শাদমান শাবাব শাবি থেকে :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কিন’। তাদের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম দেখলে মনে হবে এ যেন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো অবস্থা। অনেকেই অনেক রকম পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু কজনই বা অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু করতে পারে? কিন্তু কিনের স্বেচ্ছাসেবীরা সেই কাজটিই করছেন। তাদের স্বেচ্ছাসেবী সব কার্যক্রম দেখে মনে হবে তারা যেন মানবসেবায় প্রকৃত সুখ খোঁজে।
‘আত্মার কাছে দায়বদ্ধতায় হাতে রাখি হাত’ এই মন্ত্রে বিশ্বাস রেখে ২০০৩ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ানোসহ মোট পাঁচটি লক্ষ্য নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে ‘কিন’। চ্যারিটি চলচ্চিত্র উৎসবের টিকিট বিক্রি, রাতের বেলা মেসে কিংবা আবাসিক হলে ঘুরে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য অর্থ সংগ্রহ বা বইমেলা করে উপার্জিত আয় দিয়ে দুর্যোগ-দুর্ভোগে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়ায় এই সংগঠনের সদস্যরা। এছাড়াও মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ, বিভিন্ন সময় অসহায় মানুষের চিকিৎসার জন্য ফান্ড সংগ্রহ এবং শীত বস্ত্র বিতরণ করে থাকে কিনের স্বেচ্ছাসেবীরা।
সংগঠনের সেক্রেটারি অব ওয়েব মো. সালমান আসাদ্দু জানান, ‘চেনা হোক প্রতি মুখ শিক্ষার আয়নায়’Ñএই স্লোগানকে সামনে রেখে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ শাবির অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিনের উদ্যোগে ‘কিন স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিনের পাঁচটি উইংসের মধ্যে কিন স্কুল হল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উইং। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে এবং বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তাদের প্রস্তুত করাই কিন স্কুলের প্রধান লক্ষ্য।
কিনের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আাদিবা মালিহা বলেন, কিন স্কুল শাবির পার্শ্ববর্তী এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে। এসব শিশুদের জীবনযাপন অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের মতো হয় না, তারা উঠে আসে বিভিন্ন অসহায় নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। কিন স্কুলে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শাবির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠদান করা হয়। কিন স্কুলে শিশু শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি কিন স্কুলের বাচ্চাদের মানসিক, শারীরিক ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশের জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘কিন স্কুলের শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষায় সমৃদ্ধ করে তুলতে এবং তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং সেলাই মেশিনের কাজও শেখানো হয়। দরিদ্রতার কারণে কোনো শিশু যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে কিন স্কুল সদা তৎপর। আগামীতেও যেন কিন স্কুল সবার মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পারে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
কিনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান নিলয় বলেন, মানুষের প্রতি মানুষের যে দায়িত্ব কিন স্বেচ্ছাসেবীরা সেই কাজগুলো করে। শুরু থেকেই আমরা সমাজের অসহায় এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করছি। আমরা স্বপ্ন দেখি কিন মানুষের জন্য কাজ করে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।