বৈরী আবহাওয়াতেও কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে হাইব্রিড ধান

19
তাহিরপুরের শনির হাওরে হাইব্রিড জাত, জনক রাজধান।

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
বৈরী আবহাওয়াতেও কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের ধান। নতুন জাতের ধানে নেই কোন রোগ বালা, বিঘা প্রতি ফলনও বেশী। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফোটছে। তাই তাহিরপুরে হাওরাঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে দিন দিন নতুন জাতের ধানের চাষাবাদ বাড়ছে।
তাহিরপুরে অধিকাংশ কৃষক অন্যান্য জাতের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধানের চাষাবাদ করেন। ধানের এ দুটি জাত মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদের পর ফলন ভালো হলেও দিন দিন ফলন কমে আসে। গত কয়েক বছর ধরে এ দুটি জাতের ধান হয় ব্লাস্ট আক্রান্ত হচ্ছে না হয় চিটা আক্রান্ত হচ্ছে। এতে ফলন বিপর্যয় হচ্ছে বছরে বছর। তাই দিন দিন এ দুটি জাতের ধান চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক।
মধ্য তাহিরপুর গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া। সোমবার সকালে তার সাথে কথা হয় শনির হাওরের (খিল) এলাকায়। তিনি জানান, ব্রি- ২৮ ও ২৯ জাতের ধানে এখন আগের মত ফলন হয় না। ধান নানা রোগাক্রান্ত হয়ে যায়। তাই কৃষক গত দু’বছর ধরে নতুন নতুন জাতের ধান চাষাাবাদের দিকে ঝুকছেন। সে সময় কথা হয় অপর এক কৃষক উজান তাহিরপুর গ্রামের ওদুদ মিয়ার সাথে। তিনি জানান এবার ৬ কেয়ার জমিতে তেজগোল্ড এবং ৩ কেয়ার জমিতে ফাতেমা ধান রোপণ করছেন। ফলন ভালো হয়েছে, ধানে কোন চিটা নেই, রোগ নেই। তিনি আশা করছেন কেয়ার প্রতি (৩০ শতাংশ) ২০মন ধান পাবেন।
সূত্র জানায়, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ করে হাওরের পর হাওর রোপণকৃত বোর ধান পাতা হলুদ হয়ে যায়। অনেক কৃষক উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেন। কৃষি অফিস জানায় সালফার জনিত কারণে ধানে এ অবস্থা হয়েছে। পরবর্তীতে কৃষক হলুদ বর্ণ ধারণ করা জমিতে কিটনাশক স্প্রে করেন। এতে ব্রি-২৯ ধানে কিছুটা রক্ষা পেলেও ২৮ ধানে ফলন সব কটি হাওরে হাওরে নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে মার্চ মাসে এ দু’জাতের ধানে আবার দেখা দেয় ব্লাস্ট। এতে মারাত্মক হুমকিতে পরে এ দুজাতের বোরো ফসল।
সম্প্রতি কিছুদিন হলো ধান কাটা শুরু হয়েছে। যারা উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান করেছন তাদের ধানে ফলন ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধানে কোন প্রকার রোগ নেই। ব্লাস্ট আক্রান্তও হয় নি। সব কিছু মিলে বৈরী আহাওয়াতে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে হাইব্রিড ধান।
উপজেলা কৃষি আফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলা ২৩টি ছোট বড় হাওরে ৭ শ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান চাষাবাদ করেছেন। জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে হিরা, রুপালী, জনক রাজ, তেজগোল্ড, ফাতেমা, সুবর্না-৩, সুবর্না-৪, ব্রি-৫, ১২০৩, ব্রি ৮১, ব্রি ৮৯, ব্রি ৯২ উল্লেখযোগ্য। স্থানীয় হাওর পারের কৃষকরা জানান, নতুন নতুন জাতের চাহিদা দিন দিন আরো বাড়বে হাওরে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দৌলা বলেন, বৈরী আবহাওয়াতেও উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ২৮ কিংবা ২৯ ধান যে ভাবে রোগাক্রান্ত হয় সে ভাবে নতুন জাতের ধান গুলো রোগাক্রান্ত হচ্ছে না।