বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বাক স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে সিলেটের জনপ্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে। একই সাথে সিলেটের ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনেদ আহমদ ও গাড়ী চালক আনসার আলীও সরকারের গুম অপরাজনীতির শিকার হয়েছে। এভাবে দেশে শত শত বিরোধী নেতাকর্মীদের খুন গুম করা হয়েছে। নিশীরাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী সরকারের কাছে কোন এর প্রতিকার চেয়ে লাভ নেই। কারণ দেশে আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে জনতার সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সকল গুম রহেস্যর উদঘাটন হবে। গুম অপরাজনীতির সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।
তিনি বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবন দুর্বিষহ। টিসিবির গাড়ীর সামনে জনতার সারি দীর্ঘ হলেও সরকারী খরচে স্টেডিয়ামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নায়িকা ভাড়া এনে নাচগান করানো হয়েছে। জনগণের প্রতি সরকারের কোন দায়বদ্ধতা নেই। নিত্যপণ্য নিয়ে সরকার মানুষের সাথে উপহাস করছে। দেশের সর্বত্র আজ দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। মেগা উন্নয়নের নামে মেগা লুটপাট করে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন একটি দুর্বার গণআন্দোলন। যে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিবে তৃণমূল বিএনপি। সিলেট হচ্ছে বিএনপির জন্য উর্বর ভূমি। তাই সিলেট থেকেই সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা হবে।
তিনি সোমবার জননেতা এম ইলিয়াস আলী গুমের ১০ বছর অতিবাহিত হওয়ায় গুমকৃতদের সন্ধান কামনায় সিলেট জেলা বিএনপি আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে ভার্চুয়ালী যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। সিলেট জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর পরিচালনায় নগরীর দক্ষিণ সুরমাস্থ কুশিয়ারা কনভেশন হলে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সিলেটের কৃতি সন্তান আমার প্রিয় ভাই ইলিয়াস আলী গুমের ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। এই ১০ বছরে ইলিয়াস আলী সহ গুমকৃত নেতাকর্মীদের ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকের প্রতিশ্রুতির কথা শুনেছি। কিন্তু কেউ ফিরে আসেনি। ভারত কর্তৃক সিলেট সীমান্তে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে স্বোচ্ছার হওয়াই ছিল ইলিয়াস আলীর একমাত্র অপরাধ। তাই ভারতকে খুশী করতেই সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে। যার কারণে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েও ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এভাবেই ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনেদ আহমদ ও গাড়ী চালক আনসার আলীকেও গুম করা হয়েছে। যে সরকার গুম করায় তাদের কাছে সন্ধানের দাবী জানিয়ে লাভ নেই। তাই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় না করতে পারলে গুমকৃত কারো সন্ধান মিলবেনা। তাই বাকশালী সরকারের হাত থেকে জাতিকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করতে সকল স্তরে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী শপু, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা: শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুল ইসলাম হেলালী ও এডভোকেট হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী।
জেলা ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নুরুল হকের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সূচিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার, জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল গাফফার, জেলা বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী ও জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের বাবা ডাঃ মঈনুদ্দিন ও ছোট বোন তাহসিন শারমিন তামান্না, জুনেদ আহমদের ছোট ভাই হাসান মঈনুদ্দিন আহমদ।
মাহফিলে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, এলডিপি, লেবারপার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি পার্থ) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
ইফতার মাহফিলে সিলেটের কোটি জনতার হৃদয়ের স্পন্দন জননেতা এম ইলিয়াস আলী, ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনেদ আহমদ ও ইলিয়াস আলীর গাড়ি চালক আনসার আলী সহ গুমকৃত সকল নেতাকর্মীর সন্ধান কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়াও মাহফিলে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মাগফেরাত কামনা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুস্থতা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং দেশ-জাতির মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলতে চাই, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যে কোন ত্যাগ শিকারে সিলেট জেলা বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। আমরা তৃনমূলের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। তাই তৃণমূল বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। বিজ্ঞপ্তি