দেশে নিষিদ্ধই থাকবে পাবজি

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি বন্ধের রায় প্রত্যাহার চেয়ে পাবজি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে বাংলাদেশে পাবজি গেম নিষিদ্ধই থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ বদরোজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেন। আদালতে পাবজির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সামির সাত্তার। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব।
আদেশের পর এ্যাডভোকেট হুমায়ন কবির পল্লব সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের ১৬ আগস্ট দেশের বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে থাকা পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকারক সব গেম বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপর পাবজির পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান প্রক্সিমা বেটা পিটিই লিমিটেড আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করে। যেটি বুধবার খারিজ করে দেন। ফলে পাবজি গেমসহ ক্ষতিকারক সব অনলাইন গেমস বন্ধের নির্দেশ বহাল থাকল।
১৯ জুন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকটক, বিগো লাইভ, পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেম তথা লাইকির মতো সব প্রকার অনলাইন গেমস এবং এ্যাপস বন্ধে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়। শুনানিতে পাবজি কর্তৃপক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়, বাংলাদেশে পাবজি নিষিদ্ধ করায় সারাবিশ্বে কোম্পানিটির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই বছরের ২৪ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মানবাধিকার সংগঠন ‘ল এ্যান্ড লাইফ’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে গেম ও এ্যাপসগুলোর ক্ষতিকারক দিক তুলে জনস্বার্থে রিটটি করেন সুপ্রীমকোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাউছার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব এবং পুলিশের আইজিকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
একইসঙ্গে ইউনিসেফের একটি রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে পাবজি খেললে শিশুদের ক্ষতি হয় না মর্মে আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া ভারতসহ অন্যান্য দেশে পাবজি খেলতে দেয়া হচ্ছে বলেও আদালতকে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়। এসব যুক্তি বাংলাদেশে পাবজি গেম বন্ধ রাখার সুযোগ নেই বলে পাবজি গেম বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আবেদন জানানো হয়।
এপ্রেক্ষিতে রিট আবেদনকারী পক্ষ থেকে শুনানিতে বলা হয়, অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত প্রেক্ষাপট সমান নয়। এ জন্য এখানে তুলনা করার সুযোগ নেই। এছাড়া পাবজি গেম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি বিদেশী কোম্পানি (সিঙ্গাপুর)। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কোন অফিস, রেজিস্ট্রেশন এমনকি অনুমোদনও নেই। অননুমোদিত এই প্রতিষ্ঠানটি কোটি কোটি টাকা আয় করে নিয়ে যাচ্ছে, যা আইনের ব্যত্যয় এবং এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞ মতামত ও পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন তুলে ধরে পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেমগুলো খেলার কারণে দেশের কোমলমতি শিশুরা ভীষণভাবে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এর আগে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধের রিটের পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করে ফ্রি ফায়ার গেমস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের ‘গ্যারিনা অনলাইন প্রাইভেট লিমিটেড’। আবেদনে বলা হয়, ফ্রি ফায়ার গেমের অসংখ্য প্লেয়ার বাংলাদেশে রয়েছে। আদালতের আদেশে ফ্রি ফায়ার গেমসের লিংক ব্লক করে দেয়ার কারণে গ্যারিনা অনলাইন ব্যবসায়িকভাবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এই রিট মামলায় গ্যারিনা অনলাইন প্রাইভেট লিমিটেড পক্ষভুক্ত হতে চায়। পরে ২৬ অক্টোবর হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ এ আবেদন খারিজ করে দেন। এবার পাবজি কর্তৃপক্ষের করা প্রায় একই ধরনের আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।