দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদ্যাপনের জন্য সবাই প্রস্তুত। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে শহরের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে চলে গেছে।
ত্যাগের মহিমায় এক মাস রোজা রাখার পর ঈদ উপলক্ষে পরিবার-পরিজনসহ নিজ নিজ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে মুসলমানরা। করোনার কারণে আগের ২ বছর ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় ঈদের জামাত না হলেও এবার জাতীয় ঈদগাহ মাঠ ও কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠসহ সারাদেশের সকল ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ঈদের জামাত। জামাতে ঈদের নামাজ আদায় শেষে সবাই সবার সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
এবার ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয় রোজা। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আবার এলো ঈদ। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ উৎসব মুসলিম জাতির প্রতি সত্যিই মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে এক বিরাট নিয়ামত ও পুরস্কার। মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক সদস্যের আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা, মমতা ঈদের এ পবিত্র ও অনাবিল আনন্দ উৎসবে একাকার হয়ে যায়।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
এবার ঈদ সামনে রেখে রোজা শুরুর পর থেকেই মার্কেট ও বিপণী বিতানসহ সারাদেশে সর্বত্র সর্বস্তরের মানুষ প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করেছে। আগের ২ বছর ঈদে কেনাকাটা করতে না পারায় এবার অনেক বেশি কেনাকাটা করেছে মানুষ। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে গতি ফিরে এসেছে। এ ছাড়া এবার রোজা শুরুর পর থেকেই অনেক বেশি ইফতার পার্টি অনুষ্ঠিত হয়। তাই রোজা শুরুর পর থেকেই সারাদেশে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। এবার ঈদেও সার্বিক পরিস্থিতি থাকবে উৎসবমুখর।
পবিত্র রমজান শেষে খুশির বার্তা নিয়ে আসছে ঈদুল ফিতর। করোনা বিস্তারের কারণে ২ বছর যে যার অবস্থানে থেকে ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে। তবে এবার ঈদে পরিবেশ অনুকূলে থাকায় প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে অধিকাংশ মানুষ শহর ছেড়ে চলে গেছে চিরচেনা আপন ঠিকানায়। তাই গ্রামগুলো এখন উৎসবমুখর হয়েছে। ঈদের নামাজ শেষে দলেদলে বাইরে ঘুরতে যাওয়া আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার সেই পুরনো দৃশ্য আবার দেখা যাবে।
এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় মসজিদ ও ঈদগাহগুলোতে ঈদের নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে কোন স্বাস্থ্যবিধি মানতে হচ্ছে না। তাই জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানসহ সকল ঈদগাহে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ বড় বড় অনেক মসজিদে এবার একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
চিরাচরিত রীতি অনুসারে রোজা শুরুর পরই ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ নতুন সাজে সেজে ওঠে। মাসব্যাপী কেনাকাটা শেষে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি থাকে মানুষের ঘরে ঘরে। এ উপলক্ষে রাজধানীকে সাজানো হয় বিশেষভাবে। সড়ক দ্বীপগুলো আলোকসজ্জায় ভরে ওঠে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে থাকে আলাদা প্রস্তুতি। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তৈরি করা হয় একাধিক তোরণ। ঈদগাহ মাঠও বিশেষভাবে সেজে ওঠে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জামাত অনুষ্ঠানের জন্য একমাস ধরেই প্যান্ডেল সাজানো হয়। নামাজের জন্য ওযুখানাসহ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। ঈদের নামাজ শেষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণে আজ রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার তথ্য পর্যালোচনা করবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। দেশের কোথাও আজ চাঁদ দেখা গেলে সোমবার ঈদ উদযাপনের ঘোষণা দেয়া হবে। তা না হলে মঙ্গলবার ঈদ হওয়ার কথা জানানো হবে। বাংলাদেশের আকাশে রবিবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে তা জানানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে।
২ বছর পর এবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যেই সুপ্রীমকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের চারদিকে বাঁশ দিয়ে প্যান্ডেল তৈরির করার কাজ শেষ হয়েছে। বাঁশের কাঠামোর ওপর সামিয়ানা টাঙানোর কাজও শেষ হয়েছে। মাইক ও বৈদ্যুতিক তার লাগানোর কাজও শেষ পর্যায়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবার ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় এবার ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান ইমামতি করবেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ মোঃ ইসহাক মুকাব্বিরের দায়িত্ব পালন করবেন। এখানে ঈদের দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। এতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের হাফেজ ইমাম মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী ইমামতি করবেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ সাবেক মুয়াজ্জিন হাফেজ মোঃ আতাউর রহমান মুকাব্বিরের দায়িত্ব পালন করবেন। ঈদের তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী ইমামের দায়িত্ব পালন করবেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মোঃ নাছির উল্লাহ মুকাব্বির থাকবেন। এখানে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে ঈদের চতুর্থ জামাত। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক ইমামের দায়িত্ব পালন করবেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মোঃ শহিদ উল্লাহ মুকাব্বির থাকবেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদে বেলা ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল ফিতরের পঞ্চম ও শেষ জামাত। পঞ্চম জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহিউদ্দিন কাসেম। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মোঃ রুহুল আমিন মুকাব্বির হিসেবে থাকবেন। এই পাঁচটি জামাতের সময় কোন কারণে কোন ইমাম উপস্থিত না থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোঃ আব্দুল্লাহ।