কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ॥ সরকার হটানোর চক্রান্ত চলছে

11
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট এ প্রান্তে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কৃষকের কণ্ঠ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করাই সরকার হটানোর উদ্দেশ্যে কিনা সে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের মদদপুষ্ট কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশের মানুষকে আবারও অন্ধকার ও দুর্দশার যুগে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, কী কারণে তারা সরকারকে উচ্ছেদ করতে চায়? আসলে তারা জনগণকে এই সরকার যে সব সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে- তা থেকে বঞ্চিত করতে চায়। এটাই কি তাদের আসল উদ্দেশ্য? বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে, এটা ভালো লাগেনি বলেই কি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে চাওয়া হচ্ছে? আওয়ামী লীগ সরকার কি দোষ করেছে যে তারা সরকারকে উচ্ছেদ করতে চায়? তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যটা আসলে কী? অপরাধটা কী আওয়ামী লীগের?
বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব প্রশ্ন তোলেন।
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ড. মির্জা আব্দুল জলিল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হাওলাদার, হারুণ অর রশীদ, মোতাহার হোসেন মোল্লা, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কৃষক লীগের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
মানুষের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজান মাসে করোনার সময় অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এক কোটি পরিবারকে স্বল্প মূল্যে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিচ্ছি। তাছাড়া ৫০ লাখ পরিবার যাতে ১০ টাকা মূল্যে চাল কিনতে পারে, সে জন্য কার্ড দেয়া আছে। এছাড়াও ভিজিডি, ভিজিএফ এর মাধ্যমে আমরা খাদ্যসামগ্রী দিয়ে থাকি, বিনা পয়সাও খাদ্যসামগ্রী দিয়ে থাকি। আর কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায়, সে ব্যবস্থাটাও আমরা চালু রেখেছি।
দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি একটি বিষয়ে একটু বলতে চাই। আমি প্রায় শুনি বক্তৃতায় আমাদের উদ্দেশে কিছু নেতা আছেন, দুঃসময়ে মানুষের পাশে তারা কতটুকু দাঁড়িয়েছেন সেটা জানি না। করোনার সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে একটু সাহায্য করবে সে লক্ষ্য আমরা দেখি নাই। তবে তারা খুব আন্দোলনের জন্য ব্যস্ত, এই সরকারকে হটাতে হবে। কোন সরকার? আওয়ামী লীগ সরকার!
শেখ হাসিনা বলেন, এখানে বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, আর আমাদের মান্না সাহেব, ড. কামাল হোসেনসহ তাদের এক গ্রুপ। সেই সঙ্গে আবার তাদের সঙ্গে যুক্ত কমিউনিস্ট পার্টি এবং আমাদের বাম দল বাসদসহ কারা কারা তারা সবাই মিলে নাকি আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাবে! আমার প্রশ্ন অপরাধটা কি আওয়ামী লীগের?
তিনি বলেন, আমরা ২০০৮ এর নির্বাচনে সরকারে এসেছিলাম। সেই নির্বাচনে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণকে তারা বারবার আমাদের ভোট দিয়েছে, আমরা ক্ষমতায় এসেছি। আমাদের যে লক্ষ্য সে লক্ষ্য আমরা অর্জন করেছি। স্বল্প উন্নত দেশ থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছি। আমার প্রশ্ন এটা কি তাদের কাছে ভাল লাগেনি? সে জন্য তারা এই সরকারকে হটাতে চায়?
সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমরা অর্জন করেছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছি, জমি দিচ্ছি এবং বিনামূল্যে দিচ্ছি। মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি করেছি, মানুষের ক্ষয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা কি আওয়ামী লীগের অপরাধ? এই জন্য কি এই সরকার হটাতে হবে? তিনি বলেন, প্রত্যেকটা মানুষের ভাগ্যের যাতে পরিবর্তন হয় সে ব্যবস্থা করেছি। আজকে দারিদ্র্যসীমা হ্রাস পেয়েছে। করোনাকালেও দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। আরও বহু কাজ আমরা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি, এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যটা কী? এই মানুষগুলোকে এই সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে দেয়া? এটাই তাদের লক্ষ্য, এটাই তাদের উদ্দেশ্য, সে জন্যই শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে হবে? আমার এটাই প্রশ্ন তাদের কাছে যে, অপরাধটা কী করেছি আমরা? তারা লুটপাট করে খেয়েছে, মানুষ খুন করেছে, তাদের হাতে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন। তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করেছে, সে কথা মানুষ ভুলে যায় কীভাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আধুনিক জ্ঞান প্রযুক্তি সম্পন্ন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের রোল মডেল, তখন আমাদের দেশের কিছু মানুষ বিদেশের কাছে নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন করতে ব্যস্ত, সরকারের উৎখাত করতে ব্যস্ত। তারা এটা করতে চায় খুব ভাল কথা, কিন্তু তাদের কর্মসূচী জনগণের কাছে তুলে ধরুক যে তারা দেশের মানুষের জন্য কী করতে চায়। আমরা দেশের মানুষের জন্য কর্মসূচী হাতে নিয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে উঠবে, ২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে তার জন্য একশ’ বছরের ডেল্টাপ্ল্যান আমরা দিয়েছি।
দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করেছি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। আজকে সারাদেশে আমরা শতভাগ বিদ্যুত পৌঁছাতে পেরেছি। ভূমিহীনদের মাঝে যে কর্মসূচী জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সেই ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছি, জমি দিচ্ছি এবং তা বিনামূল্যে। প্রথমবার সরকারের এসে আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা ছিল। আমরা ব্যারাক হাউস নির্মাণ করে দিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার আসার পর থেকে আমরা এখন তাদের আলাদা সেমিপাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, এই যে একটা মানুষ একটা ঘর পাওয়ার পর তার জীবন-জীবিকার পথ সে খুঁজে পাচ্ছে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে- এটা কি আওয়ামী লীগের অপরাধ? এজন্যই কী এই সরকারকে হটাতে হবে? ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছি। বেসরকারী ব্যাংক আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি এবং তাদের ওপর শর্ত আছে যে প্রতিটি উপজেলা পর্যন্ত তাদের শাখা থাকতে হবে। তাছাড়া সরকারী ব্যাংক আছেই। আজ ১০ টাকায় কৃষক ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলে তার ভর্তুকির টাকাটা সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। সারের দাম আমরা কমিয়েছি ৪ দফা। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছি। যেটা নিয়ে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের ছিল। আমাদের এই একটা সিদ্ধান্তই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন মিথ্যা অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছিল, আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম- কারও টাকা লাগবে না, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানাব। আল্লাহর রহমতে সেটা তৈরি করে ফেলেছি।
তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড কানেকশন দিয়েছি আমরা। ডিজিটাল সেন্টার করেছি। আজকের বাংলাদেশে এই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক মানুষ নিজের ঘরে বসে বিদেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। আর্থিক সচ্ছলতা পাচ্ছে, তাদের আমরা ট্রেনিং করাচ্ছি। লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং ট্রেনিং।
পায়রায় বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে টাকার সাশ্রয় হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করে এত বড় বড় প্রকল্পের প্রয়োজন কী? শতভাগ বিদ্যুত দিতে গেলে তো আমাদের উৎপাদন করতেই হবে। আমরা সেখানে যে প্রায় ৯শ’ কোটি টাকার মতো বাঁচাতে পারলাম এই কথাটা তো কেউ বলেন না। এটা বলতে বোধহয় তাদের একটু কষ্টই হয়। যে একটা প্রজেক্টে টাকা আরও বেশি লাগবে, সেখানে টাকা আরও সাশ্রয় হয়, সময় বাঁচাবে, এটা বোধহয় আমাদের সমালোচকদের পছন্দ নয়, তারা সেটাই চাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ মানুষ, প্রত্যেকটা মানুষের ভাগ্য যাতে পরিবর্তন হয়, তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। আজকে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। করোনার সময়েও আমাদের দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। আরও বহু কাজ আমরা করে যাচ্ছি। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে এই যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি, এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে, তৃণমূলের মানুষ, গ্রামের মানুষ উপকার পাচ্ছে। তারা যে সরকার উৎখাত করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যটা কী? এই মানুষগুলোকে এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে দেয়া? এটাই কি তাদের লক্ষ্য? এটাই তাদের কী উদ্দেশ্যে? সেই জন্যই তাদের শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে হবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষি ইস্যুতে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে- যাতে করে দেশ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ইস্যুর পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদনে অধিকতর ইতিবাচক ফলাফল পেতে পারে। এ ব্যাপারে সরকার দেশের গণমানুষের কল্যাণে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। দেশের কৃষি ও কৃষকদের কল্যাণে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার কৃষি ও কৃষকদের ব্যাপারে অনেক বেশি আন্তরিক। কৃষকরা যেন ন্যায্য মূল্যে তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পেতে পারেন, সেজন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
কৃষক লীগকে অতীতের মতো আগামীতেও কৃষকের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আপনারা কৃষকের পাশে থাকবেন, তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে কাজ করবেন। নতুন নতুন দাবি তোলা লাগবে না, কৃষকের জন্য কীসে মঙ্গল সেটা আমরা ভালভাবেই জানি এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। কৃষকই আমাদের প্রাণশক্তি। কৃষকরা আমাদের কাছে অনেক সম্মানের। আবারও ধান কাটার সময় কৃষকের পাশে দাঁড়াবেন এই আহ্বান জানাই।