কাজিরবাজার ডেস্ক :
এবার বৈশাখে অস্বাভাবিক আবহাওয়া বিরাজ করছে। পরিচিত সেই কালবৈশাখীর তেমন একটা দেখা নেই। দেখা নেই বৃষ্টির। দু’একটি এলাকায় বৃষ্টি হলেও দেশের বেশির ভাগ এলাকাতেই বৃষ্টির দেখা নেই। উল্টো উজানে বৃষ্টির কারণে বাড়ছে বন্যার পানি। একের পর এক হাওড় তলিয়ে যাচ্ছে আগাম বন্যায়। ফলে স্বপ্নের ফসল ঘরে তোলাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে দেশের হাওড়াঞ্চলের কৃষকের। গ্রীষ্মের শুরুতে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। শীত-বসন্ত পেরিয়ে বৈশাখ মাসে শুরু হয় গরম মৌসুম। বৈশাখে আবহমান বাংলার চিরায়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে কালবৈশাখী। অনেক সময় চৈত্র মাসের শেষ দিকেই শুরু হয়ে যায় কালবৈশাখীর এই তা-ব। বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের নানা জায়গায় প্রতিদিনই এক বা একাধিকবার কালবৈশাখী হানা দেয়। ঝড়ের সঙ্গে হয় শিলাবৃষ্টি। বৃদ্ধি পায় বজ্রপাত। বজ্রবৃষ্টিসহ বয়ে যাওয়া এই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসল-সহায়-সম্পদ, এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
কিন্তু এবার আবহাওয়া কেমন যেন গুমোট হয়ে আছে। বৈশাখ মাসের কয়েক দিন অতিবাহিত হলেও কালবৈশাখীর দেখা নেই। দেখা নেই বৃষ্টির। দেশের দু’একটি জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে কালবৈশাখী হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল ভোরে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরের ওপর গাছ পড়ে এক নারী ও তার দুই সন্তান নিহত হয়েছেন। এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পাতলি ইউনিয়নের সুলেমানপুর গ্রামে।
আবহাওয়া অফিস, আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় তীব্র কালবৈশাখীর পূর্বাভাস দিয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার গতিতে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে। রাতের তামপাত্রা ঠিকই বাড়ছে। কিন্তু ঝড়ো হাওয়া বা বৃষ্টির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
সাধারণত বৈশাখ মাসে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিটা বেশি আশা করে কৃষক। কিন্তু এবার আশানুরূপ বৃষ্টি হচ্ছে না। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। এছাড়া শ্রীমঙ্গলে ২৩, রাজারহাটে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে বগুড়া ও ডিমলায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। তবে দেশের অন্য কোন অঞ্চলে বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টির অভাবে বোরো ফসলে সেচের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। বাকি অংশে বিরাজ করছে অস্বস্তিকর গরম। কয়েকটি স্থানে বইছে মৃদু তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অফিস বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেখা মিলছে না কাক্সিক্ষত সেই বৃষ্টির। বৃষ্টির অভাবে দেশে ডায়রিয়া পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ঠাঁই দেয়া যাচ্ছে না। ডায়রিয়া ছাড়াও দেখা দিচ্ছে নানা রোগের। এটি হচ্ছে মূলত শুল্ক আবহাওয়ার কারণে। বৃষ্টির অভাবে বায়ু দূষণ তীব্র আকার ধারণ করছে। এই বায়ু দূষণের কারণেই ছড়াচ্ছে নানা রোগ জীবাণু। রাজধানীর ধুলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে নগরীর রাস্তায় পানি ছিটানো হচ্ছে। এতে সাময়িক প্রশান্তি পাওয়া যাচ্ছে।
সোমবারও আবহাওয়া অফিস ঢাকাসহ দেশের ৬ বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ৫টি অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও যশোর অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মৃদু তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী তিনদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।’
এদিকে, সিলেট অঞ্চলের দুই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই অঞ্চলের উজানে ভারতীয় ভূখ-ে ভারি বৃষ্টির আশঙ্কায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ- এই চার জেলা আকস্মিক বন্যার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হাওর অঞ্চলের নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
অন্যদিকে, পাহাড়ী ঢলে বাড়ছে মেঘনা নদীর পানি। এতে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের উপজেলার জোয়ানশাহী হাওড়ের কৃষকদের মধ্যে বাড়ছে আতঙ্ক। যে কোন সময় পানি ঢুকে তলিয়ে যেতে পারে বোরো ধান। প্রতিবারের মতো এবারও মেঘনার বাড়তি পানির চাপ সামলাতে অস্থায়ীভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে এ বাঁধ নির্মাণে উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। ফলে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে হাওড়ে পানি ঢোকার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।