সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসলডুবির শঙ্কা বাড়ছে। বাঁধের কানায় কানায় এখন পানি। যেসব হাওরে বাঁধ এখনও টিকে আছে সে বাঁধগুলোও ঝুঁকির মুখে রয়েছে। অনেক বাঁধেই উপচে পানি পড়ার উপক্রম হয়েছে আবার অনেক বাঁধে ধস ও ফাটল দেখ দেয়ায় সেখানে বালি ও মাটির বস্তা ভরে বাঁধে দিযে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কৃষকরা। এদিকে শঙ্কা ও ভয়ের মধ্যেই হাওরে হাওরে হাজার হাজার কৃষক ও তাদের পরিবারে সকল সদস্যরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ধান কেটে খলায় শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
অন্যদিকে পিআইসির নামে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রকল্প নিয়ে সরকারি টাকা লুটপাট করেছে এমন অভিযোগের পাহাড় হাওরাঞ্চলের সর্বত্রই ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের চিলাইন তাহিরপুর গ্রামের পাশে নাদিয়ার, পালই ও ছিড়ারগাও হাওরের ২ হাজার ৫০০ একর জমি পানি তলিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। এছাড়াও নাদিয়ার হাওরের এই বাঁধটি ভেঙে গেলে মাটিয়ার হাওর এদিনের মধ্যেই পানিতে তলিয়ে যাবে। এখানে পানি উন্নয়নের কোনো বাঁধ নেই। তাই সেখানে বালি ও মাটির বস্তা ভরে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করছে কৃষক বলে জানান, চিলাইন তাহিরপুর গ্রামের কৃষক হাদিউজ্জামান।
এদিকে, মাটিয়ান, শনি, মহালিয়া হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একদিকে হাওরে পানি প্রবেশ করছে, অন্যদিকে শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছেন না। টিকে থাকা বাঁধগুলোরও কানায় কানায় নদীর পানি। বাঁধ ভেঙে বোরো ধান তলিয়ে আশঙ্কায় শ্রমিকদের দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিয়ে ধান কাটছেন অনেকেই। আবার অর্থের অভাবে অনেকেই এক মণ ধানের দামেও মিলাতে পারায় নিজেরাই ধান কাটছেন।
শনির হাওরের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ১০ কিয়ার বোরো জমি চাষ করেছি। দু-কিয়ার বোরো জমি কেটেছি। হাওরে এখন ধান পাকতে সাপ্তাহ সময় লাগবে। অনেকেই বাঁধ ভেঙে এক ফসলি বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়া ভয়ে আধা পাকা ধান কাটছেন।
মাটিয়ান হাওরের কৃষক শরিফ মিয়া জানান, হাওরের অনেকেই ধান কেটেছেন তবে বেশিরভাগ জমি এখনও কাটা হয়নি, কারণ ধান এখনও পুরোপুরি পাকেনি।
মহালিয়া হাওরের সোলাইমানপুর গ্রামের কৃষক তানবির আহমেদ জানান, অনেক পরিশ্রম করে ধার দেনা করে টাকা আইন্না জমি করছি, যদি হাওরের বাঁধ ভাইঙ্গা যায় তাহলে আগামী এক বছর কীভাবে চলমু। এখন বাঁধ ভাঙার ভয়ে আধা পাকা ধান কাঠছে হাওর পারের কৃষকরা।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান, আমার ইউনিয়নের পানিতে ডুবে বোরো ধানের ক্ষতির পরিমাণ বেশি। বাঁধ রক্ষায় এখনও দিনরাত পড়ে আছি। আগাম বন্যার আশঙ্কায় পুরোপুরি বোরো ধান পাকার আগেই কৃষকদের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে প্রশাসন ও কৃষি অফিস। হাওরে হাজার হাজার কৃষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কাচা ও আধা পাকা ধান কাটছে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দোলা জানান, আমাদের হাওরে শ্রমিক সংকট নেই। শ্রমিক সংকট মেটাতে হাওরে ৪৮টি ধান কাটার মেশিন হাওরে কৃষকদের ধান কাটছে। তিনি আরও জানান, এবার ছোট বড় ২৩টি হাওরে বোরো জমি চাষ করেছেন কৃষকরা ১৭,৪৯৫ হাজার হেক্টর। এখনও পর্যন্ত হাওরে ৫ হাজার ১৫ হেক্টর ধান কাটা হয়েছে। আর কাটার উপযোগী আছে হাওরে ১২৮০ হেক্টরের বেশি। আশা করছি কৃষকরা তাদের কষ্টের সোনালী বোরো ধান কেটে গোলায় তুলতে পারবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির জানান, এখনও হাওরের প্রতিটি বাঁধ রক্ষায় সতর্কতার সঙ্গে কঠোর নজরধারী রাখছি। প্রতিটি বাঁধে লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছি। যে বাঁধের সমস্যা হচ্ছে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।