কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র রমজানুল মোবারকের আজ ৮ম দিবস। আর ২/১ দিন পর শেষ হবে রহমতের দশক। শুরু হবে মাগফিরাতের মাঝের ১০ দিন। এ পর্যায়ে আমরা আজ এখানে মহানবী হুজুরে পূরনূরের (স:) একটি পবিত্র হাদিসের বঙ্গানুবাদ তুলে ধরবÑ যা একান্ত প্রাসঙ্গিক এবং বহুল শিক্ষাপ্রদ।বিখ্যাত সাহাবি হজরত মায়াজ ইবনে জাবাল (রা:) একদিন হজরত রাসূলে পাকের (স:) খিদমতে গিয়ে আরজ করলেন, ওহে আল্লাহর রাসূল (স:)! আমাকে উপদেশ দিন। তিনি ইরশাদ করেন, তুমি কোন খারাপ কাজ করে ফেলবে তখন এর সঙ্গে নেক কাজ করবে; তা চাই প্রকাশ্যে হোক আর অপ্রকাশ্যে হোক। তারপর মায়াজ পুনরায় বললেন: হে আল্লাহর রাসুল আরও কিছু নসিহত দান করুন। তখন নবীজী বললেন, তুমি আল্লাহ্র কাছে এমনই লজ্জায় নত হও, যেমন তোমার নেককার প্রতিবেশী হতে লজ্জাবোধ কর।
মায়াজ আবার বললেন আরও কিছু নসিহত করুন। হযরত (স:) বললেন, তুমি তোমার নামাজ আদায়ের সময় এভাবে আদায় কর যেন পৃথিবীতে তুমি তোমার শেষ নামাজ আদায় করছ। সাহাবি মায়াজ আরও আরজ করলেন, ওহে রাসুল (স:) আমাকে উপদেশ দিন। তখন হযরত (স.) ফরমালেন; তুমি অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির ও তার পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করাকে অবশ্য কর্তব্য হিসেবে পালন করবে। ওটাই তোমার জন্য পৃথিবীতে ও আসমানে আলো স্বরূপ হবে। তোমার চাইতে দুরবস্থাপূর্ণ লোকদের লক্ষ্য কর, তোমার চেয়ে সচ্ছল লোকের দিকে দেখ না। মিসকিনদের ভালবাস, তাদের সঙ্গে ওঠা বসা করবে। জেনে রেখ, তাতেই তোমার ধন সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং বেড়ে যাবে হায়াত। সত্য কথা বলবে, যদিও লোকের কাছে অপ্রিয় মনে হয়। রাগ হজম করবে, যে তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে, তার সঙ্গে তুমি উত্তম ব্যবহার করবে। সাবধান দুনিয়ার প্রতি কখনও আকৃষ্ট হবে না।
প্রিয় নবী (স:) আরও জানালেন : হে আমার প্রিয় সাহাবি মায়াজ। চেষ্টার চাইতে কোন জ্ঞানই কার্যকরী নয়, লজ্জার চাইতে কোন পরহেজগারি ফলদায়ক নয়; উত্তম চরিত্রের চাইতে কোন শারাফাত ধর্তব্য নয়, বিদ্যার চাইতে কোন নসব মূল্যবান নয়। (খোৎবায়ে দো-আজদাহ মাহী থেকে অনুদিত)।
সিয়ামের দিনে, ইবাদত ও পারস্পরিক ভালবাসা প্রদর্শনের এই বিশ্ব মৌসুমে আমরা যেন প্রিয় নবীর (স:) উপরোক্ত উপদেশগুলো উপলব্ধি ও আমল করি। বিশেষ করে হাদিসে বর্ণিত প্রতিটি উপদেশই মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার হাকিকতের সঙ্গে সাদৃশ্যমূলক। যেমনÑ মন্দ কাজ থেকে ফিরে এসে সৎকাজের প্রতি মনোনিবেশ করা, অন্তত একজন সৎ প্রতিবেশীর সঙ্গে যেরূপ লজ্জা প্রদর্শন করতে হয়, তদ্রƒপ আল্লাহর সামনেও লজ্জিত হওয়া, জিকির ও কুরআন তিলাওয়াতকে মুমিন জীবনের মহান নেশা ও কর্তব্য হিসেবে মেনে নেয়া, গরিব মিসকিনদের প্রতি ভালবাসা তাদের দুঃসময়ে কাছে থাকা, যে কোন সৎ কাজে সাধ্যমতো চেষ্টায় ব্রত হওয়া, বিদ্যাশিক্ষা, জ্ঞান আহরণ অতীব মূল্যবান সম্পদ মনে করে তার অনুশীলন ও চর্চা করা। একজন মুসলমান শিশু কিশোর নারী পুরুষের মধ্যে উপরোক্ত গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যগুলো সৃষ্টি হলে ব্যক্তিজীবন যেমন মূল্যবান হয়, তেমনি সমাজ ও পরিবার হয় উপকৃত।