স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীতে ফুটপাত ছেড়ে এখন পুলিশের সামনেই রাস্তায় পসরা সাজিয়ে জিনিসপত্র বিক্রি করছে হকাররা। কিন্তু পুলিশ বা সিটি কপোরেশন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় নিত্যদিন বসে ফল ও জুতার হাটসহ নিত্যপণ্যে দ্রব্য। উদাসীন, নির্বিকার পুলিশ তা দেখেও না-দেখার ভান করে। ফলে ওইসব এলাকায় যানজট লেগেই থাকে।
শুধু কোর্ট পয়েন্ট নয় রাস্তার উপর কীন ব্রীজ থেকে শুরু করে সুরমা পয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট, রাজা জিসি রোড, কোর্ট পয়েন্ট থেকে বন্দরবাজার এলাকা, হকার মার্কেটের রাস্তা হয়ে কালিঘাট সড়ক ও কোর্ট পয়েন্ট হয়ে জিন্দাবাজার রাস্তায় পুলিশের সরব উপস্থিতিই বসছে এসব হকাররা। এছাড়া এসব এলাকায় যত্রতত্র গাড়ীর স্ট্যান্ড গড়ে উঠা ও গাড়ী পার্কিংয়ের কারণে পথচারী লোকজন রাস্তা চলতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ ইস্যুতে নগর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে আদালতেও যেতে হয়েছে। অথচ সড়কের ওপর জেঁকে বসা হকারদের প্রতি পুলিশের এহেন উদাসীনতা ও সন্দেহজনক ‘সদয় ভূমিকা’ নিয়ে এসবপথ দিয়ে চলাচলকারী মানুষের মনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন? ফুটপাত থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর হকাররা এখন সড়কের ওপর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ তারা এখন আগের চেয়ে এক কাঠি সরেস!
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা শেখঘাটের বাসিন্দা কোর্ট পয়েন্টের এক ফল ব্যবসায়ী বলেন, টাকা বেশি দিয়েই তো বসেছি। না দিলে কি আর রাস্তায় বসতে দেয়! তার মতো অনেকেই শহরের ব্যস্ততম কোর্ট পয়েন্টে রাস্তার একাংশ দখলে নিয়ে ফল জুতার হাট ও নিত্যপণ্যে দ্রব্যের ব্যবসা করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট সিটি পয়েন্ট, রাজা জিসি রোড ও কোর্ট পয়েন্টের মধ্যভাগে ফুটপাত ছেড়ে সড়কেই বসে ব্যবসা করছেন হকাররা। শুধু সড়ক নয়, সড়কের ডিভাইডার ঘেঁষেও বসেছেন ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী সড়কের অপর প্রান্তের কালেক্টরেট মসজিদের সামনে ১০টি সিএনজি অটোরিক্সা ও হিউম্যান হলার দাঁড়ানোর কথা। অথচ সেখানে শ’খানেক যানবাহন দাঁড় করিয়ে যানজট সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে পথচারীরা রাস্তা চলাচল করতে হিমশিম খেতে হয়।
ভ্রাম্যমান এই ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের রাস্তার ওপর জেঁকে বসতে দেয়ায় পুলিশের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইনজীবী ও ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের মতে, সিসিক ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে ট্যাক্স নেবে, সরকারকে আয়কর-ভ্যাট দেবো আর দিনের পর দিন এসব চলতেই থাকবে, তাতো হয় না!
ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ লালা বলেন, মানুষ কেন খোলামেলা জায়গা ও উন্মুক্ত সড়কে চলাচল করতে পারবে না? পুলিশ কাদের কাছে ধরাশায়ী যে, তারা এতোটাই নিষ্ক্রিয়তা দেখাচ্ছে? আদালতের নির্দেশে পুলিশ ফুটপাত দখলকারীদের যে তালিকা দিয়েছে, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু মানুষ এসে বলেন তাদের নামে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। অনেকে বলেন, নেপথ্যের মূল হোতাদের নাম তালিকায় আসেনি। ফুটপাত দখলের নেপথ্যের এই কুশীলবদের বিরুদ্ধে পুলিশের জোরালো আইনানুগ ভূমিকা চান তিনি। এজন্য বার এসোসিয়েশন যে সংগ্রাম শুরু করেছে, তার শেষও দেখে ছাড়বে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স’র সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, ফুটপাত সমস্যা নিরসনে স্থায়ী সমাধান দরকার। হকাররা এখন ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছে। এই সমস্যা সমাধানে সিসিক ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বসবে সিলেট চেম্বার। তিনি বলেন, হকার সমস্যার কারণে শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, সিলেটের পর্যটন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত। সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকরা ফুটপাত ধরে এমনকি রাস্তা ধরেও হাঁটাচলা করার জায়গা পান না। পুলিশি সহযোগিতা এজন্য সিসিককে দায়ী করে তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে ট্যাক্স দিচ্ছি, সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি। কিন্তু বিনিময়ে কিছু পাচ্ছি না। এর স্থায়ী সমাধান দরকার।
সিলেটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) নিকোলিন চাকমা বলেন, ভ্রাম্যমাণ খুদে ব্যবসায়ীদের আমরা তো সব সময়ই উঠিয়ে দিই। কিন্তু এরপরও তারা এসে বসে পড়ে। ফাঁড়ি পুলিশও তাদের তাড়িয়ে দিয়েও সামাল দিতে পারছে না। রাস্তা ও ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনও জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, হকার তুলে দেওয়া সিসিকের একার পক্ষে সম্ভব নয়। পুলিশকেই শক্ত ভূমিকা নিতে হবে। অভিযান চালালেও পরে এসে ঠিকই বসে যায় হকাররা। এক্ষেত্রে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি জানান।